২০১৭ সালের অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালা অনুসরণ করে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল দেন।
চার সপ্তাহের মধ্যে কৃষিসচিব, খাদ্যসচিব ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফিরোজ আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাসগুপ্ত।
পরে ফিরোজ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, খোলাবাজারে ফড়িয়াদের কাছে সাড়ে চার শ থেকে পাঁচ শ টাকায় এক মণ বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে। ফড়িয়ারা এই ধান সরকারি গুদামে দিচ্ছেন ১ হাজার ৪০ টাকায়। অথচ নীতিমালা অনুসারে ওই মূল্যে ধান নেওয়ার কথা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে।
রিটের যুক্তি সম্পর্কে এই আইনজীবী বলেন, ২০১৭ সালের ওই নীতিমালার ৯ বিধি অনুসারে সরকার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধানসংগ্রহ করবে। অথচ গোডাউনগুলো মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করছে। ফলে কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করতেও পারছেন না। কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে, যেখানে উৎপাদন খরচও মেটাতে পারছেন না, যা নীতিমালার ৯ বিধির পরিপন্থী। এ ছাড়া নীতিমালার ২১ বিধি অনুসারের কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে মিল মালিকেরা তা ছাঁটাই করবেন। এ ক্ষেত্রে বিধি অনুসরণ করা হচ্ছে না।
এর আগে ‘এক টন ধান বিক্রিতে ঘুষ তিন হাজার টাকা’ শিরোনামে গত ২২ জুলাই এবং ‘গুদামে চাল দেন ফড়িয়ারা’ শিরোনামে গত ৩০ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন প্রতিবেদন যুক্ত করে নীতিমালা অনুসরণ করে কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহের নির্দেশনা চেয়ে জাতীয় কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম গত ১৮ আগস্ট রিটটি করেন।
রিটে বলা হয়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পছন্দের লোক বা স্থানীয় সরকারি দলের লোকজনই আসলে সরকারি গুদামে ধান সরবরাহের সুযোগ পায়। আর তারা কেউই প্রান্তিক কৃষক নন। ক্ষেত্র বিশেষে তারা গরিব কৃষকের ধান কম দামে কিনে বেশি দামে সরকারি গুদামে সরবরাহ করে থাকেন। ফলে ঋণ করে ধান উৎপাদন করে এখন কৃষকেরা তাদের উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না।
প্রসঙ্গত, অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালায় বলা হয়েছে, কৃষকদের নিকট থেকে সরাসরি সংগ্রহ মৌসুমে উৎপাদিত ধান ও গম এবং বৈধ ও সচল চালকল মালিকদের নিকট থেকে চুক্তির বিপরীতে সংশ্লিষ্ট মৌসুমের ধান থেকে ছাঁটাই করা চাল সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সরবরাহ করা মৌসুমে আবাদকৃত জমির পরিমাণ এবং সম্ভাব্য উৎপাদনের পরিমাণসহ ডাটাবেইজ হতে প্রযোজনীয় সংখ্যক প্রান্তিক কৃষক নির্বাচন করবে। উপজেলা কমিটি প্রত্যেকের প্রদেয় খাদ্যশস্যের পরিমাণসহ নির্বাচিত কৃষকদের তালিকা সংশ্লিষ্ট সংগ্রহ কেন্দ্রে প্রেরণ করবে। এ তালিকায় অন্তভর্ভূক্ত কৃষকদের নিকট থেকে ধান ও গম ক্রয় করা হবে। সংগ্রহ কেন্দ্রের কর্মকর্তা কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড/জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত কৃষকদের সনাক্ত করবেন। তালিকা বহির্ভূত কারো নিকট হতে ধান ও গম ক্রয় করা যাবে না।