প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করলেই অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান। শনিবার দুপুরে রাজধানীর সিডরাপ মিলনায়তনে “সাম্প্রদায়িকতা নয়, চাই মানবিক বাংলাদেশ”শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আব্দুর রহমান বলেন, ৭১ এর পরাজিত শক্তি অতীতেও অনেকবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। যখনই সুযোগ পায় তখনই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৭১ এর পরাজিত শক্তিতে দমন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা যে বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলাম সেই বাংলাদেশ গড়ার জন্য শুধু কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছি। এখন শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করেই অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়া সম্ভব।
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের চেতনাকে ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আসার পর আবার আমাদের চেতনাকে ফিরিয়ে এনেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নকে পূনঃউদ্ধার করতে গিয়ে ১৯ বার আঘাতের শিকার হয়েছেন। তারা যে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করেছিল; সেই ষড়যন্ত্র বানচাল করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের চেতনার জায়গায় অনেক অভাব রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যারা মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই; তারা এই চেতনায় জায়গায় একটু ভাবতে হবে। এছাড়া ৭১ এর পরাজিত শক্তির ধারা যারা প্রভাবিত সেই মানুষগুলোকে ভুল পথ থেকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে হবে। শুধু তাই নয়, তাদের মধ্যে আরো সচেতনা বাড়াতে হবে। তা হলেই সঠিক বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে। তিনি বলেন, পৃথিবী সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর সেই সাথে পাল্লা দিয়ে আমরাও সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আর সামনের দিকে এগিয়ে যেতে অনেক বাধা আসবে তা প্রতিরোধ করেই এগিয়ে যেতে হবে।
জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক প্রতিরোধ মোর্চা আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ। জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক প্রতিরোধ মোর্চার প্রধান সমন্বয়ক এফ এম শাহীনের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফারজানা মাহমুদ।
গোলটেবিল বৈঠকে সাবেক সেনাবাহিনীর প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. জে. (অব.) এম হারুনুর রশীদ বীরপ্রতীক বলেন, সাম্প্রদায়িকতা কোথা থেকে শুরু হয়েছে সেটা জানতে হবে। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্য্ন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেতনাকে কবর দিয়ে নতুন চেতনার সৃষ্টি করা হয়েছিল। ওই সময়কে ভুলে গেলে চলবে না। তবে সেই সময়ের কথা স্মরণ করেই আমরা অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার চেষ্টা করব। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। রাজনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির জন্যই যুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক মুক্তি পেলেও এখনো সামাজিক মুক্তি পাওয়া যায়নি। তবে এ থেকে মুক্তি পেতে হলে নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, আমাদের দেশে এখনো একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদের টুপি মাথায় দেয়া হয়। আমাদের জীবনে দেখা একাত্তরের ঘাতকেদের সব বিষয় ও সংস্কৃতি তরুণ প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরতে হবে। আমরা সব মানুষ, আমরা সবার বন্ধু। এটা সবার কাছে প্রচার করতে পারলে সাম্প্রদায়িকতা দূর করা সম্ভব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি যাদুঘরের কিউরেটর ও সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের দেশে বসবাস করার জন্য সবার সমান অধিকার আছে। তবে এদেশে যারাই বসবাস করবে তাদের সমান অধিকার দিতে হবে। তা হলেই এদেশ অসম্প্রদায়িক দেশ গড়া সম্ভব হবে।
নিউজ২৪ এর হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স্ সামিয়া রহমান বলেন, আমাদের সমাজটা কেন সাম্প্রদায়িকতার দিকে সেটা জানি না। আমাদের চারপাশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু আমাদের মানসিকতা উন্নয়ন হচ্ছে না। তবে এটা হচ্ছে না কেন সেটা আমি জানি না।
গোলটেবেলি বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ল্যা্ব এইড হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য অরুণা বিশ্বাস, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ক্রিস্টিন রিচার্ড্সন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কুমার দেবুল দে, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি ফয়জুল্লাহ আমান ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক খায়ের মাহমুদ , বিবার্তা২৪ডটনেটের সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি ও জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চার সমন্বয়ক বাপ্পাদিত্য বসু।