‘যেখানেই জনপদ, সেখানেই আইনি সেবা’- স্লোগান ধারণ করে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠা হয় চীনের বিচার বিভাগ। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের ঘরে ঘরে ন্যায়বিচার পৌঁছে দেয়ার ওয়াদায় যে পথচলা শুরু হয় তা আজ ৭০ বছর পরও সমুন্নত রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন দেশটির বিচারকরা।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের তৃণমূল পর্যায়ে সেবা পৌঁছে দিতে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে ছুটে চলেন আজও। কখনও ঘোড়া কিংবা উটে চড়ে মরুভূমি পেরিয়ে, কখনও নৌকার বৈঠা বেয়ে আবার কখনও বিরূপ আবহাওয়াকে তুচ্ছজ্ঞান করে পৌঁছে যান বিচারালয়ে।
ভূ-সীমার শেষপ্রান্তের শেষ লোকালয় পর্যন্ত সেবা পৌঁছুতে বিচারবিভাগের অধীনে গঠন করা হয় এক বিশেষ ধরনের আদালত। যাকে ‘ঘোড়ার পিঠে আদালত’ বলেও রঙ্গ করে অনেকে। এই ব্যবস্থায় প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষ নিয়ে উন্মুক্ত এজলাস বসিয়ে মামলার মীমাংসা করা হয়।
১৯৭০ ও ’৮০-র দশকে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে এ বিচার পদ্ধতি বেশ কাজে দেয়। বিচারের মান ও দক্ষতা বিবেচনায় ১৯৫০ সালের জুলাই বিচার বিষয়ক এক সম্মেলনে এ বিচার পদ্ধতি বেশ প্রশংসিত হয়।
পহেলা অক্টোবর চীনের কমিউনিস্ট শাসনের সত্তর বছরপূতি উপলক্ষে প্রভাবশালী দৈনিক পিপলস ডেইলির অনুসন্ধানে বিচারকদের দৈনন্দিন বিচারিকি চিত্র উঠে এসেছে।
ছোট্ট ক্যাবল স্লাইডে ঠাসাঠাসি করে বসে আছেন দুই বিচারক। পাহাড়ি স্রোতস্বিনী-সেতু নেই, নৌকাও চলে না। চংকিং রাজ্যের ফেংজির প্রত্যন্ত এ অঞ্চলে এই সাধারণ উড়ান পথই একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর এই পথেই নিয়মিত আদালতে যান তারা।
এক হাতে বিচার বিভাগীয় প্রতীক। অন্য হাতে ধরে রেখেছেন বাহকের গর্দান। চোখে সতর্কদৃষ্টি। আদালতে যাচ্ছেন বিচারক। শিনজিয়াং প্রদেশের তাশিকুয়ারগানে আদালতে যাওয়ার পথেই পড়ে এই এক হাঁটু নদী। যেমন স্রোত, তেমন শীতল। তখন ইয়াকের পিঠে চড়েই পার হতে হয় বিচারককে।
ঘন জঙ্গল আর বন্ধুর পথের ইউনান প্রদেশের শিয়ানগুয়ান অঞ্চল। পিঠে ঝুলছে বিচারক প্রতীক। রাস্তা নেই। গাড়ি-ঘোড়া কোনোটাই চলে না। তবু যেতে হবে, পা তো আছে! বিবাদ মেটাতে সেই হেঁটেই রওনা হয়েছেন বিচারক ও তার সহকারীরা।
বছরের পর বছর এভাবেই এলাকার বিচারকার্য পরিচালনা করছেন বিচারকরা।
তুষার আর বরফে ঢাকা ইনার মঙ্গলিয়ার তংলিয়াও অঞ্চলের বায়ার তুহুশুও এলাকা। দমকা বাতাসে সারাবেলাই ঠাণ্ডা গর্জন। কনকনে শীত। কিন্তু তাতেও থেমে নেই বিচার বিভাগের দফতর। মামলার ফয়সালা করতে ঘোড়া ছুটিয়ে আদালতে ছুটছেন বিচারক।