অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ:
টুং টুং করে শব্দ বাজতেই থাকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে, প্রধানতম উপলক্ষ – ‘সাজেশন দিন স্যার’! কারো দাবি হাজারখানেক প্রশ্ন দিন। কারো দাবি গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো বাছাই করে দেন। কিন্তু পড়ুয়া শিক্ষার্থীগণ ভালোভাবেই জানেন যে, সাজেশন ধরে পড়ে সাধারণভাবে কোনো লাভ হবার কথা নয় বার কাউন্সিল এমসিকিউ পরীক্ষায়।
তবে, এটাও বাস্তবতা যে, রেগুলার শিক্ষার্থী ব্যতীত যারা পরীক্ষা দিয়ে ওকালতি পেশায় আসতে চান, তারা ইতিমধ্যেই নানা পেশায় যুক্ত থেকেই পড়াশোনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু, জীবনসংগ্রামে বেঁচে থাকা বা টিকে থাকার সংগ্রাম করতে গিয়ে অনেকেই পড়াশোনার সময় যথেষ্ট পান না। এদিকে আবার বার কাউন্সিলের পরীক্ষাও অনিয়মিত এবং নিকটবর্তী তারিখ থাকলেও সে নিয়ে ভীষণ অনিশ্চয়তায় দিন কাটাতে হয়। রেগুলার শিক্ষার্থীগণও যে খুব সুবিধাজনক অবস্থানে থাকেন, এমনটা বলা যায় না। কেননা, লেখাপড়া শেষ করেই কোর্টে সামান্য বিনিময়মূল্যে বছরের পর বছর প্রচণ্ড খাটুনির পরে পড়ালেখা করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকের পরিবার থেকে চাপ থাকে যে, ডিগ্রি সম্পন্ন হবার পরও কেন প্রতিষ্ঠিত হতে পারলেনা! এই চাপ যাদের আসেনি, তারা এরূপ শিক্ষার্থী বা পরীক্ষার্থীর মনের অবস্থা বুঝবেন না। এক প্রচণ্ড টানাপোড়েনে এসব পরীক্ষার্থীদের মুখের দিকেও তাকানো যায় না, মনটা খারাপ হয়ে যায়। মনের ভেতরে ভীষন এক চাপা ক্ষোভ-যন্ত্রণা সয়ে সয়েই তাদেরকে হাসিমুখে পথ চলতে হয়, সেই হাসিটা যে বিবর্ণ; তাতে প্রাণ নেই, শুধু বাহ্যিক রূপটাই আছে, সেটা যেকোনো সংবেদনশীল মানুষ দেখলেই বুঝতে পারবেন।
যাইহোক, মূল কথায় আসি। বার কাউন্সিল পরীক্ষায় আমি কোনো সাজেশনের পক্ষপাতী নই ব্যক্তিগতভাবে। কিন্তু, ঐ যে বললাম, অনেকেরই নির্মম বাস্তবতা আছে। সেই বিবেচনাতেই বার কাউন্সিল এমসিকিউ পরীক্ষার সাজেশন বা খানিকটা সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তৈরি করাটি নিজের দায়িত্ব মনে করেছি। আমার লেখা বই ‘আইনের ধারাপাত’ বইটিতে সে সাজেশন দেওয়াই আছে। সেই বইটি থেকেই কিছু ভূমিকাসহ আপনাদের উপকারার্থে সেগুলো ছকে সুন্দরভাবে গোছানো আকারে দেবার চেষ্টা করবো এই লেখায়। লইয়ার্স ক্লাবকে ধন্যবাদ এই ওয়েব প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমে এই লেখাটিকে ছড়িয়ে দেবার জন্য; তাদের প্রতি সবিশেষ কৃতজ্ঞতা।
প্রথমত, বার কাউন্সিলের পরীক্ষার একটি সিলেবাস রয়েছে। সেই সিলেবাসে বর্ণিত টপিকগুলো কোনো না কোনোভাবে অন্তর্ভুক্ত কোর্সগুলোরই টপিক। পুরো সিলেবাসে দুইটি টপিক বাদে সবই মূলত মূল আইনেই বিভিন্ন ধারা বা ধারাগুচ্ছে বর্ণিত নানারকম ধারণার বিস্তৃতি। আগেও অন্য লেখায় উদাহরণ দিয়েছি, আবারো সেই উদাহরণটিই উল্লেখ করি। যেমন, বার কাউন্সিলের সিলেবাসে মিথ্যা সাক্ষ্য সংক্রান্ত টপিক আছে দণ্ডবিধি থেকে। দণ্ডবিধিতে এই সংক্রান্ত ধারাগুলোর অধ্যায় বা বিস্তৃতি হলো ১৯১-২২৯ পর্যন্ত। প্রায় ৪০ টি ধারাই আপনার এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য পারার বা বোঝার দরকার নেই আপনার। এখান থেকে বেসিক ধারণাটি রাখতে হলে মাত্র ১৯১-১৯৫ ধারা পর্যন্ত ও ২০৫ এবং ২১১ ধারা – এই কয়েকটি ধারা থেকে ধারণা রাখলেই চলে। এতে করেই মিথ্যা সাক্ষ্য সম্পর্কে আপনার সাধারণ ধারণা হয়ে যাবার কথা।
দ্বিতীয়ত, বিগত সালের বার কাউন্সিল ও জুডিসিয়ারিতে আসা প্রশ্নগুলোর পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ঘুরেফিরে আনুমানিক ৩৩২টি ধারা থেকে এযাবৎ প্রশ্ন এসেছে এবং এই ধারাগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু, বিগত সালে আসা ধারাগুলোর সাথে ঠিক তার আশেপাশেই থাকা ধারাগুলো সাধারণত একই ধারণা সম্পর্কিত ধারা এবং সেগুলো থেকেও প্রশ্ন এসে থাকে। একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন যে, বিগত প্রতিটি সালেই তারও আগের প্রতিটি সালের প্রশ্ন থেকে সংশ্লিষ্ট ধারা থেকে হয় হুবহু, নয়তো ভিন্ন কোনো তথ্য নিয়ে প্রশ্ন এসেছে এরকম প্রশ্নের শতকরা হার সাধারণভাবে ৩৫% থেকে ৫০%। এমনকি ৬৪% পর্যন্তও কমন ছিলো, সেই নজিরও আছে। অন্যদিকে, বিগত সালে আসেনি কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ধারা থেকেও প্রশ্ন আসে নিয়মিত। সেরকম, ধারার সংখ্যাও শতকরা হারে ৩৫% থেকে ৫০% পর্যন্ত হতে পারে। ফলে, বিগত সালে আসেনি কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এমন ধারাগুলোও পড়ে গেলে পাশ হওয়াটা নিশ্চিত। বিগত সালের প্রশ্ন বিশ্লেষণে আমার আরেকটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিলো আগেই এই একই ওয়েবসাইটে। লেখাটি এই লিংক থেকে দেখে নিতে পারেন। সেখানে থাকা আলোচনার দিরুক্তি করছি না। বিগত আসা প্রশ্ন এবং নতুন প্রশ্নের গুরুত্ব বুঝতে লেখাটি দেখে নিতে পারেন।
তৃতীয়ত এবং শেষ কথা এটাই যে, বিগত সালের আসা প্রশ্নগুলোর খুঁটিনাটি তথ্যসহ নতুন কিছু সংশ্লিষ্ট ধারা পড়া আবশ্যক। ফলে নিচের চার্টগুলোতে দেখুন যে, বামপাশে বিগত সালের আসা প্রশ্নসংশ্লিষ্ট ধারাগুলোর উল্লেখ আছে; অন্যদিকে, সর্ব ডানের কলামে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলোর উল্লেখ আছে। প্রাথমিক প্রস্তুতিতে সর্ববামের কলামে থাকা ধারাগুলো আগে ভালোভাবে পড়বেন। এডভান্স প্রস্তুতির জন্য পরে সর্বডানের কলামে থাকা ধারাগুলো আত্মস্থ করার চেষ্টা করবেন। বলে নেওয়া উচিত যে, এই সাজেশনের ছকটি মূলত ‘আইনের ধারাপাত’ বইটি থেকে নেওয়া। আমি বাদে বইটির যৌথ লেখক হিসেবে থাকা অ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম এবং নাবিল নিয়াজের প্রতি কৃতজ্ঞতা যে, তারা এটি লইয়ার্স ক্লাবের এই লেখায় ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করেছেন।
আমাদের প্রণীত এই সাজেশনে কিছু ধারা বাদ পড়ে যেতে পারে, তবে তা এতই অনুল্লেখ্য যে, উক্ত বিষয়গুলো না থাকার কারণে আপনার পাশ-ফেলে তা প্রভাব ফেলবে তা নয় মোটেও। এই সাজেশন অনুযায়ী আপনারা প্রস্তুতি গড়ে তুলুন। ধন্যবাদ। আপনাদের সকলের জন্য শুভকামনা রইলো।
লেখক : আইনজীবী ও ‘আইনের ধারাপাত – MCQ মডেল টেস্ট বুক’ এর রচয়িতা এবং ফাউন্ডার – juicylaw.com ও আইনকানুন একাডেমি