জাতীয় সংসদে আগের তুলনায় আইনজীবীদের প্রতিনিধিত্ব কমেছে উল্লেখ করে এর কারণ অনুসন্ধানের পরামর্শ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।
দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় কিশোরগঞ্জে জেলা আইনজীবী সমিতির সংবর্ধনা এবং আইনজীবী সমিতি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) তিনি একথা বলেন।
বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি না করার অনুরোধ জানিয়ে আইনজীবীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, শুধু অর্থকে প্রাধান্য দিলে বিচারপ্রার্থীদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
“আগের সংসদগুলিতে আইনজীবীদের প্রাধান্য থাকলেও বর্তমানে তা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ১৯৭০ সালের সংসদে আইনজীবীর সংখ্যা ছিল ৫১ শতাংশ। আমার সময়ে অষ্টম সংসদে ছিল মাত্র ৩৩ জন। এখন হয়ত আরও কম। এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে।”
সংবর্ধনা শেষে আইনজীবীদের জন্য ১০ তলা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় রাষ্ট্রপতি বলেন, “প্রতি জেলায় ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল মাত্র একটি এবং এই আদালত মামলার ভারে ভারাক্রান্ত। কিশোরগঞ্জ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল আদালতেই মামলার সংখ্যা ৪৩ হাজার। এর ফলে বিচার সম্পন্ন হতে অনেক সময় লাগছে এবং বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সারা দেশেই এই পরিস্থিতি বিরাজমান।”
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রতি উপজেলায় একজন সহকারী জজ নিয়োগ দিয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ মাদক ও কিশোর গ্যাং নিয়েও কথা বলেন।
তিনি বলেন, মাদক ও কিশোর গ্যাং বর্তমান সময়ে দেশে মহামারী আকার ধারণ করেছে। তবে মাদক নির্মূল ও কিশোর গ্যাং দমনের দায়িত্ব শুধু আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর একার নয়। এ সমস্যা সকলের, তাই সমাধানের দায়িত্বও সবাইকে নিতে হবে।
এ ব্যাপারে আইনজীবীসহ সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা মোকাবেলায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
আবদুল হামিদ আরও বলেন, দেশের প্রচলিত জলাধার আইনে যেখানে নিজের পুকুর ভরাট করা নিষিদ্ধ, সেখানে অর্থের লোভে নিজের পুকুর তো বটেই সরকারি পুকুরও জবর-দখল করে ভরাট করে ফেলছে। এর ফলে আগুন নিভানোর পানি পর্যন্ত পাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে প্রশাসন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সমাজের সবাইকে ভূমিকা পালন করতে হবে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মিয়া মো. ফেরদৌসের সভাপতিত্বে আইনজীবী সমিতি ভবন প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ নূর মোহাম্মদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান, জেলা ও দায়রা জজ মো. সায়েদুর রহমান খান এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল আলম শহীদ উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতিকে প্রথমে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পরে তিনি আইনজীবীদের জন্য ১০ তলা ‘রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ভবন’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
আনুমানিক ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মিত হচ্ছে বলে জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা জানান।
সাতদিনের সফরে বুধবার (৯ অক্টোবর) রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ আসেন। ১৫ অক্টোবর তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে তিনি কিশোরগঞ্জ ত্যাগ করবেন বলে সফরসূচিতে বলা হয়েছে।