বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী অন্তর্ভুক্তি (এনরোলমেন্ট) পরীক্ষায় ১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে না পারার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাণিজ্য, গাফিলতি ও খামখেয়ালিপনাকে দায়ী করা হয়েছে।
আজ রোববার (১৩ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে আইন, বিচার ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
তারা বলেন, বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাণিজ্য, গাফিলতি ও খামখেয়ালির কারণে আমরা প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী আমাদের স্বপ্ন পূরণের পরীক্ষা দেয়া থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক পাসের পর আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রত্যেক আইন শিক্ষার্থীই আইনজীবী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকেন। শিক্ষার্থীর স্বপ্নের সঙ্গে তার পরিবারের স্বপ্নও ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। আইনে স্নাতক করার পর আইনজীবী হিসেবে মামলা পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অনুমোদন তথা একটি সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়।
আসন্ন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী অন্তর্ভুক্তি (এনরোলমেন্ট) পরীক্ষা আগামী ২২ নভেম্বরের অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেখানে ১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাণিজ্য, গাফিলতি ও খামখেয়ালির কারণে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়া থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন।
ইতোমধ্যে আইনজীবীদের রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ ‘বাংলাদেশ বার কাউন্সিল’ তাদের এক নোটিশের মাধ্যমে জানিয়েছে যে, ইউজিসির আদেশের আলোকে ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিলের পরবর্তী সময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতি সেমিস্টারে ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু তারপরও যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির আদেশ ভঙ্গ করে ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে, সেই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বার কাউন্সিল কর্তৃক পরিচালিত আইনজীবীর তালিকাভুক্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
বার কাউন্সিলের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পৃথক পৃথক রিট করেন। রিট মামলা দায়েরের পর হাইকোর্ট রিটকারী শিক্ষার্থীদের আসন্ন আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন কার্ড ইস্যু করার জন্য বার কাউন্সিলের প্রতি অন্তবর্তীকালীন আদেশ প্রদান করেন। তবে, পরবর্তীতে উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে বার কাউন্সিল আপিল করলে চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্ট বিভাগের অন্তবর্তীকলীন আদেশ স্থগিত করে আপীল বিভাগের নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ১৪ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করেন। এমতাবস্থায় এসব শিক্ষার্থীদের বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছে, ২০১৪ সালে ইউজিসি একটি চিঠি দিয়েছিল যে, ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা যাবে না। সে চিঠির আলোচনা-নির্দেশনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ইউজিসির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় এ সম্পর্কে আমাদের জানা আ-দৌ সম্ভব ছিল না।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ভর্তি সংক্রান্ত একটি রায় প্রদান করেন। সেই রায়ের বাস্তবায়নের দিকটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর জারি হয়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ২০১৪ সালে আমরা ভর্তি হওয়ার পর সবকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যাদের আইন বিভাগ রয়েছে, তারা প্রত্যেক সেমিস্টারে তাদের ভর্তিকৃত আইন শিক্ষার্থীদের ভর্তি তালিকা নাম এবং আইডিসহ বার কাউন্সিলে পাঠায়। উদাহরণস্বরূপ-একটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৪ সালে ইউজিসির তৎকালীন আদেশ অমান্য করে ১২০ জন শিক্ষার্থীর তালিকা বার কাউন্সিলে প্রেরণ করে। কিন্তু বার কাউন্সিল ওই তালিকা ৫০ জনের অধিক হওয়া সত্বেও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে কোনো সতর্কীকরণ নোটিশ পাঠায়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা যদি সেদিন নোটিশ পাঠাত তাহলে হয়তো আমাদেরকে ভুক্তভোগী হতে হতো না।
তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, ২০১৮ সালে যখন আমরা আইন বিষয়ে স্নাতক পাস করে বার কাউন্সিলের নিয়মনীতি অনুযায়ী যথাযথ বার কাউন্সিল ফি দিয়ে ইন্টিমেশন ফরম পূরণ করে জমা দেই এবং বার কাউন্সিল উক্ত ইন্টিমেশন ফরম গ্রহণ করে। অথচ এখন আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষার অংশগ্রহণের জন্য বার কাউন্সিল রেজিস্ট্রেশর কার্ড দিচ্ছে না। তাহলে কেন আমাদেরকে ২০১৪ সালে আইন শিক্ষার্থী হিসেবে বৈধতা দেয়া হলো, ২০১৮ সালে কেন আমাদের থেকে বার কাউন্সিল ইন্টিমেশন ফরম জমা নিল, কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গাফিলতি থাকা সত্ত্বেও বার কাউন্সিল আমাদেরকে বিগত চার বছর আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করার সুযোগ দিল।