কৃত্রিম পা নিয়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে অনেক দূর হেঁটেছেন লিমন হোসেন। র্যাবের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে পা হারানো সেই কিশোর লিমন এখন আইনজীবী হওয়ার পথে। আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ। এখন ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন। আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছেন। ২২ নভেম্বর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে বাড়ি লিমনের। ৮ বছর আগে এক পড়ন্ত বিকেলে বদলে যায় লিমনের জীবন। তখন তিনি এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। পড়ার খরচ চালাতে ইটের ভাটায় কঠোর পরিশ্রমের কাজও বেছে নিতে হয়েছিল তাঁকে। ২০১১ সালের ২৩ মার্চ বাড়ির পাশে মাঠে গরু আনতে গিয়েছিলেন। মোরশেদ জমাদ্দার নামের এক সন্ত্রাসীকে ধরতে গিয়ে কিশোর লিমনের পায়ে গুলি করেন র্যাবের সদস্যরা। এরপর দুটি মামলায় লিমনকে আসামি করে র্যাব। একটি অস্ত্র আইনে, অপরটি সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে।
লিমনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হয় ঢাকায়। এরপর তাঁর জীবন বাঁচাতে গুলি লাগা বাঁ পা কেটে ফেলেন চিকিৎসকেরা। এ নিয়ে ২০১১ সালের ৬ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে প্রথম পৃষ্ঠায় খবর প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি সারাদেশে আলোচিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। তখন পা-হারা এই কিশোরের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন দেশের বিবেকবান মানুষ ও মানবাধিকারকর্মীরা। লিমনের চিকিৎসাও হয় মানুষের আর্থিক সহযোগিতায়।
র্যাবের গুলিতে লিমন শুধু শারীরিক যন্ত্রণাই ভোগ করেননি, সন্ত্রাসী অপবাদ নিয়ে লিমনকে লড়তে হয়েছে দীর্ঘ আইনি লড়াই। পরে সুস্থ হয়ে আবার লেখাপড়ায় ফেরেন লিমন। এ ক্ষেত্রেও ছিল বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা।
চিকিৎসা, মামলা, বিচার, লেখাপড়াসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই ওই দৈনিক পত্রিকাটি লিমনের পাশে ছিল, নিয়মিত খবর প্রকাশ করেছিল, যা এখনো অব্যাহত আছে। পত্রিকাটির টানা প্রতিবেদনের একপর্যায়ে র্যাবের করা দুই মামলা থেকে লিমনের নাম প্রত্যাহার করে নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের শিকার লিমন এখন মানবাধিকার আইনজীবী হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, সাধারণ মানুষ, যাঁদের পক্ষে টাকা দিয়ে আইনি প্রতিকার ও অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব না, তাঁদের আইনি সহায়তা দিতে তিনি আইন পেশায় আসতে চাইছেন।
তবে লিমনের একটা কষ্ট রয়েই গেছে; তাঁর ওপর অবিচারের বিচার পাননি আজও। এই কষ্ট ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন লিমন। এখন কেবল সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। সূত্র – প্রথম আলো