ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ড পেয়ে গাজীপুরের টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা ১২১ শিশুর মুক্তি মিলল হাইকোর্টে। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ থেকে সোমবার (১১ অক্টোবর) শিশুদের মুক্তির বিষয়ে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ যথাযথ কতৃর্পক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে কি না খোঁজ নিতে বলার পর রাত ৯টার দিকে অভিভাবকদের কাছে এসব শিশুদের বুঝিয়ে দেয় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ।
কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ এহিয়াতুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশটি আমরা সোমবার (১১ নভেম্বর) হাতে পেয়েছি। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ১২ বছরের নিচে থাকা ১১ শিশুকে মুক্তি দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকি যাদের বয়স ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে, তাদের সংশ্লিষ্ট শিশু আদালতের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে ৬ মাসের জামিন দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শিশু আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শিশু আইন অনুযায়ী, অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, অপরাধে জড়িত শিশুর বিচার শুধু শিশু আদালতেই হবে। কিন্তু তা না করে বিভিন্ন সময় শিশুদের দণ্ড দিয়েছে (মোবাইল কোর্ট) ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে ১২১ শিশু রয়েছে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে।
এ নিয়ে গত ৩১ অক্টোবর ‘আইনে মানা, তবুও ১২১ শিশুর দণ্ড’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে এলে ওই দিনই টঙ্গী ও যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা শিশুদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে কেন্দ্র দুটির তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেন আদালত। সোমবার (১১ নভেম্বর) সেই আদেশের কপি টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন তত্ত্বাবধায়কের হাতে পৌঁছা মাত্রই মুক্তি দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়।
জানা গেছে, টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে সোমবার সকাল পর্যন্ত বন্দী শিশুর সংখ্যা ছিল মোট ৯৭৯ জন। এর মধ্যে এ বছরের ৩ মে থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত শিশু রয়েছে ১২১ জন। তাদের মধ্যে ৬ মাসের সাজা শেষে গত রোববার (১০ নভেম্বর) মুক্তি পেয়েছে একজন। বাকি ১২০ জনের মধ্যে ২৮ জনের বয়স ১৭ বছর। ১৬ বছরের আছে ২৬ জন। ১৫ বছরের ২০, ১৪ বছরের ১৬, ১২ বছরের ১১ জন। সাতজনের বয়স ১৩। বাকি ১২ জনের বয়স ৮ থেকে ১১ বছর।
আইন কী বলে
২০১৩ সালের শিশু আইন বলছে, ‘বিদ্যমান অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সকল ব্যক্তি শিশু হিসেবে গণ্য হবে।’ ১৬ ধারা বলছে, ‘আইনের সঙ্গে সংঘাতে আসা শিশু কর্তৃক সংঘটিত যেকোনো অপরাধের বিচার করবার জন্য প্রত্যেক জেলা সদরে এক বা একাধিক শিশু আদালত থাকবে।’
‘কোনো অপরাধ সংঘটনে প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু একত্রে জড়িত থাকলেও শিশুর বিচার শুধু শিশু আদালতই করবে। শিশু আদালতেরও সাজসজ্জা ও ধরন ভিন্ন হতে হবে। অপরাধ অজামিনযোগ্য হোক বা না হোক, আদালত শিশুকে জামিনে মুক্তি দিতে পারবে। এমনকি আদালতে শিশুর প্রথম হাজির করবার ২১ দিনের মধ্যে প্রবেশন কর্মকর্তা একটি সামাজিক অনুসন্ধান দাখিল করবেন। প্রবেশন কর্মকর্তা বা বৈধ অভিভাবকসহ আইনজীবীর উপস্থিতি আদালতে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।’