বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলর/ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট নিয়োগ করতে সংশ্লিষ্টদের আইনি (লিগ্যাল) নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
আজ বুধবার (১৩ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) তিনি এ নোটিশ পাঠান।
নোটিশে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান, শিক্ষা সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, নীতি, নৈতিকতা ও যথাযথ শিক্ষা অর্জনসহ মানসম্মত ও অর্থবহ জীবন নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক সকল সাংবিধানিক অধিকার পাওয়ার এবং উপভোগের অধিকারী। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে গত কয়েকবছর থেকে আজ অবধি, পুরো জাতি দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের একের পর এক ঘৃণা, নিষ্ঠুর পরিণতি এবং ঘৃণ্য নৈতিক অবজ্ঞার ঘটনা ভোগ করছে।
নোটিশে আরও বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ উন্নত প্রযুক্তির নানা ধরণের জিনিষের দ্রুত সম্প্রসারণ ও অনুচিত ব্যবহারের ফলে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নীতি, নৈতিকতা, নৈতিক শিক্ষাসহ দেশপ্রেম দিনকে দিন মরে যাচ্ছে। ফলে তারা মাদক, ইভটিজিং, হত্যা, আত্মহত্যাসহ নানা রকমের ফৌজদারি অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। বেপরোয়া জীবনযাপন, বিদ্যালয় থেকে ঝরে যাওয়া, নৈতিক মানহানি, হতাশা, মানসিক অশান্তি, ব্যক্তিত্বের ব্যাধি, অধ্যয়নের উপর মনোনিবেশ করতে অনীহা, অস্থিরতা এবং অস্থির জীবনযাপন তাদের অনিশ্চিত ভাগ্যের দিকে তাদের তাড়া করছে। এজন্য শিক্ষার্থীর পিতামাতা, সমাজ এবং জাতিকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে এবং ভোগ করতে হচ্ছে।
নোটিশে বলা হয়, প্রায়শ পত্রপত্রিকায় শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত পরিণতির নানা সংবাদ পাওয়া যায়। এসব বিষয় লক্ষ লক্ষ সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীর ভাগ্য ও ভবিষ্যৎ নস্যাৎ করে দিতে পারে, যা নিয়ে নোটিশ প্রেরণকারী উদ্বিগ্ন। কেবলমাত্র ফ্যাশন এবং আধুনিকতার অজুহাতে শিক্ষার্থীরা মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে যাচ্ছে। আলিঙ্গন করছে জীবনের অন্ধকারতম অধ্যায়ের সঙ্গে।
নোটিশে আরও বলা হয়, বিভিন্ন ধরণের ব্যক্তিগত, পারিবারিকসহ অন্যান্য নানা ধরণের সমস্যা ও জটিলতা থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এমতাবস্থায় নৈতিক শিক্ষা, ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় চেতনা, দেশপ্রেম, স্বাস্থ্য, জীবনধারা ও কর্মজীবন সম্পর্কে যথাযথ দিকনির্দেশনা এবং পরামর্শ শিক্ষার্থীদের জাতির জন্য নিখুঁত মানবসম্পদ হতে মৌলিকভাবে সহায়তা করতে পারে।
এছাড়াও নোটিশে বলা হয়, শিক্ষার মূল লক্ষ্য নিখুঁত ও সভ্য ও কর্মশক্তি সম্পন্ন মানুষ তৈরি করা, যার মাধ্যমে সমাজ, জাতি এবং সমগ্র বিশ্ব টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের দিকে একাধিক দিক থেকে উপকৃত হবে। অথচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়া দেশ ও সামজের মানুষদের মধ্যে অনেকেই
নৈতিকতা বিবর্জিত।
নোটিশে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে শিক্ষার্থীদের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। সংবিধানের ১৫ (ক) অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশক্তির ক্রমবৃদ্ধিসাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতিসাধন, যাহাতে নাগরিকদের জন্য অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণ অর্জন নিশ্চিত করা যায়।’
একইসঙ্গে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৭ (খ) এ উল্লেখিত শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত করা কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি অনুচ্ছেদ ১৮ (১) ও (২) এ নাগরিকদের জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা সংরক্ষণ ও নিশ্চিত করার জন্য স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী নোটিশের বিবাদীরা ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।
এমতাবস্থায়, নোটিশে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলর/ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থ না নিলে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।