বরিশাল বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সেরেস্তা সহকারী রেখা রানী দাসের ঘুষ চাওয়া ও নেওয়ার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকালে ‘আকাশ বাংলা’ নামে একটি সাইটে ৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। এতে তাকে ঘুষ চাইতে ও নিতে দেখা গেছে। ভিডিও প্রকাশের পর সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
আজ রোববার (১৭ নভেম্বর) তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
রেখা চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অফিস সহায়ক (পিওন) পদে চাকরিতে যোগ দেন। পরে দুই দফায় পদোন্নতি পেয়ে এখন সেরেস্তা সহকারী হয়েছেন। তার বোন জয়া রানী দাস ও ভগ্নিপতি জেলা জজ আদালতের জারিকারক হিসেবে কর্মরত আছেন।
ঝালকাঠির নলছিটির বাসিন্দা মনির হোসেনের কাছে রেখার ঘুষ চাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এ বিষয়ে মনির জানান, একটি মামলার জামিন আদেশের (বেলবন্ড) নকল কপি তুলতে নিয়মানুযায়ী কোর্ট ফিসহ আবেদন করেন তিনি। গত সপ্তাহে নকল জামিন আদেশ পাওয়ার জন্য যোগাযোগ করলে রেখা এক হাজার টাকা দাবি করেন তার কাছে।
[youtube https://www.youtube.com/watch?v=qkopG6riqik]
ভিডিওতে দেখা যায়, মনির টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে রেখা তাকে বলছেন, ‘সার্চিং দেবেন টাকা দেবেন, নকল নেবেন টাকা দেবেন।’ মনির জানতে চান, ‘টাকা নেওয়ার কোনও রিসিট দেবেন?’
রেখা বলেন, ‘জজকোর্টে কোনও মানি রিসিট হয় না।’
জবাবে মনির বলেন, ‘এটা কেমন কথা বললেন, এহন টাকা ছাড়া আপনি নকল দেবেন না?’
রেখা বলেন, ‘মুহুরি লাইয়াআন (নিয়ে আসেন), উকিল মহুরিগো ধারে যাইয়া জিগাইয়া আন, টাহা লাগে কিনা। এহানে বইয়া চিল্লাইবেন না।’
রেখা আবেদনের কপিটি বের করে বলেন, ‘দ্যাহেন এই আবেদন করছে আপনার মুহুরি হ্যারে লাইয়াআন।’
মনির বলেন, ‘মুহুরি আবেদন করেন নাই। তিনি নিজেই আবেদনকারী। জামিননামা না পেলে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করবে।’
এসময় রেখার টেবিলের সামনে থাকা এক ব্যক্তি বলেন, ‘একটা ছাড় দেন ম্যাডাম।’
রেখা বলেন, ‘কিসের ছাড় দিমু, আপনি মুহুরি লইয়াআন, সার্চিং পায় মুহুরি, আসামি সার্চিং পাইবে না।’
মনির বলেন, ‘আবেদনের কোন কলামে লেখা নাই উকিল-মুহুরি ছাড়া সার্চিং পাইবে না।’
রেখা বলেন, ‘মুহুরি লাইয়াআন, কাড নম্বর (মুহুরি নম্বর) ছাড়া কাউরে সার্চিং দেই না।’
তখন মনির বলেন, ‘তয় এক হাজার টাহা দেলে পামু?’
এ পর্যায়ে সামনে থাকা ওই ব্যক্তি আবারও নকল কপি দেওয়ার জন্য রেখার প্রতি অনুরোধ করেন। এ সময় আরেক মুহুরি আসেন রেখার টেবিলের পাশে। তাকে দেখিয়ে রেখা বলেন, ‘আসামি কি সার্চিং পাইবে?’ ওই মুহুরি হ্যাঁ বলার পর রেখা বলেন, ‘মুহুরি ছাড়া দেই না। কার্ড নম্বর ছাড়া দেই না।’
তখন ওই মুহুরি মনিরের মামলার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চান। তখন রেখা তাকে বলেন, ‘তার মামলার ফাইল স্যারের কাছে (কোর্টে উপস্থাপন) ধরছিলাম। স্যারেরে কইছি, স্যার প্রথম পক্ষ আয় নাই, দুই দিন যাউক খারিজ কইর্যা দিমু। যেহেতু আপনারা কেউ কিছু দেন টেন নাই, স্যারেরে কইছি, স্যার আবেদন দিয়া থুইয়া গ্যাছে। কেউ যোগাযোগ করে নাই। তিন দিন হইলে খারিজ কইর্যা দিমু।’
তখন মনির মুহুরির উদ্দেশে বলেন, ‘দ্যাহেন ভাই, এই আবেদনটার আমি কি নকল কপি পামু না?’ এ সময় মুহুরি রেখাকে ১০০ টাকার তিনটি নোট দেন। রেখা তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে বলেন, ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তার ২০০, কর্তার ১০০, হ্যারপর পিওন-টিওন রইছে না।’ এরপর মুহুরি ১০০ টাকার আরও একটি নোট দিয়ে যান রেখাকে।
তখন মনির বলেন, ‘আপনি (রেখা) ওনার কাছ থেকে কিসের টাকা নেন?’ রেখা কোনও জবাব দেননি। মুহুরিকে একই কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘আমি একটা নকলের জন্য ৪০০ টাকা দিয়া গেলাম।’
রেখা তখন আবেদনটা মনিরকে দেখিয়ে বলেন, ‘দ্যাহেন, হে আবেদন করছে না। আপনি উকিল-মুহুরি লাইয়াআন, আপনের লগে কোনও কথা নাই।’
মনির বলেন, ‘এখন উকিল-মুহুরি পাডাইলেও কি টাকা লাগবে?’ রেখা জবাবে বলেন, ‘হ (হ্যাঁ), আগে উকিল-মুহুরিরগো লগে কথা কমু, হ্যারা যা দেয় হেইয়াই নিমু।’
এ বিষয়ে রেখা বলেন, ‘নকলের জমা খরচ আছে। কত পাতা, কত ফলি, কয় টাকার কোর্ট ফি, সবকিছুর সিল আছে। ফটোকপি করতে টাকা লাগে। ওই টাকা চাওয়া হয়েছে।’ তবে আরেক মুহুরির কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
ওই ট্রাইব্যুনালের পেশকার মুরাদ হোসেন বলেন, ভিডিও’র কথা তিনি শুনেছেন, তবে দেখেননি।
বরিশাল জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি ভিডিওটা দেখেছি। এটা শোভনীয় নয়। সব সেরেস্তাই এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। কারোরটা প্রকাশ্যে আসছে, কারোরটা আসে না। পয়সা ছাড়া কোনও সেরেস্তায় কাজ করে না।’ সূত্র- বাংলা ট্রিবিউন