বিচ্ছেদ হলে প্রিয় মানুষও শত্রু হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। বিবাহবিচ্ছেদের পর তিন বছর বয়সী শিশুসন্তানকে দেখতে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া এক বাবার আবেদন নিষ্পত্তিকালে এমন মন্তব্য করেন আদালত।
হাইকোর্ট বলেছেন, সম্পর্ক যেহেতু নেই সেখানে এভাবে ছেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা একটু সমস্যা। বিচ্ছেদ হলে প্রিয় মানুষও শত্রু হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে দুইপক্ষকে সহনশীল হতে হবে। বাচ্চাটির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে হবে।
উল্লেখ্য, প্রায় পাঁচ বছর আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শরীফুল ইসলাম ও ইঞ্জিনিয়ার ফারিহা আনজুম স্বর্ণার কোলজুড়ে আসে এক সন্তান। তবে চলতি বছরের জুলাইয়ে তাদের বিচ্ছেদ হয়।
ডা. শরীফুলের অভিযোগ, বিচ্ছেদের পর থেকে স্ত্রী স্বর্ণা তিন বছর বয়সী ছেলে জাবিরকে দেখার কোনো সুযোগ দিচ্ছেন না। সন্তান আসতে চাইলেও তাকে বাবার কাছে আসার সুযোগ দিচ্ছেন না। তাই ছেলেকে কাছে পেতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। ডা. শরীফুল নিজেই একটি রিট আবেদন করেন চলতি বছরের অক্টোবর মাসে।
ওই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সন্তানকে কেন বাবার কাছে পাঠানো হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ওই রুলের শুনানি শেষে তা নিষ্পত্তি করে সপ্তাহের একদিন প্রতি শনিবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সন্তানকে কাছে রাখতে পারবেন বাবা। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সন্তানকে চাইলে কাছে নিতে পারবেন বলে আদেশ দেন আদালত। এছাড়া জাবিরের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবেন বাবা। শিক্ষার খরচও জোগাবেন বাবা।
হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বুধবার (২০ নভেম্বর) এই আদেশ দেন। আদালতে শরীফুল ইসলামের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল। স্বর্ণার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রেজা মো. সাদেকীন।
জানা গেছে, বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয় গত জুলাই মাসে। এরপর সন্তানকে দেখতে না দেয়ায় বাবা শরীফুল ইসলাম হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। হাইকোর্ট এই বিয়য়ে রুল জারি করেন এবং আদালতে ১৩ নভেম্বর মাকে ছেলেসহ আসতে বলেন। পরে ওইদিন (১৩ নভেম্বর) আদালতে হাজির হলে আদালত দুইপক্ষের আইনজীবীকে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সমঝোতার উদ্যোগ নিতে বলেন। এরপর এ বিষয়ে আদেশের জন্য ২০ নভেম্বর দিন ঠিক করেন। এদিন সমঝোতার আদেশসহ রুল নিষ্পত্তি করে দেন।
এছাড়া দুইপক্ষের আইনজীবী শিশুটিকে নিজ নিজ হেফাজতে রাখার পক্ষে মতামত তুলে ধরেন। শিশুটির খরপোষের বিষয়টিও শুনানিতে আসে। স্বর্ণার আইনজীবী এই বলে মতামত দেন যে, শিশু জাবির মায়ের কাছেই থাকবে। বাবা শরীফুল মায়ের বাসায় এসে ছেলেকে দেখে যাবেন। এতে আপত্তি জানান শরীফুলের আইনজীবী।
একপর্যায়ে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে দুইপক্ষের আইনজীবীকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলেন আদালত। এরপর প্রতি শনিবার সকালে শিশুটিকে বাবা শরীফুলের কাছে নেয়া হবে এবং রাতে মা স্বর্ণার কাছে ফিরিয়ে নেয়া হবে- এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছান তারা। আদালতও তাতে সম্মতি দেন।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানান, বনশ্রী রামপুরার বাসিন্দা শরীফুল ইসলামের সঙ্গে বাড্ডার বাসিন্দা ফারিহা আনজুম স্বর্ণার বিয়ে হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর তাদের কোলজুড়ে আসে জাবির। চলতি বছরের জুলাইয়ে তাদের বিচ্ছেদ হয়।