বিব্রত হয়ে এজলাস ত্যাগের পর অন্যান্য মামলার বিচার কাজ পরিচালনার জন্য ফের এজলাসে এসেছেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ। তবে খালেদা জিয়ার মামলার শুনানি না করে অন্য মামলার শুনানি চলায় বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা হট্টগোল অব্যাহত রেখেছেন। হট্টগোল ও স্লোগানের মুখে নির্বাক বসে থাকেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে আইনজীবীদের হট্টগোলে সকাল ১০টা ৫ মিনিটে বিচারপতিরা এজলাস কক্ষ থেকে চলে যান। পরে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে এজলাসে এসে অন্য মামলার শুনানি শুরু করলে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
বিরতির পর ফের আদালত বসলে জয়নুল আবেদীন শুনানি করতে চান। কিন্তু আদালত তাতে সায় দেননি। এর মধ্যে হট্টগোলের কারণে অন্য মামলার শুনানিও ব্যাহত হচ্ছে। এ সময় বিএনপিপন্থি ২/১ জন সিনিয়র আইনজীবী আদালত কক্ষ থেকে বের হতে চাইলে জুনিয়রদের বাঁধার মুখে পড়েন।
অন্য মামলার শুনানি চললেও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা মুহুর্মুহু উচ্চস্বরে আওয়াজ তুলতে থাকেন। তারা বলতে থাকেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই, খালেদা জিয়ার জামিন চাই। খালেদা জিয়ার মামলা ছাড়া আর কোনও মামলার শুনানি চলবে না।’ মাঝে মাঝে আইনজীবীরা তাদের সামনে থাকা টেবিল চাপড়াতে থাকেন। তবে বিচারপতিরা অন্য মামলার শুনানি করতে না পারায় স্লোগানরত আইনজীবীদের দিকে নির্বাক তাকিয়ে থাকেন। অন্য মামলার শুনানিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হলেও থেমে থেমে আদালতের কার্যক্রম চলে।
এর আগে সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ আপিল শুনানির দিন আগামী ১২ ডিসেম্বর নির্ধারণের আদেশ দিতে চান। এ সময় আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা হট্টগোল শুরু করলে বিচারপতিরা এজলাস কক্ষ ত্যাগ করেন। ফলে জামিন শুনানির পরবর্তী দিন সম্পর্কে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়।
প্রসঙ্গত, জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় গত ৩১ জুলাই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করেছিলেন। এরপর গত ১৪ নভেম্বর হাইকোর্টের খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেন তার আইনজীবীরা। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ১৪০১ পৃষ্ঠার ওই আপিল আবেদন দাখিল করা হয়।
গত ৩০ এপ্রিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত এবং সম্পত্তি জব্দের ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে ওই মামলার নথি তলব করেছিলেন আদালত। এরপর ২০ জুন বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। গত বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল করা হয়।
২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণা করেন। এ মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।