হাইকোর্ট

গৃহবধূর চুল কর্তনের ঘটনায় দোষীদের বিষয়ে পদক্ষেপ জানতে চান হাইকোর্ট

মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় দুই সন্তানের জননীর মাথার চুল বটি দিয়ে কেটে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনার পর আজ রোববার (৮ নভেম্বর) মৌখিকভাবে এ তথ্য জানতে চেয়েছেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

আদালতে বিষয়টি নজরে আনেন আইনজীবী ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

পরে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার জানান, উল্লাপাড়ায় গৃহবধূকে চরিত্রহীনার অভিযোগে মাথার চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় গৃহীত পদক্ষেপের অগ্রগতি বুধবারের মধ্যে জানাতে সিরাজগঞ্জের ডিসি, এসপি ও ওসিকে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।

এর আগে একটি জাতীয় দৈনিকে শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ‘মাছকাঁটা বটি দিয়ে গৃহবধূর মাথার চুল কেটে দিলো আ’লীগ নেতা’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী ইশরাত হাসান।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ২ সন্তানের জননীর মাথার চুল বটি দিয়ে কেটে দিয়েছে এক আওয়ামী লীগ নেতা। ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর বাড়ি উধুনিয়া ইউনিয়নের গজাইল গ্রামে।

অভিযুক্ত ব্যক্তি উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুর রশিদ। ঘটনার সময় তার সঙ্গে ৪ সহযোগী ছিল বলে জানা গেছে।

গত ২৫ নভেম্বর রাতে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ নিজেই বাদী হয়ে ২ ডিসেম্বর উল্লাপাড়া মডেল থানায় ওই আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ৪ সহযোগীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০/৩০ ধারায় একটি মামলা (নম্বর-২) দায়ের করেছেন। এ মামলার অপর আসামিরা হচ্ছে- গজাইল গ্রামের মোজাহারের ছেলে মুনসুর (৩৮), বাহের প্রামাণিকের ছেলে আব্দুস সালাম (৪৫), নাসির উদ্দিন (৪০) ও শহীদুল ইসলাম (৩২)।

এ মামলা দায়ের করার পর থেকে আসামিরা ভুক্তভোগীকে হুমকি দিয়ে আসছে। একের পর এক হুমকির ভয়ে ওই গৃহবধূ পার্শ্ববর্তী তরফ বায়রা গ্রামের বাবার বাড়ি গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

আর এ ঘটনার পর থেকে গ্রেফতার এড়াতে ওই আওয়ামী লীগ নেতা ও তার সহযোগীরা আত্মগোপনে থেকে প্রভাবশালীদের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূ বলেন, গত ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় আমি আমার এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের খোঁজে বের হই। পথিমধ্যে একই গ্রামের মৃত আবেদ আলীর ছেলে সাইফুল ইসলামের বাড়ির পাশে উধুনিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গজাইল গ্রামের মৃত বেলায়েত সরকারের ছেলে মো. আব্দুর রশিদ ও তার ৪ সহযোগী আমার পথরোধ করে। এরপর সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আমাকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করেছে বলে চিৎকার শুরু করে।

‘এ সময় গ্রামের লোকজন ছুটে এলে তাদের সামনে আমাকে বিবস্ত্র করে মারপিট করে। এতেও তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি। কয়েকশ’ লোকের সামনে মাছকাঁটা বটি দিয়ে আমার মাথার চুল কেটে উল্লাস করে। এ সময় আমি তাদের কাছে নানা কাকুতি-মিনতি করলেও তারা বিন্দুমাত্র সাহায্য না করে নির্দয়ভাবে আমার মাথার চুল কেটে দেয়।’

ওই গৃহবধূ আরও বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রশিদ দীর্ঘদিন ধরে আমাকে নানাভাবে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। এতে আমি রাজি না হওয়ায় এবং আমার বাড়ির ডিস সংযোগ লাইন বারবার কেটে দেওয়া নিয়ে তার সঙ্গে পূর্ব বিরোধের জের ধর সে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সবার সামনে মাথার চুল কেটে নির্যাতন করা হয়েছে। এতে আমি সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছি। এ ঘটনার পর থেকে আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি এবং ভেঙে পড়েছি। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছি না।

‘এমনকি সমাজের কাছে মুখ দেখাতে পারছি না। লজ্জা ও ঘৃণায় বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। ফলে এক রকম নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে গৃহবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছি,’ যোগ করেন তিনি।