শফিকুল ইসলাম:
সম্প্রতি ভারতে এক পশু চিকিৎসকের ধর্ষণের পর নির্মম হত্যাকান্ড নিয়ে ফুসে ওঠে গোটা ভারত। প্রশাসনের উপর বাড়তে থাকে জনতার চাপ। অতঃপর হঠাৎ শোনা গেল চার ধর্ষক পুলিশের এনকাউন্টারে নিহত। এই ঘটনায় খুশি হল আমজনতা। সাধুবাদ জানানো হল পুলিশকে। এই এনকাউন্টারটি যে একটি সাজানো নাটক ছিল সেটি বুঝতে কোন শিশুকেও খুব বেশি বেগ পেতে হবেনা। এই বিচার বহির্ভূত হত্যাটির ফলে জনগণের মাঝে আনন্দের জোয়ার বইল। আর জনগণের আনন্দের স্রোতে ডুবে গেল বিচার, আইন কিংবা ন্যাচারাল জাস্টিসের সকল মূলনীতিসমূহ।
কিন্ত এখানে ভাবার বিষয় হল, জনতা কেন এই ঘটনায় আনন্দিত হল? বিচার হয়েছে এই মর্মে তাদের আনন্দ হওয়ারই কথা, কিন্তু ক্রসফায়ারে তাদের আনন্দ হচ্ছে কারণ জনতার বিচার প্রক্রিয়ার কিংবা আদালতের ওপর বিশ্বাস কমে যাচ্ছে। মানুন বা না মানুন এটা সত্য। যখন নুসরাত হত্যা হল তখনো কিন্তু আসামীদের ক্রসফায়ারে দিয়ে হত্যার দাবি উঠেছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ক্রসফায়ার দ্রুত জনমনে এই প্রশান্তি দিতে পারে যে বিচার(!) হয়েছে। হ্যা, এতে করে একটা বিচার হয় সত্য কিন্তু ন্যায়বিচার কি হয়? পূর্ণাঙ্গ ন্যায়বিচার তখন হয় যখন আসামীকে তার বক্তব্য প্রদানের সুযোগ দেওয়া হয়। একটি ছোট উদাহরণ দেই, হলি আর্টিজেন হামলার মামলায় আটজন আসামীর মাঝে সাতজনকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দিলেও একজনকে খালাস প্রদান করে। এই একজনকে আদালতের নির্দোষ মনে হয়েছে বলেই কিন্তু আদালত তাকে খালাস দিয়েছে। এবার এই মামলায় ক্রসফায়ার দিয়ে ভাবুন, যদি সবাইকে বিচারের আগে ক্রসফায়ার দেওয়া হত তাহলে কিন্তু আদালত যাকে নির্দোষ মনে করে খালাসদিল সেও কিন্তু এই ক্রসফায়ারের শিকার হত।
আদালতে ট্রায়াল হয় সত্যকে বের করে আনার জন্য। এজন্য সময় প্রয়োজন। তবে বর্তমান যুগ খুবই গতিশীল, তাই জনমনে আইনের প্রতি আস্থা ধরে রাখার জন্য আদালতকে গতিশীল করার কোন বিকল্প নেই। নচেৎ ক্রসফায়ারের মত একতরফা অবিচারকেই মানুষ ন্যায়বিচার ভাবতে শুরু করবে। আর আইন বইয়ের পাতায় পড়ে থাকবে। ক্রসফায়ারের অপব্যবহার হবে না এরূপ মনে করাটা হল বোকার স্বর্গে বাস করার সামিল। জনগণকেও বুঝতে হবে যে ক্রসফায়ার দিয়ে ন্যায়বিচার সম্ভব হয় না। প্রকৃত ন্যায়বিচার তখনই হয় যখন আসামী তার পক্ষে বলার সুযোগ পায় এবং সকল সাক্ষ্য প্রমাণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে রায় দেওয়া হয় যেটা কিনা বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডে কখনো সম্ভব না।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়।