সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বলেছেন, ‘একটি কথা খুব কানে লাগছে, আইনের চেয়ে লাইনের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়েছেন আইনজীবীরা। এই লাইন থেকে কীভাবে তাদের ঘুরিয়ে আনা যায়, ভাবতে হবে। ২০ বছর আমি এই বারে (সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে) ওকালতি করেছি। উত্থান-পতন দেখেছি।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ল’ ইয়ার্স কাউন্সিলের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক এই বিচারপতি বলেন, আইনজীবীদের পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিটি বারে স্টাডি সার্কেল গড়ে তুলতে হবে। বারের থিঙ্ক কী, তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। একজনের সমস্যা সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আইনজীবীদের মেধা ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলে বারের দোষ-ত্রুটিগুলো সারানোর ব্যবস্থা সম্ভব। এটা সম্ভব না হলে রাজনৈতিক দলের মতো মারামারি কাটাকাটি হবে।
বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, ‘আইনজীবীরা তাদের অবস্থানটা ঠিক বুঝতে পারেন কি না, সেটা একটা প্রশ্ন। কারণ, আইনজীবীদের যে সার্টিফিকেটটা নিতে হয়, ভালো কি খারাপ সেটা অত্যন্ত কঠিন সার্টিফিকেট। শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে পটেনশিয়াল পার্থক্য অনেক হাই। টিচার সব জানেন, ছাত্র কিছুই জানে না। ডাক্তার ও রোগীর মধ্যেও অনেক পার্থক্য। কারণ রোগী কিছু জানেন না আর ডাক্তার সব জানেন। কিন্তু আইনজীবীদের ক্ষেত্রে সেটা খাটে না। আপনি কোর্টে যাবেন আপনার বিরোধী দল বসে থাকবেন আপনার ভুল ধরার জন্য। দুপক্ষের ভুল ধরতে উপরে একজন বসে আছেন। তার ভুল ধরার জন্য দুজন খুব উদগ্রীব। এতগুলো সমপর্যায়ের লোকের মধ্য থেকে আপনাকে বেরিয়ে আসতে হয়, কারণ আপনি উকিল।’
তিনি বলেন, ‘কথায় আছে আইন না পড়লে শিক্ষাটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আইন সবারই পড়া-জানা দরকার। তবে একটু বেশি ট্র্যাডিশনাল ল’ ইতিহাস পড়তে পড়তে বেশিরভাগ আইনের ছাত্র ঘাবড়ে যায়। ক্লিনিক্যাল এডুকেশনের দিকটা আজ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে আসেনি। অর্থাৎ পাঁচ বছর আইনে লেখাপড়া করেও আইনটা ঠিক কীভাবে প্রয়োগ করবেন সে শিক্ষাটা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে দেয়া হয়নি। যাকে আমরা ক্লিনিক্যাল সাইড অব ল’ বলছি। অধ্যয়ন শেষে বেরিয়ে যাওয়ার পর প্রডাক্টিভ প্রডাক্ট বলে যদি নিজেকে আইনের ছাত্ররা মনে করতে না পারে, তাহলে যা হওয়ার তাই হবে। আমাদের সময় আমরা নিবেদিত সিনিয়র পেয়েছি, এখন সেটা কমে গেছে।’
আব্দুর রউফ বলেন, আইনজীবীদের কর্তব্য হলো আইনটা কোথায় আছে, সেটা আগে জানা। আইনটা খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া জানতে হবে। কোথায় গেলে গুরুত্বপূর্ণ ডিসিশনটা পাবেন, সেটা খুঁজতে হবে। এই প্রক্রিয়ার পড়াশোনা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজগুলোয় নেই। আইনজীবী হিসেবে শিক্ষার্থীদের কোর্টে পাঠানোর মতো শিক্ষাটা সেখানে নেই। আগে সিনিয়ররা আমাদের উকিল বানানোর জন্য অনেক কিছুই করেছেন। কিন্তু এখন কোর্টে সহযোগিতা করার মতো সিনিয়র খুব কমই পাবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘যারা জাজ হবেন, তারা যদি পহেলা দিনে বসেই ভাবেন জাজ হয়ে গেছি, তাহলে এই জুডিসিয়াল পার্সেন্টি গ্রো করবে না। এই কোর্ট কোনো দিন ভালোভাবে চলবে না।’
ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দের পরিচালনায় এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ও বার কাউন্সিলের সহ-সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি-সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন প্রমুখ।