যেসব আইনজীবী শুধু গণমাধ্যমে নিজের প্রচারের জন্য জনস্বার্থে মামলা করেন তাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন হাইকোর্টের কয়েকজন বিচারপতি।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে ‘স্ট্যান্ডিং ইন পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন : অ্যান আউটলাইন’ শীর্ষক সেমিনারে উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে এসব আইনজীবীর কঠোর সমালোচনা করা হয়।
উন্মুক্ত আলোচনার শুরুতে সেমিনারের মডারেটর বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, কিছু আইনজীবী শুধু মিডিয়ার সামনে নিজেকে উপস্থাপনের জন্য জনস্বার্থে মামলা করছেন। তারা মামলা করার সঙ্গে সঙ্গে মিডিয়ার সামনে গিয়ে হাজির হন। এটা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন এখন পাবলিসিটি ইন্টারেস্ট লিটিগেশন হয়ে গেছে।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, এভাবে চলতে পারে না। জনস্বার্থের নামে যারা মিডিয়ায় নিজেকে উপস্থাপনে ব্যস্ত, তাদের লাগাম টেনে ধরতে হবে।
শেখ হাসান আরিফের বক্তব্য সমর্থন করে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, আমি যখন রিট বেঞ্চের দায়িত্বে ছিলাম, তখন একজন আইনজীবী ভারত থেকে ভেসে আসা একটি হাতি মারার ঘটনায় জনস্বার্থে রিট আবেদন করেছিলেন। আমি সেটা শুনিনি। আইনজীবীদের বুঝতে হবে, আসলে জনস্বার্থে মামলা কোনটা হবে।
তিনি এ ধরনের সেমিনার আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, এই সেমিনারে সারা দেশের বিচারক, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সরকারের প্রতিনিধিরা থাকলে আরো ভালো হলো। তাহলে তারা বুঝতে পারত, কেন আমরা জনস্বার্থে মামলা শুনি বা আদেশ দেই।
জনস্বার্থে মামলার নামে যারা আত্মপ্রচারে ব্যস্ত তাদের কঠোর সমালোচনা করেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম। তিনি বলেন, কিছু আইনজীবী মামলা করেই মিডিয়ার সামনে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যায়। এতে কোর্টের পরিবেশ নষ্ট হয়।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম আরো বলেন, জনস্বার্থের কোনো মামলা যখন একটি বেঞ্চ ফেরত দেন, তখন আইনজীবীরা আবেদনটি নিয়ে অন্য বেঞ্চে চলে যান। অন্য বেঞ্চের বিচারপতিদের যাচাই করা উচিত, কেন আবেদনটি সেই বেঞ্চ শুনলেন না। জনস্বার্থে মামলা শোনার বিষয়ে বিচারপতিদের মধ্যে সমন্বয় থাকা উচিত।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিচারপতি এ কে এম আব্দুল হাকিম বলেন, জনস্বার্থের মামলা যেন আমরা প্রকৃতপক্ষেই জনগণের স্বার্থেই করি, সে বিষয়টি আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্ট অনলাইন বুলেটিন (স্কব) আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ও স্কবের এডিটর বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
সেমিনারে হাইকোর্ট বিভাগের অন্যান্য বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র- রাইজিংবিডি