ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য জনপ্রিয় আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী হোসেন ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
আজ সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরের পর ঠান্ডাজনিত কারণে অসুস্থ অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। স্ত্রী-সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন এই প্রবীণ আইনজীবী।
প্রয়াত এই আইনজীবীর নামাযে জানাজা আজ বাদ এশা ঢাকা জজকোর্ট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা আইনজীবী, সৎ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নিবেদিত প্রাণ। তাঁর বাবা মরহুম এম.এ. হান্নান এবং মা মরহুম নুরজাহান বেগম।
১৯৫৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ আলীর জন্ম। ১৯৭২ সালে সরকারী গ্র্যাজুয়েট হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। ’৭৪ সনে সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। জগন্নাথ কলেজ বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি (অনার্স) রসায়ন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ’৭৮ সনে এমএসসিপাশ করেন। ’৮৪ সনে ঢাকা সিটি ল’ কলেজ থেকে এলএল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরের বছরই অর্থাৎ ’৮৫ সনের ৩ মার্চ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে সনদ নিয়ে একই বছরের ২৮ নভেম্বর ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যভুক্ত হন। এরপর ’৮৮ সনে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য হন তিনি।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী ’৯৩ সনে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১২ সনে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সুপ্রিম কোর্টের সনদপ্রাপ্ত হলেও মূলত তিনি ঢাকা জজকোর্ট কেন্দ্রীক দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলা পরিচালনা করতেন।
তিনি ১৯৭১ সনে মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহণ করেন। মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে ট্রেনিং নিয়ে ক্যাপ্টেন আলীম চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণাধীন মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান ও শ্রীনগর এলাকায় কমান্ডার তাহেরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করেন।
’৮৬ সনে বঙ্গবন্ধু পরিষদের ব্যানারে সারা দেশের আইনজীবীদের মধ্যে ঢাকা আইনজীবী সমিতির পক্ষে প্রথম ১৫ আগস্ট জাতির জনকের মৃত্যুদিনে শোক পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এই আইনজীবী। ’৮৮ সনে এরশাদের জরুরী অবস্থা ভঙ্গ করে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের আন্দোলনে মিছিল করলে ১১ জন আইনজীবীর সাথে তিনিও গ্রেফতার হন। এরপর আরো ২টি ভুয়া মামলা দিয়ে তাঁকে হয়রানি করা হয়।
মোহাম্মদ আলী হোসেন ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের একজন সক্রিয় সদস্য। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত এই মুক্তিযোদ্ধা আইনজীবী সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও পরহেজগার ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সরকারী ছুটি ছাড়া প্রতিদিন সকাল সকাল কোর্ট চেম্বারে আসেন এবং সন্ধা পর্যন্ত কোর্ট আঙ্গিনায় থাকতেন। ২০১২-১৩ সনে সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত আইনজীবীদের সেবায় সময় দিয়েছেন। ভবিষ্যতে আইনজীবীদের সেবা করার অভিপ্রায়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে সভাপতি পদে নির্বাচন করার ইচ্ছা থাকলেও হঠাৎ মৃত্যুতে তাঁর সে আশা আর পূরণ হলো না।