জরুরী ভিত্তিতে সারাদেশের কারাগারের হাসপাতালগুলোতে কয়জন চিকিৎসক প্রয়োজন, তা জানাতে কারাকর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে চিকিৎসক নিয়োগের বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
কারাবন্দিদের চিকিৎসক স্বল্পতার বিষয়ে করা পৃথক দুই রিট আবেদনের শুনানিতে কারা বিভাগে ‘সুরক্ষা সেবা বিভাগের ডাক্তার নিয়োগ বিধিমালা- ২০১৯’ নামে করা বিধিমালার খসড়া হাইকোর্টে দাখিল করার পর আদালত এ আদেশ দেন।
আগামী ২৭ জানুয়ারির মধ্যে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলেছেন আদালত। ওইদিন এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ঠিক করা হয়েছে। এছাড়া কারা-হাসপাতালে প্রেষণে ১৬ চিকিৎসক নিয়োগকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কী ব্যবস্থা নিয়েছে তাও জানাতে বলা হয়েছে।
আদালতে এদিন রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট জে আর খান রবিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
এর আগে স্বাস্থ্য অধিদফতর হাইকোর্টকে জানায়, ১৬ চিকিৎসককে প্রেষণে কারা-হাসপাতালে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ বিধিমালার কপি আদালত দেখার পর বলেন, এ বিধিমালা চূড়ান্ত করে চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
গত ২৩ জুন হাইকোর্ট এক আদেশে কারাগারের ধারণক্ষমতা, বন্দি ও বন্দিদের জন্য কতজন চিকিৎসক রয়েছেন তার তালিকা দিতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে, চিকিৎসকের শূন্যপদের সংখ্যাও জানাতে বলা হয়। কারা মহাপরিদর্শককে ছয় সপ্তাহের মধ্যে এ তালিকা দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি রুলও জারি করেন আদালত। রুলে কারাগারে বন্দিদের মানসম্মত থাকার স্থান নিশ্চিত করা এবং বন্দিদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। আইন, স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, সমাজকল্যাণ ও জনপ্রশাসন সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও কারা মহাপরিদর্শককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এ অবস্থায় কারা অধিদফতরের পক্ষ থেকে গত ৪ নভেম্বর হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। কারাকর্তৃপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলামের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
এ বিষয়ে জে আর খান রবিন সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, কারাকর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে যে, কারাগারে সরাসরি বা চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসক নিয়োগের কোনো সুযোগ নেই। শুধুমাত্র প্রেষণে বদলির মাধ্যমে কারাগারে চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার বিধান রয়েছে।
কারাগারে অতিরিক্ত বন্দি থাকা এবং চিকিৎসক সংকট নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে দাখিল করা রিট আবেদনে বলা হয়, দেশে সর্বমোট ৬৮টি কারাগার রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগার। এসব কারাগারে ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার ৬৬৪ জন। অথচ গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্দি আছেন ৮৯ হাজার ৫৬৪ জন। বন্দিদের জন্য চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র আট থেকে নয়জন। এর মধ্যে ১৪১টি পদই শূন্য। চিকিৎসকের অভাবে আমাশয়, ডায়রিয়া, চর্মরোগ, হৃদরোগসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত বন্দিরা।