বুড়িগঙ্গা দূষণ রোধে আদালতের রায় ও আদেশ বাস্তবায়ন না করা, অসত্য তথ্য দিয়ে আদালতের স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন ঘটানোর কারণে ওয়াসার (ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
বুড়িগঙ্গায় পানি দূষণের বিষয়ে এক রিটের সম্পূরক আবেদনের শুনানিতে বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল দেন।
আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলেছেন আদালত।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ওয়াসার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী উম্মে সালমা। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমাতুল করিম।
পরে মনজিল মোরসেদ বলেন, ২০১০ সালে বুড়িগঙ্গার পানি দূষণ বন্ধের জন্য একটি রিট পিটিশন করেছিলাম। ২০১১ সালে রায় দিয়ে আদালত বলেছিলেন- ছয় মাসের মধ্যে বুড়িগঙ্গার ভেতরে যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিসচার্জ লাইনগুলো (শিল্পবর্জ্য নিঃসরণ লাইন) আছে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ওয়াসার এমডির প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়েছিল। তখন শিল্পমালিক সমিতি আদালতে এসে স্থগিতাদেশ নিয়ে আপিল বিভাগ পর্যন্ত শুনানি হয়।
২০১৬ সালে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পরে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রম বৈধ হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু তিন বছরেও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা ফের আবেদন করি। গত জুলাই মাসে ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনেছিলাম। তখন আদালত তাদের সময় দিয়েছিলেন প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য। তারা প্রতিবেদন দিলো, ওয়াসার কোনো লাইন বুড়িগঙ্গায় নাই। পরে বিআইডব্লিউটিএ প্রতিবেদন দিয়ে বললো ৬৮টি লাইন আছে। এরমধ্যে ওয়াসার আছে ৫৮টি।
এরপর আদালত এক আদেশে অসত্য তথ্য দেওয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এবং আদালতের নির্দেশ পালনে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলেন। এরপর ২/৩ বার তারা প্রতিবেদন দিয়েছেন। কিন্তু কোনো প্রতিবেদনে আদালতের নির্দেশ পালনের পদক্ষেপ তারা দেখাতে পারেনি। সিদ্ধেশ্বরী, মোহাম্মদপুর ও কলাবাগানে ওয়াসার নিয়মিত কাজের ছবি দেখিয়েছেন তারা। এসব কারণে আমাদের আবেদন মঞ্জুর করে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে না এ মর্মে লিখিত বক্তব্য আদালতে জানাতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা তার ব্যক্তিগত হাজিরা চেয়েছিলাম। আদালত বলেছে দুই সপ্তাহ পরে যখন জবাব আসবে তখন বিবেচনা করবে।
ওয়াসার এমডিকে ব্যক্তিগত হাজিরার আবেদনের পর আদালত বলেছেন, কোর্টের কাজ কাউকে সাজা দেওয়া নয়। কোর্টের আদেশ প্রতিপালন হচ্ছে কিনা সেটাই বিবেচনার বিষয়।
আদালত বলেছেন, জবাব ও হলফনামা বিবেচনা করে তাকে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে কিনা সেটা তখন সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।