পিরোজপুর-১ আসনের সাব্কে এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল এবং তার স্ত্রী লায়লা পারভীনের জামিনের ঘটনায় ও প্রথমে তাদের কারাগারে পাঠনোর আদেশ দেয়া বিচারক বদলির ঘটনায় দুদকের চেয়ারম্যান এবং আইনমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
আজ বুধবার (৪ মার্চ) দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। যিনি একইসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদে রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আদালত জামিন বাতিলের আদেশের সঙ্গে সঙ্গেই আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাক্ষরিত এক আদেশে তাকে (মো.আব্দুল মান্নান) পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজের পদ থেকে প্রত্যাহার করে (স্ট্যান্ড রিলিজ) আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। পরে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাসরিনকে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব দেওয়ার পর তিনি জামিন দেন।
‘গতকালের এ ঘটনা স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপের শামিল। আইনমন্ত্রী অযাচিতভাবে সাবেক এমপির জামিন নিশ্চিত করার জন্য পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজকে বদলি করেন। …ওই জামিন কেলেঙ্কারি দেশের সাধারণ জনগণের বিচার বিভাগের উপর আস্থা নষ্ট করেছে এবং বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আইন সচিব, যুগ্ম সচিব ও জামিন দেওয়া বিচারককে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
প্রসঙ্গত, পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্দুল মান্নানকে বদলি করে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। আর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাসরিনকে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মঙ্গলবার বিকেলে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশাসন ১) শেখ গোলাম মাহাবুব স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।
পিরোজপুর জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, মঙ্গলবার সকালে পিরোজপুরের সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল তিনটি মামলায় এবং তাঁর স্ত্রী লায়লা পারভীন একটি মামলায় পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। দুপুরে শুনানি শেষে বিচারক মো. আবদুল মান্নান জামিন নামঞ্জুর করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারে পাঠানো আদেশের পর আউয়াল ও লায়লা পারভীনের আইনজীবী আদালতে তাঁদের অসুস্থতার চিকিৎসা প্রতিবেদনসহ হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা ও ডিভিশন দেওয়ার আবেদন করেন। বেলা পৌনে তিনটার দিকে বিচারক ডিভিশনসহ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এর কিছুক্ষণ পর জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নানকে বদলির চিঠি পাঠানো হয়। এরপর তিনি যুগ্ম ও জেলা জজ নাহিদ নাসরিনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। বিকেল পৌনে চারটার দিকে আউয়াল ও লায়লা পারভীনের আইনজীবীরা ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাসরিনের কাছে পুনরায় জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিকেল চারটার দিকে বিচারক আসামিদের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।
আউয়াল ও লায়লা পারভীনের আইনজীবী আহসানুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, আউয়াল ও তাঁর স্ত্রী লায়লা পারভীনকে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাসরিন দুই মাসের জামিন দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আলী আকবর বাদী হয়ে আউয়ালের বিরুদ্ধে খাসজমিতে ভবন নির্মাণ, অর্পিত সম্পত্তি ও পুকুর দখলের অভিযোগে তিনটি মামলা করেন। একটি মামলায় আউয়ালের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী পিরোজপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী লায়লা পারভীনকেও আসামি করা হয়েছে। গত ৭ জানুয়ারি আউয়াল ও লায়লা পারভীন হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের অন্তর্বর্তী জামিন নেন। মঙ্গলবার ওই জামিনের মেয়াদ শেষ হলে তাঁরা পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন।
এর আগে দুপুরে আউয়ালকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর পিরোজপুর হুলারহাট সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটে। শহরের সার্কিট হাউস এলাকায় সড়কে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করা হয়। পরে পিরোজপুর-পাড়েরহাট সড়কের কয়েকটি স্থানে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। এ ছাড়া শহরের গোপাল কৃষ্ণ টাউন ক্লাব সড়কে প্রতিবাদ মিছিল করে আউয়ালের অনুসারীরা।
দুদকের বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তিনটি মামলার মধ্যে প্রথম মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে এ কে এম এ আউয়াল ও তাঁর স্ত্রী লায়লা পারভীন প্রভাব খাটিয়ে নাজিরপুর উপজেলার বুইছাকাঠি মৌজায় দশমিক ০৩ একর খাসজমি বেনামে বন্দোবস্ত নেন। পরে ওই জমিতে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে ভাড়া দেন। এ ঘটনায় আউয়াল ও তাঁর স্ত্রী লায়লা পারভীনকে আসামি করা হয়। অপর দুই মামলায় শুধু আউয়ালকে আসামি করা হয়।
ওই দুই মামলায় বলা হয়েছে, পিরোজপুর পৌরসভার খুমুরিয়া মৌজায় রাজার পুকুর নামে পরিচিত হিন্দুদের ও অর্পিত সম্পত্তির ৪৪ শতাংশ জমি দখল করে চারপাশে দেয়াল নির্মাণ করেন আউয়াল। এ ছাড়া নেছারাবাদ উপজেলার স্বরূপকাঠি মৌজায় দশমিক ০৫ একর অর্পিত সম্পত্তি বন্দোবস্ত নিয়ে শর্ত ভঙ্গ করে আউয়াল ফাউন্ডেশনের নামে দ্বিতল ভবন করেন আউয়াল।
পিরোজপুর-১ আসনে ২০০৮ সালে আউয়াল প্রথম সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হন। বর্তমানে এ আসনের সাংসদ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।