স্বাধীনতা অর্জনের ২৮ বছর পর ২০০০ সালে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত তথা সুপ্রিম কোর্টে সর্ব প্রথম একজন নারীকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। ইতিমধ্যে তিনি অবসরে চলে গেছেন। তাঁর প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও বিচারিক ক্ষমতা দেশের বিচার বিভাগে আরো নারীকে বিচারকের পদে নিয়োগের পথ প্রশস্ত করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের সুপ্রিম কোর্টে একের পর এক নারী বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আইন পেশায়ও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী কর্মতৎপর রয়েছেন।
দেশের উচ্চ আদালতে বর্তমানে আটজন নারী বিচারপতি রয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। নিজেদের মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে সমাজের উচ্চ স্তরে প্রতিষ্ঠিত। বিচারাঙ্গনের মতো কঠিন জায়গায় নির্ভীক দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে তাঁরা বিচারাঙ্গনে আলো ছড়াচ্ছেন। তাঁরা হলেন বিচারপতি জিনাত আরা, বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ, বিচারপতি কাশেফা হোসেন, বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও কাজী জিনাত হক।
বিচারপতি জিনাত আরা ৪১ বছর ধরে বিচার বিভাগে রয়েছেন। বর্তমানে তিনি আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাকি সাতজন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি। এঁদের মধ্যে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী হাইকোর্ট বিভাগের ৯৭ জন বিচারপতির তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন।
উল্লিখিত নারী বিচারপতিদের আরো দুই সহযোদ্ধা থাকলেও তাঁরা আর বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন না। তাঁদের মধ্যে একজন দুই বছর হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি হলেন বিচারপতি সৈয়দা আফসার জাহান। ২০০৮ সালের ১২ নভেম্বর তাঁকে দুই বছরের জন্য অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর ছিল বিচারক হিসেবে তাঁর শেষ কর্মদিবস। মেয়াদ শেষে তাঁকে আর স্থায়ী করা হয়নি।
জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা এখন আট নারীসহ ১০৪ জন। তাঁদের মধ্যে বিচারপতি কাশেফা হোসেন ও কাজী জিনাত হক একক বেঞ্চে আছেন। অন্য চারজন দ্বৈত বেঞ্চে নেতৃত্বদানকারী বিচারপতি। তবে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী বেশ কয়েক মাস ধরে ছুটিতে।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আইন পেশায়ও নারীর উপস্থিতি লক্ষণীয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে সাড়ে আট হাজার আইনজীবী সদস্য রয়েছেন। এঁদের প্রায় অর্ধেকই দেশের নিম্ন আদালতগুলোতে নিয়মিত আইন পেশায় নিয়োজিত। আর সুপ্রিম কোর্টে (আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ) পাঁচ হাজারের কাছাকাছি আইনজীবী পেশায় আছেন। তাঁদের মধ্যে এক হাজারেরও বেশি নারী। এমন বাস্তবতায় নারীদের মধ্য থেকে আরো বেশিসংখ্যক বিচারপতি নিয়োগের দাবি জোরালো হচ্ছে।
বাংলাদেশ নামের স্বাধীন রাষ্ট্রে ১৯৭২ সালের শুরুর দিকে রাষ্ট্রপতি এক আদেশের মাধ্যমে (৫ নম্বর আদেশ) হাইকোর্ট বিভাগ নামে দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭২ সালের ১৮ জানুয়ারি পাঁচজন বিচারপতি নিয়ে বাংলাদেশের হাইকোর্ট বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। কয়েক দিন পর ২১ জানুয়ারি চারজন ও ২৬ জানুয়ারি আরেকজন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। মোট ১০ জন বিচারপতি নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগে কাজ চলতে থাকে।
১৯৭২ সালের ২ নভেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়। ওই বছরের ৪ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গণপরিষদে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়। সংবিধানের আলোকে আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ মিলে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে এই বিধান কার্যকর দেখানো হয়। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন দেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর তিনজন বিচারপতি নিয়ে আপিল বিভাগ বসে। দিনটি এখন সুপ্রিম কোর্ট দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। সূত্র- কালের কণ্ঠ