প্রান্তিক ও দুর্বল মানুষের পক্ষে দাঁড়াতে পারলেই তৃপ্তি পান সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্ট থেকে বদলি হওয়া আলোচিত বিচারপতি এস মুরলীধর। তার মতে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গেলে একজন বিচারপতিকে দুর্বলের পক্ষে ঝুঁকে থাকতে হয়। গত বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) দিল্লি হাইকোর্টের হলঘরে নিজের বিদায়ী সংবর্ধনায় এসব মন্তব্য করেন তিনি।
দিল্লিতে সাম্প্রতিক হিন্দুত্ববাদী তাণ্ডবের প্রেক্ষাপটে উসকানিমূলক বিবৃতি দেওয়ার জন্য বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি এস মুরলীধর। সে রাতেই কেন্দ্রীয় সরকার তাকে পঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টে বদলির নির্দেশ দেয়। বৃহস্পতিবার ছিল তার বিদায় সংবর্ধনা।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিচারপতি মুরলীধর জানান, ৮০ বছর বয়সী কাউকে পেনশন পাইয়ে দিতে পারলে, মৃত বাস কন্ডাক্টরের পরিবারকে সুরাহা দিতে পারলে বা নিয়মের ভুলে চাকরি যাওয়া সিআরপি জওয়ানকে তা ফিরিয়ে দিতে পারলেই তিনি বেশি তৃপ্তি পান। ভবিষ্যতেও তিনি প্রান্তিক, দুর্বল মানুষের পক্ষে থাকার অঙ্গীকার করেছেন।
মুরলীধর বলেন, ‘ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে কার ক্ষমতা বেশি, তা বিচার করতেই হবে। সমান ন্যায় করতে দুর্বলের দিকেই ঝুঁকে থাকতে হবে। গান্ধীর দুর্বলতমের পাশে দাঁড়ানো ও অম্বেডকরের সাংবিধানিক নৈতিকতার নীতি মেনে চলতে হবে।’
২৬ ফেব্রুয়ারি নিজের বদলি হওয়ার দিনটাকে ‘দীর্ঘতম কাজের দিন’ আখ্যা দিয়েছেন বিচারপতি মুরলীধর। তার আগের দিন রাত সাড়ে ১২টায় তিনি নিজের বাড়িতে আদালত বসান। দিল্লির সহিংসতার ফলে বহু মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে আইনজীবীরা তার কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন। সে রাতেই তাঁর প্রিয় পোষা ল্যাব্রাডরও মারা যায়।
কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামই তাকে পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টে বদলির সুপারিশ করেছিল। কলেজিয়াম সূত্রের বক্তব্য, ভবিষ্যতে বিচারপতি মুরলীধর ওই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হবেন। সেই বিবেচনা থেকেই তার বদলির সিদ্ধান্ত।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মুরলীধর নিজে বলেন, ‘‘১৭ ফেব্রুয়ারি কলেজিয়াম থেকে চিঠি দিয়ে আমাকে বদলির সুপারিশের কথা জানানো হয়। আমি আপত্তি জানাইনি।’’
মজা করে বলেন, ‘‘বদলি করলেও আমাকে দেশের সেরা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতির পদ থেকে কেউ সরাতে পারবে না।’’