ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ এর ১৪(২) ধারা সংশোধন এবং আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, তথ্য সচিব এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
আজ বুধবার (১১ মার্চ) বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, মাদক বিরোধী সংগঠন ‘প্রত্যাশা’ এবং পপুলেশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (পিডিও)- এর পক্ষে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে নোটিশটি প্রেরণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন।
নোটিশ প্রেরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জমান ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার সংক্রান্ত আইন থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা অকার্যকর। ফলে দেশে এ জাতীয় দ্রব্যের অবাধ ব্যবহার ও আইন লঙ্ঘনের মহোৎসব চলছে। এজন্য প্রতিকার চেয়ে নোটিশ প্রেরণ করেছি।
আইনজীবী মনিরুজ্জমান আরও বলেন, আইনের ১৪(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগ ব্যতিরেকে কোন আদালত এই আইনের অধীন কোন অপরাধ বিচারের জন্য গ্রহণ করিবে না।’ যা সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পাশাপাশি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্তরাও যেন মামলা করতে পারেন এজন্য আইনের ১৪(২) ধারা সংশোধন চেয়েছি।
নোটিশের বিবাদীরা যথাসময়ে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হলে প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলেও জানান তিনি।
নোটিশে বলা হয়, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। রীতিমত এ জাতীয় পণ্যের প্যাকেটের গায়েই ক্ষতির বিষয়গুলো উল্লেখ রয়েছে। যদিও ধূমপায়ীরা এসব ক্ষতি সম্পর্কিত বার্তা আমলে নেয় না। এজন্য ধূমপান ও তামাক জাতীয় পণ্যের উৎপাদন উত্তরোত্তর বেড়েই চলছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এসব পণ্যের প্রচার-প্রচারণাও। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে প্রায় প্রতি বছর বাজেটে সরকার কর বৃদ্ধি করে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত করারোপ ও ক্রমশ দাম বৃদ্ধি পেলেও ব্যবহার সেই অর্থে কমানো যায়নি। পাশাপাশি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে করা আইনও অনেক ক্ষেত্রে অকার্যকর বলা চলে।
২০০৩ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ৫৬তম সম্মেলনে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য ‘ফ্রেমঅয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)’ নামের কনভেনশনে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। ওই কনভেশনের বিধানাবলী বাংলাদেশে কার্যকর করা লক্ষ্যে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন, ব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয় ও বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করতে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ প্রণয়ন করে সরকার।
আইনানুযায়ী প্রকাশ্যে ধূমপান দণ্ডনীয় অপরাধ। আইনে পাবলিক প্লেস কিংবা গণপরিবহনে ধূমপান করলে তিনশত টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। কোন ব্যক্তি একই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ বার করলে পর্যায়ক্রমে দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে আইনের বাস্তবায়ন দৃশ্যমান নয়।
আইনে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ এবং পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত ধারা ৫ (১)(ক) তে বলা হয়েছে, ‘প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়, বাংলাদেশে প্রকাশিত কোন বই, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে বা অন্য কোন ভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করিবেন না বা করাইবেন না।’ একই আইনের ধারা ৫(১)(ঙ) তে বলা আছে, ‘বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত বা লভ্য ও প্রচারিত, বিদেশে প্রস্তুতকৃত কোন সিনেমা, নাটক বা প্রামাণ্য চিত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য টেলিভিশন, রেডিও, ইন্টারনেট, মঞ্চ অনুষ্ঠান বা অন্য কোন গণমাধ্যমে প্রচার, প্রদর্শন বা বর্ণনা করিবেন না বা করাইবেন না।’
অর্থাৎ আইনে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধের পাশাপাশি বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার ক্ষেত্রেও বিশেষ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তবে বিশেষ প্রয়োজনে ধূমপান কিংবা তামাজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিতান্তই করতে হলে সতর্কবার্তা সমূহ ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে। অথচ দেশের সিনেমা-নাটকে তামাকজাত দ্রব্যের অবাধ ব্যবহার লক্ষণীয়। অনেক ক্ষেত্রে আবার সতর্কবানীও ব্যবহার করা হচ্ছে না।
সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত সাকিব খান অভিনীত ‘শাহেনশাহ’ চলচ্চিত্রের কথাই যদি উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, তবে এই সিনেমার একাধিক দৃশ্যে সিগারেটের ব্যবহার করা হলেও কোন সতর্কবার্তা ব্যবহার করা হয়নি। বরং নানা রঙে-ঢঙে সিগারেট খাওয়ার দৃশ্য আকর্ষনীয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার সম্পর্কিত এমন ভুরিভুরি দৃশ্য অন্যান্য নাটক-সিনেমায়ও পাওয়া যাবে খুঁজলে। ফলে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য প্রণীত আইনটি গ্রন্থগত ‘কালো অক্ষর’ হয়েই আছে শুধু।