তানজিম আল ইসলাম:
দেশে করোনার রোগী শনাক্ত হবার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সিনেমাহল বন্ধ ঘোষনা সহ জনসমাগম এড়িয়ে চলার জন্য সরকারের তরফ থেকে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে করোনা একটি ভয়াবহ মহামারী হিসেবে প্রানঘাতি হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় আমাদের দেশের মতো একটি ঘণবসতিপূর্ন দেশে করোনার ছোবল আরও বেশি আতঙ্ক তৈরি করছে। এ ভাইরাস যেহেতু মারাত্মক সংক্রামকতাই এ মুহুর্তে যত পারা যায় নিজেকে আড়াল করাই উচিত এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলা উচিত। আমাদের দেশের জনসম্পৃক্ত যে কয়টি প্রতিষ্ঠান আছে এর মধ্যে আদালত অন্যতম। কিন্ত দু:খের বিষয় আদালতে এবং আদালত পাড়ায় করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না এমনকি কেউ ভাবছেইনা যেন এ নিয়ে। না বার, না বেঞ্চ, না সরকার। আইনজীবী সমিতিগুলো থেকেও কার্যকর কোন ঘোষনা আসছেনা ফলে আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী এবং বিচারকসহ সব কর্মকর্তারা ঝুঁকিতে রয়েছেন। সরকার বা আইন মন্ত্রনালয় এবং সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের উচিত এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেওয়া এবং কার্যকর দিকনির্দেশনা জারি করা। তবে এটা ঠিক যে হঠাৎকরে কোন ঘোষনা দেয়া হলে বিচার ব্যবস্থায় কিছুটা বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে কিন্তু বিশ্বময় এ ক্রান্তিকালে প্রয়োজনে উপযুক্ত ব্যবস্থা সাময়িক আকারে গ্রহন করতেই হবে। যদিও আমাদের দেশে ডিজিটাল ব্যবস্থা এখনো গড়ে উঠেনি তাই অন্তত জনসমাগম যেন কম হয় সেক্ষেত্রে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিতেই হবে। এজন্য আমি কিছু প্রস্তাব করতে চাই।
নিন্ম আদালতের ক্ষেত্রে-
১. জজ আদালতগুলোর ডিসেম্বর এর ছুটি বাতিল করে এখন ছুটি দেয়া যেতে পারে।
২. সিভিল মোকদ্দমার ক্ষেত্রে জরুরী বিষয় থাকলে কেবল শুনানী হতে পারে । অহেতুক সময় আবেদনগুলোর শুনানীর দরকার নেই।
৩. সাক্ষী নেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ গুলো কমিশন করে নেওয়া যেতে পারে।
৪. আরগুমেন্ট গুলো লিখিত জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৫. রায় বা আদেশ খাস-কামড়া থেকেই দেয়া হোক।
৬. ফৌজদারি মামলাগুলোর ক্ষেত্রে প্রি-ট্রায়াল স্টেজে হাজিরাগুলো বাতিল করা উচিত।
হাইর্কোট বিভাগের ক্ষেত্রে-
১. লাইনে দাড়িয়ে মেনশন স্লিপ জমা দেওয়া বাদ দিতে হবে।
২. জামিন এবং স্টে-গুলো অটো এক্সটেনশন করতে হবে।
৩. মোশনগুলোর ফাইল বিচারকগন তাদের খাসকামড়ায় পড়ে আদেশ দিতে পারেন যদি কোন শুনানির প্রয়োজন হয় কেবল সেক্ষেত্রে শুনানির জন্য রাখবেন।
৪. প্রয়োজনে সেপ্টেম্বর মাসের ছুটি বাতিল করে এখন ছুটি বাড়ানো যেতে পারে।
৫. আদালত কক্ষে প্রয়োজন ছাড়া সাধারন বিচারপ্রার্থী প্রবেশে বিধি-নিষেধ আরোপ করতে হবে।
আপিল বিভাগেও যেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ছাড়া কেউ ভিড় করতে না পারে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
উচ্চ বা নিন্ম আদালত যেখানেই হোকনা কেন প্রত্যেক আইনজীবী এবং বিচারকের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে। মাইক্রোফোন এবং নথি ধরার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রনালয়, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এবং আইনজীবী সমিতিগুলোকে যত দ্রæত সম্ভব নির্দেশনা বিজ্ঞপ্তি আকারে জারি করতে হবে। সারা দেশের সব বারে চিকিৎসা কেন্দ্রে কয়েকটি সিট আইসোলেশন করে রাখা দরকার। কোন আইনজীবী যদি জ¦র সর্দি কাশিতে ভোগেন এবং সেক্ষেত্রে যদি সময় চাওয়া হয় তা আদালতের মঞ্জুর করাও দরকার। আইনজীবী সমিতিগুলোকেও সোচ্চার থাকা দরকার। অহেতুক কোন বিচার প্রার্থীকে ডেকে আনাও উচিত নয় নিজেদের স্বার্থেই। হলফনামা সম্পাদনসহ অন্যান্য কাজে খুব সতর্ক থাকতে হবে। বয়স্ক কোন ব্যক্তি বা অসুস্থ কেউ হলহফনামা সম্পাদনের নিয়ম কিছুটা শিথিল করতে হবে। প্রয়োজনে ব্যক্তির উপস্থিতি বাদ দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে তার স্বাক্ষর মিলিয়ে দেখতে হবে। বিশ্বময় এ ক্রান্তিকালে আমাদের আদালত এবং আদালতপাড়াও নিরাপদে থাকুক। সর্বোপরি সব আইনজীবী, বিচারক, আদালত কর্মকর্তাগন সহ আইনজীবী সহকারি এবং বিচার প্রার্থীদের নিজ নিজ দায়িত্ববোধ থেকে সচেতন থাকতে হবে।
লেখক- আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।