করোনাভাইরাস–আতঙ্ককে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন জেলায় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাজার তদারকিতে নেমে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য বেশি দামে বিক্রির সত্যতাও পেয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় ২৯১ জন ব্যবসায়ীকে ২৫ লাখ ১৭ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এর মধ্যে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানোয় ফরিদপুরের ৫৮ ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জেলায় মোট ৫৮টি আদালত পরিচালনা করে ৫৮ জন ব্যবসায়ীকে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি মূল্যে সার্জিক্যাল ও সাধারণ মাস্ক বিক্রির অপরাধে বরিশাল নগরের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মূল্যতালিকা না থাকা এবং অধিক দামে পণ্য বিক্রি করায় দুটি প্রতিষ্ঠানকে ২৫ হাজার টাকা এবং ওষুধের দাম বেশি রাখায় একটি প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। চাল, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুনসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করায় গৌরনদীতে ১২ ব্যবসায়ীকে ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আগৈলঝাড়া উপজেলায় বেশি দামে পেঁয়াজ ও চাল বিক্রি করায় তিন ব্যবসায়ীকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় সাতক্ষীরায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ৪৫টি অভিযান চালিয়েছেন। এসব অভিযানে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় বলে শুক্রবার রাতে সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসন আয়োজিত সভায় জানানো হয়।
গোপালগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ১৬টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে কোটালীপাড়ায় আট প্রতিষ্ঠানকে ৭১ হাজার টাকা, কাশিয়ানী উপজেলায় আট প্রতিষ্ঠানকে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
পটুয়াখালীতে দুই দিনে চার লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, শহরের নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২০ জন ব্যবসায়ী ও ক্রেতাকে ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বাউফলে অতিরিক্ত মূল্যে চাল বিক্রি করার দায়ে চারজন ব্যবসায়ীকে ২ লাখ টাকা, দুমকি উপজেলায় তিন ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা এবং দশমিনায় ১৩ ব্যবসায়ীকে ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ভোলায় গত শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৮০ জন ব্যবসায়ীকে ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পণ্যের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি, পণ্য গুদামজাত এবং ওজনে কম দেওয়ায় এসব জরিমানা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ভোলা সদরে শুক্রবার বিকেলে পাঁচ ব্যবসায়ীকে ৭০ হাজার এবং শনিবার সকালে ২৯ ব্যবসায়ীকে ৩ লাখ ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। শনিবার সকালে লালমোহন উপজেলায় ৭ ব্যবসায়ীকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা, মনপুরায় ৮ ব্যবসায়ীকে ২৭ হাজার ৫০০ টাকা, শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দৌলতখান উপজেলায় ৫ ব্যবসায়ীকে ৪৬ হাজার টাকা, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ২০ ব্যবসায়ীকে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং চরফ্যাশন উপজেলায় ৬ ব্যবসায়ীকে ১৭ হাজার ৫০০ টাকাসহ ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ভোলা সদরের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাজারে অভিযানে এলে অনেক বিক্রেতা দোকান বন্ধ করে আশপাশে ঘোরাঘুরি করেন। আবার চলে গেলে দোকান খুলে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করা হয়। তবে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, গুজব ছড়িয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। শহর থেকে গ্রামের সর্বত্র অভিযান চলবে।
চালের দাম বেশি রাখায় চুয়াডাঙ্গায় চার ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার সবচেয়ে বড় চালের মোকাম সরোজগঞ্জ বাজারে এই অভিযান পরিচালনা করেন ইউএনও সাদিকুর রহমান। নিত্যপণ্যের দাম বেশি নেওয়ার অপরাধে গতকাল দুপুরে যশোর শহরের চৌরাস্তা, বড়বাজার ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন সড়কের পাঁচটি দোকানে অভিযান চালিয়ে ২১ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
এছাড়াও বরগুনার আমতলীতে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পিরোজপুর সদর, নেছারাবাদ ও মঠবাড়িয়া উপজেলায় ১৭টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ৯৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।