করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আদালত। আইনজীবীরা সুরক্ষা (মুখে মাস্ক পরে) নিয়ে এলেও বিচারপতিদের নিরাপত্তা দেবে কে? এমন প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। এজন্য উন্মুক্ত কোর্টে শুনানি না করে খাস কামরায় বসে মামলার আদেশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।
এক মামলার শুনানিতে করোনাভাইরাস ইস্যু টেনে আজ সোমবার (২৩ মার্চ) সকালে বিচারপতি আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের বেঞ্চ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এ সময় আদালতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম আমিন উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। মামলার শুনানির সময় মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাবস পরে আদালতে হাজির হন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি।
এ সময় তাকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, ‘করোনা থেকে আপনারা তো সুরক্ষা নিচ্ছেন, আমাদের সুরক্ষা কোথায়?’ তখন আদালত এজলাসের উন্মুক্ত পরিবেশে শুনানি না নিয়ে খাসকামরায় থেকে আদেশ দেয়ার বিষয়ে মতামত দেন।
বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি আশরাফুল কামাল জানান, তারা কালকে পরীক্ষামূলক খাস কামরায় বসে মামলার আদেশ দেবেন। মামলার আবেদন এ সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা মোবাইল নম্বর রাখা হবে। মামলার সম্পৃক্ত এবং আইনি কোনো বিষয়ে জানার প্রয়োজন হলে মোবাইলের মাধ্যমে তারা জেনে নেবেন। এ ক্ষেত্রে কোনো পক্ষই যেন ভুক্তভোগী না হন, সে বিষয়টিও তারা দেখবেন বলে জানান আদালত।
আদালত কক্ষে জনসমাগম এড়াতেই এ সিদ্ধান্ত বলেও জানিয়েছেন বিচারপতিরা। তারা বলেছেন, আমাদেরও তো নিরাপত্তার প্রয়োজন রয়েছে।
এছাড়া আজ একই আদালতে দেশের সব আদালত বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। তখন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানির জন্যে উপস্থিত থাকবেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষ।
এর আগে গত বুধবার (১৯ মার্চ) শুনানি শেষে পরবর্তী শুনানির জন্য ২৩ মার্চ দিন নির্ধারণ করেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন ধার্য করা হয়।
গত ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসের ব্যাপারে সতর্কতার অংশ হিসেবে উচ্চ ও নিম্ন আদালতে পরবর্তী অবকাশকালীন ছুটি স্থানান্তর করে এখনই ছুটি কার্যকর চেয়ে রিট আবেদন করা হয়।
ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন। আবেদনে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আগতদের সংশ্লিষ্ট বন্দর থেকেই বাধ্যতামূলকভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন কোয়ারেন্টাইনে রাখার নির্দেশনা চেয়েও আর্জি জানানো হয়।
রিটে আইন সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
রিট দায়েরের পর ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির বলেন, করোনা আতঙ্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে ফিরছে প্রবাসীরা। তাদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা রয়েছে। তবে তা অনেকে মানছে না। এ কারণে রিটটি দায়ের করা হয়েছে।
১৩ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত উচ্চ আদালত অবকাশকালীন ছুটিতে রয়েছে। আবেদনে ডিসেম্বরে থাকা অবকাশকালীন ছুটি স্থানান্তর করে এখন নিম্ন আদালতে সেই ছুটি কার্যকর এবং মে, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর, ডিসেম্বরে থাকা অবকাশকলীন ছুটি স্থানান্তর করে এখন সুপ্রিম কোর্টে সেই ছুটি কার্যকরে রুল জারির আর্জি জানানো হয়।
গত বুধবার কোভিড-১৯-কে ‘সংক্রামক রোগ’ হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবারের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে এ গেজেট জারি করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে গেজেট জারি হয়েছে কি-না, তা আদালতকে জানাতে সংশ্লিষ্ট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলা হয়েছে। গেজেট প্রকাশ না করলে করোনার বিষয়ে কী কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সে বিষয়েও জানতে চেয়েছেন আদালত।
রিট আবেদনকারীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল শুনানি করেন। তার সঙ্গে আবেদনকারী নিজেও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল দেবাশিস ভট্টাচার্য।