ম্যানিলাভিত্তিক রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলা খারিজ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। সোলেয়ার রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনিও অপারেটর ব্লুমবেরি রিসোর্টস কর্পোরেশনের বরাতে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন এমন খবর দিয়েছে।
ক্যাসিনো অপারেটরটি বলেছে, ২০ মার্চ মার্কিন আদালতের মতামত ষড়যন্ত্রের দাবি প্রমাণ করতে ব্যর্থতার জন্য বিবাদীদের দায়ের করা অভিযোগ খারিজ করার প্রস্তাব অনুমোদন করে মার্কিন আদালত।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের আদালতে মামলাটি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মামলায় আরসিবিসিকে এ ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, ফিলিপাইনের মানি এক্সচেঞ্জ হাউস, দুটি ক্যাসিনো এবং বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। আসামির তালিকায় আরসিবিসি ব্যাংকসহ ৬টি প্রতিষ্ঠান ও ১৫ ব্যক্তির নাম রাখা হয়েছিল। এতে চুরি হওয়া অর্থসহ মামলা পরিচালনার সমুদয় ব্যয় এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের সাউদার্ন ডিসট্রিক্ট কোর্টে মামলাটি করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা আইনি প্রতিষ্ঠান কোজেন ও’কোনর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে মামলাটি করে। বাংলাদেশ ব্যাংক বনাম রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন শিরোনামে করা এ মামলার নথিভুক্তির নম্বর হচ্ছে ১৯-০০৯৮৩।
মামলার নথিতে যা আছে : মামলায় বলা হয়, মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের নিউইয়র্ক শাখায় রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার অজ্ঞাতনামা হ্যাকাররা হাতিয়ে নেয়। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরির মধ্যে ফিলিপাইনে যায় ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং শ্রীলংকায় যায় ২ কোটি ডলার। এর মধ্যে ২ কোটি ডলার শ্রীলংকা থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
ফিলিপাইনের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার গেছে আরসিবিসিতে। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ আরও বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে।
তারা মানি লন্ডারিংয়ের বিধিবিধান পরিপালন না করে ওই সব অর্থ ছাড় করার মাধ্যমে পাচার করতে সহায়তা করেছে।
এতে আরও বলা হয়, ব্যাংকটির শীর্ষ কয়েক কর্মকর্তা এ অর্থ চুরির জন্য কয়েক বছর ধরে ‘বড় ধরনের’ ‘জটিল ষড়যন্ত্র’ করেন। অজ্ঞাতনামা উত্তর কোরীয় হ্যাকাররা এ চুরিতে সহায়তা করেছে।
অর্থ চুরির পর তা ফিলিপাইনের আরসিবিসির অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। পরে সেখান থেকে মানি এক্সচেঞ্জ হয়ে এর বেশির ভাগ অর্থ ফিলিপাইনের ক্যাসিনোর মাধ্যমে পাচার করে দেয়া হয়।
মামলায় আরও বলা হয়, ওই অ্যাকাউন্টগুলোর ওপর আরসিবিসি এবং এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল। কী ধরনের অপরাধ হচ্ছে তা জেনেও অ্যাকাউন্ট খোলা, বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তর এবং পরে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়ার বিষয়গুলো কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই ঘটতে দিয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (নিউইয়র্ক ফেড) থাকা বাংলাদেশের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়।
হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেনের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট) সিস্টেমসে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে এ অর্থ ফিলিপিন্স ও শ্রীলংকার দুটি ব্যাংকে সরানো হয়েছিল।
পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে একটি বার্তার ২ কোটি ডলার যায় শ্রীলংকার একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে। ওই ব্যাংক অর্থ ছাড় না করায় ২ দিনের মধ্যে তা ফেরত পায় বাংলাদেশ।