করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে বন্ধ রয়েছে সব কিছু। আদালত অঙ্গনও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কবে সেটাও বুঝে উঠা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। স্বাভাবিক হলেও সামনে অর্থনৈতিক ধাক্কা আছে সেই বিষয়টি পরিস্কার। যার ফলে নবীন আইনজীবীদের মাঝে একরকম হতাশা কাজ করছে। কারণ এই নবীনরা মাসে যা আয় করেন তা প্রতিমাসেই তাদের ফুরিয়ে যায়। অপরদিকে মর্যাদার ভয়ে কারও কাছে সাহায্যের হাত বাড়াতেও আছে অস্বস্তি। এমন পরিস্থিতিতে আইনজীবীরা তাকিয়ে আছেন আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এবং আইনজীবী সমিতির দিকে। এই নিয়ে কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে আইনজীবীরা মতামত ব্যক্ত; কেউ কেউ পরামর্শ দিচ্ছেন আবার সমিতির নির্বাচিত সদস্যরাও আশ্বাসের বানীও শুনাচ্ছেন। ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডট কম আইনজীবীদের স্বার্থে ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কিছু মতামত, পরামর্শ ও আশ্বাস তুলে ধরছে-
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোঃ আব্দুল কুদ্দুস বাদল কিছুটা ক্ষোভের সুরেই বলছেন, ‘সরকারের রাজস্ব আদায়ের অন্যতম খাত স্ট্যাম্পসহ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি (মামলা পরিচালনার বিভিন্ন সময়ে) সরকারী কোষাগারে জমা হয়। বিচারক, কোর্ট কর্মকর্তা ও স্টাফদের যাবতীয় খরচ সরকার বহন করলেও রাজস্ব আদায়ের মুখ্য ভূমিকা পালনকারী বিজ্ঞ আইনজীবিগনের জন্য এতে কোন বরাদ্দ নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সময়ে বিভিন্ন পেশার নাগরিকদের বিশেষ বরাদ্দ দিচ্ছেন। আইনজীবীদের নেতা হয়ে বেশীরভাগই নিজেদের ভাগ্যান্নোয়নে কাজ করলেও আইনজীবীদের স্বার্থে সরকারের নিকট থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো সুযোগ সুবিধা আদায় করেছেন এমন নজির চোখে পড়ছে না।
বিজ্ঞ আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। প্রায় ৬০০০০ হাজার বিজ্ঞ আইনজীবীগন প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকা বাৎসরিক ফি, ভেনাভোলেন্ট ফান্ড বার কাউন্সিলের একাউন্টে জমা করেন। স্বতন্ত্র সংস্থা হিসেবে এই মুহূর্তে বার কাউন্সিল আইনজীবীবান্ধব প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারেন। যদিও বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদে অনির্বাচিত এটর্নী জেনারেল মহোদয়ের মাথা ব্যথা নেই কিন্তু যারা নির্বাচিত তারা কিছু করতে পারেন।’
সুপ্রিম কোর্টের নবীন আইনজীবী ওবায়েদ আহমেদ রুমন বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে পরিস্থিতি পরিবর্তন না হলে আরো অনেকদিন আমাদেরকে কর্মহীন থাকতে হবে। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বেশ সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে। আর দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ থাকলে আমাদের অবস্থা কি হয় তা আমাদের মতন নবীন আইনজীবী রা সকলেই জানেন, প্রতিবছর ডিসেম্বরের ভেকেশন শেষে কোর্ট ওপেন হবার পরেও দীর্ঘ একটা সময় চলে যায় আয় রোজগার স্বাভাবিক হতে, আর এবারের এই করোনা পরিস্থিতি হয়তো আরোও ভয়াবহ কিছুর ইংগিত দিচ্ছে, এরকম পরিস্থিতিতে বরাবরই আমরা জুনিয়র আইনজীবীগণ ভুক্তভোগী হয়ে থাকি তাছাড়া সকল সিনিয়রগণ জুনিয়র বান্ধব নন সেক্ষেত্রে পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে গিয়ে অনেকেই হিমসিম খাবেন, আমাদের আইনজীবী বন্ধুদের মধ্যে যাদের আয় রোজগার কম কিংবা আয় ভালো হলেও যাদের জমানো তেমন কিছু নাই কিংবা যাদের জমানো থাকলেও এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতেই তা ফুরিয়ে যাচ্ছে কিংবা যারা একেবারে জুনিয়র তাদের আসন্ন দূর্দশা মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তত্বাবধানে কিংবা আমাদের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে একটি তহবিল গঠন করা যেতে পারে। বর্তমান কমিটি দ্রুত একটি জরুরী তহবিল গঠন করে তা থেকে প্রাকটিসিং ল’ইয়ারদের আপদকালীন বরাদ্দ না দিলে বিজ্ঞ আইনজীবীরা পরিবার পরিজন নিয়ে নিদারুণ কষ্টে পড়ে যাবেন, এহেন পরিস্থিতিতে পেশাগত মান ইজ্জতের কথা চিন্তা করে খুব সিরিয়াসলি বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হবে এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং ভবিষ্যতে বিজ্ঞ আইনজীবীগণ যেনো সর্বদা সমাজে মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে সে লক্ষ্যে পেশাগত মানোন্নয়ন অত্যাবশ্যক।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ঢাকা কর আইনজীবী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরে বলেন, ‘শ্রদ্ধেয় সভাপতিবৃন্দ ও সম্পাদকবৃন্দ, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন, ঢাকা বার এসোসিয়েশন, ঢাকা ট্যাকসেস্ বার এসোসিয়েশন ও অন্যান্য বার এসোসিয়েশন, অত্যন্ত বিনয়ের সহিত প্রস্তাব করছি যে,
১। বারের আয়ের একটি অংশ (ওকালতনামা, বেইল বন্ড ও সুদ আয় ইত্যাদি ) (৫-১০)% বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি বৎসর ওয়েলফেয়ার ফান্ড/জরুরী ফান্ডে জমা রাখলে বিপদে আপদে সকল আইনজীবীদের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
২। বারের আয়ের একটি অংশ (৫-১০)% বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি বৎসর মেডিকেল ফান্ডে জমা রাখলে বিপদে আপদে সকল আইনজীবীদের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩। সলভেন্ট আইনজীবীরা ইলেকশনে কোটি কোটি টাকা খরচ না করে বারের ফান্ডে অনুদান প্রদান করলে জুনিয়র আইনজীবীরা উপকৃত হতো’
কিছুটা আশ্বাসের সুরে বক্তব্য রেখেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির সিনিয়র সহ সম্পাদক ব্যারিস্টার কাজী শামসুল হাসান শুভ। তিনি বলেন, ‘এই সময়ে আইনজীবীদের পাশে থাকা আমিও জরুরী মনে করছি। সমিতির সন্মানিত সভাপতির সাথে কথা হয়েছে। কার্যকরী কমিটির বাকী সদস্যদের সাথে আলাপের চেষ্টা করছি। এই লক ডাউন পরিস্হিতিতে সমিতির নিয়মনীতির মধ্যে থেকে বাস্তবসম্মতভাবে কিভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করে নবীন আইনজীবীদের পাশে থাকা যায় তা নিয়ে উপায় খুঁজছি।’