করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তাদের জন্য বিমা সুবিধাসহ সরকার ঘোষিত অন্যান্য সুবিধা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব, আইন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের সরকারি ই-মেইলে এ নোটিশ পাঠানো হয়।
বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ওবায়দুর রহমানের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম এ নোটিশ পাঠান।
নোটিশে বলা হয়, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করে তুলতে নিষ্ঠার সঙ্গে চিকিৎসাসেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে বর্তমানে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরলস চিকিৎসাসেবার কোনও বিকল্প নেই। যেহেতু করোনাভাইরাস একটি সংক্রামক রোগ, তাই পর্যাপ্ত পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) না থাকার কারণে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন।
‘করোনায় আক্রান্ত হওয়ার এই ঝুঁকি নিয়ে যেখানে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরলস চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন, সেখানে পত্রপত্রিকা মারফত জানা যাচ্ছে, একদল বাড়িওয়ালা বর্তমান পরিস্থিতিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বাসা ছেড়ে দেওয়ার মতো অযৌক্তিক এবং অমানবিক নির্দেশ প্রদান করছেন। এমনকি তাদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার পর্যন্ত করছেন, যা তাদেরকে মানসিকভাবে দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। অথচ প্রাণঘাতী করোনার এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছ থেকে চিকিৎসাসেবা পেতে হলে তাদেরকে মানসিকভাবে নির্ভার রাখাটা অত্যন্ত জরুরি।
নোটিশে আরও বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রামক রোগ হওয়ায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) অত্যন্ত জরুরি। গত ২২ মার্চ চিকিৎসক ও নার্সদের দ্রুত পিপিই প্রদানের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট বিভাগ। তথাপি, পর্যাপ্ত পিপিই না থাকার কারণে অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে ওই আক্রান্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংস্পর্শে আসা অন্যান্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে গত ১৫ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রথম একজন চিকিৎসক মৃত্যুবরণ করেন। সরকারের পক্ষ থেকে আক্রান্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিমার আওতায় আনার কথা বললেও তা কোন আইন বা নীতিমালার অধীনে কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, এখন পর্যন্ত কেউ তা জানে না। তাই এক্ষেত্রে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
পত্রপত্রিকা মারফত প্রায়শই জানা যায় যে, আমাদের দেশে জনসংখ্যার অনুপাতে চিকিৎসক পর্যাপ্ত নেই। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী এডহক ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগের ব্যবস্থা করে করোনার প্রাণঘাতী ছোবল থেকে দেশের জনগণকে রক্ষা করা জরুরি।
তাই এই নোটিশ প্রাপ্তির তিন কার্যদিবসের মধ্যে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে বাড়িওয়ালাদের উপরোক্ত অযৌক্তিক ও অমানবিক আচরণ বন্ধ করতে ব্যবস্থা গ্রহণ, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ এবং প্রয়োজনে এডহক ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায়, হাইকোর্ট বিভাগে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।