তানজিম আল ইসলাম:
দেশে করোনা পরিস্থিতির কারনে সুপ্রিম কোর্টেও সাধারন ছুটি বড়ানো হয়েছে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত । অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এ ছুটি আরও বাড়তে পারে। এর ফলে একটি বিরুপ প্রভাব সাধারন বিচারপ্রার্থী এবং আইনজীবীদের উপর পড়ছে। যদিও করোনার এই মহামারীর সময় আদালতে ছুটি ঘোষনা করা ছাড়া অন্য কোন উপায়ও নেই। কিন্তু রাষ্ট্রের নাগরিকের যে মৌলিক অধিকার বলবৎ করার যে সাংবিধনিক সুযোগ সেটিও রুদ্ধ হয়ে গেলো। দেশে জরুরী অবস্থাও জারি নেই। আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার বলবৎ করার সুযোগ একেবারে বন্ধ থাকা উচিত নয়। কোন দেশেই তা হয়নি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও তা হচ্ছেনা। এ জটিলতা নিরসনে কার্যকর বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করা যায় এবং তা করা যেতে পারে অনলাইনে। অন্তত একটি বা দুটি রীট বেঞ্চ অনলাইন ভিত্তিক চালু করা নিতান্তই প্রয়োজন। দেশে যদিও ই-জুডিশিয়ারি চালু হয়নি তাতে মনে হতে পারে যে অনলাইনে আদালত কার্যক্রম চালুতে জটিলতা তৈরি হতে পারে। কিন্তু আইটি বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে তা চালু করতে খুব জটিলতা হবে বলে মনে হয়না যদিও এ অনলাইন ভিত্তিক বেঞ্চ হবে সীমীত সময়ের জন্য।
এজন্য কয়েকটি প্রস্তাবনা রাখতে চাই
১. অনলাইন বেঞ্চ চালুর জন্য প্রথমেই একটি সিস্টেম ডেভেলপ করা দরকার এবং গোটা সফটওয়্যারটি থাকবে সহজে ব্যবহার করা যায় এমন। এক্ষেত্রে সরকারের এটুআই যে প্রজেক্ট আছে তাদেও সহযোগিতা নিতে পারে।
২. অনলাইনে মামলার এপ্লিকেশন ফাইল পিডিএফ ফরমেটে ইনপুট দেয়ার সুযোগ থাকবে এবং আলাদা করে এনেকচার কপি পিডিএফ বা জেপিজি ফরমেটে দেয়ার সুযোগ থাকবে। অনলাইনে ফাইল করার পর অটো একটি মামলা নাম্বার পড়বে। অপশন থাকবে কোন বেঞ্চে দাখিল করতে চায়। এর আগে তদবীরকারের আইডি র্কাড ভেরিফিকেশনের জন্য একজন কর্মকর্তা অনলাইনে চেক করে দিয়ে কনফার্ম করতে পারেন। তিনি সংশ্লিষ্ট বিচারপতিদ্বয়ের কাছে রেফার করবেন ইমেইলে যা ঔ সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত থাকবে এবং একটি অটো আপডেট আইনজীবী চেক করে জানতে পারেবে তার মামলার সট্যাটাস সম্পর্কে।
৩. বিচারপতি মহোদ্বয় নিজেরা এ বিষয়ে আলাপ করে নিতে পারেন এবং আদেশ দিতে পারেন। প্রয়োজন হলে আবেদনকারি আইনজীবীকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে অনলাইেনে এসে ভিডিও কনফারেন্স কলে শুনানীর সময় ঠিক করে দিতে পারেন।
৪. কোন আদেশ হলে দুই বিচারপতি তাদের বেঞ্চ অফিসারের নিকট পাঠাবেন আদেশের ডিক্টেশন দিয়ে। টাইপ হওয়ার পর দুই বিচারপতি মহোদয় ইলেকট্রনিক সিগনেচার দিয়ে আদেশটি অনলাইনে দিবেন। তখন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী সেটি সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট বাদী বিবাদীদের সরবরাহ করতে পারেন। তবে প্রশ্ন আসতে পারে রুলের রিকুজিট কীভাবে জমা দিবে। এক্ষেত্রে যেহেত অনলাইনে থাকবে তাই রিকুজিট জমা দেয়ার প্রয়োজন হবেনা। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বিবাদীদের নিকট ইমেইলে আদেশের কপি সরবরাহ করতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্য রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তার ভেরিফিকেশন থাকতে পারে।
৫. এক্ষেত্রে একটি বার কোড ব্যবহার করতে হবে যাতে আদেশের বিষয়ে সত্যতা যাচাই করার সযোগ থাকবে।
৬. কম্পিউটার এবং অনলাইন সম্পর্কে ভালো জ্ঞান আছে এমন বিচারপতি মহোদ্বয়দের দিয়ে অনলাইন বেঞ্চ গঠন করতে হবে।
৭. মামলা ফাইল করার পর সংশ্লিষ্ট ডেপুটি অ্যাটর্নী জেনারেলের কাছেও একটি কপি ইমেইলে সার্ভ করার ব্যবস্থা থাকবে। যদি রাষ্ট্রপক্ষে বক্তব্য দিতে চায় তাহলে তিনিও লিখিতভাবে সাবমিশন অনলাইনেই দাখিল করতে পারেন। প্রয়োজনে বিচারপতিদ্বয় এবং রীটকারি আইনজীবী এবং ডেপুটি অ্যটর্নী জেনারেল একত্রে ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থা থাকবে।
৮. আদালতের ছুটি শেষ হলে প্রয়োজনে মামলার হার্ডকপি দাখিল করতে পারে সংশ্লিষ্ট শাখায় এবং এখানে আলাদা ক্রমিক দেয়া থাকবে যাতে উল্লেখ থাকবে অনলাইন ভিত্তিক বেঞ্চে কার্যক্রম চলেছে মর্মে উল্লেখ থাকবে। রুল শুনানির সময় স্বাভাবিক কার্যক্রমই চলবে।
উপরোক্ত ব্যবস্থাগুরো জরুরী ভিত্তিতে চালু করার প্রয়োজন। আমাদের দেশে এত স্বল্প সময়ে সর্ম্পূণ ইজুডিশিয়ারি চালু করা সম্ভব নয়। ই-জুডিশিয়ারি চালু করতে হলে র্দীঘদিন ধরে একটি অবকাঠমো গড়ে তোলা প্রয়োজন। ভারতেও তাই হয়েছে। এর সুফল অনেক রাজ্যে তারা পাচ্ছে। আমাদের দেশে জানামতে একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা ছিল কিন্তু এর বাস্তবায়ন এখনো দেখা যাচ্ছেনা। যেহেতু দেশে এই অবস্থায় জনগনের মৌলিক অধিকার বলবতের সুযোগ থাকতে হবে তাই সীমীত পরিসরে অনলাইন ভিত্তিক একটি বা দুটি রীট ব্ঞ্চে গঠন করা খুবই প্রয়োজন। মাননয়ি প্রধান বিচারপতি মহোদয় এ বিষয়ে অতি শীগ্রই নির্দেশনা জারি করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কার্যকর পদক্ষেপ নিবেন বলে আশা করি।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট