নাটোরে হটলাইন নম্বরে ৪৭৩ বার কল করে করোনা হয়েছে এমন মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে মজা নেওয়ার অভিযোগে সুমন (১৪) নামে এক কিশোরকে আটক করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে লিখিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
এর আগে সোমবার (২০ এপ্রিল) দিনগত রাত ৮টার দিকে সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের টলটলিয়া পাড়া থেকে মোবাইলসহ তাকে আটক করা হয়।
আটক সুমন ওই গ্রামের নবীনুরের ছেলে। সে স্থানীয় একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ওই ফোনটি ছিল প্রতারণা বা হয়রানিমূলক। ওই স্কুলছাত্র করোনা হয়েছে এমন মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছে। নিছক মজা নেওয়ার জন্যই সে সরকারের বিভিন্ন পরিষেবা নম্বরে ফোন করে।
ফোন করে বলা হয়, ‘আমি করোনায় আক্রান্ত- আমি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে পালিয়ে এসেছি, আমাকে বাঁচান।’ নাম আব্দুল করিম বলে পরিচয় দেন।
পরে ওই খবরের ভিত্তিতে নাটোর শহরের আলাইপুর এলাকার আব্দুল করিম পরিচয়দানকারী করোনায় আক্রান্ত ওই ব্যক্তিকে খুঁজতে মাঠে নামে পুলিশ। এতে করোনামুক্ত নাটোরের জন্য বড় দুঃসংবাদ হিসেবে দেখা দেওয়ায় পুলিশ ওই ব্যক্তিকে উদ্ধারে তাদের সব প্রক্রিয়া কাজে লাগায়।
কিন্তু তার কোনো হদিস করতে পারে না পুলিশ। করোনা আক্রান্ত হওয়ার সংবাদে সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে উদ্ধারকারী দলের সহায়তায় স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলও মাঠে নামেন। কিন্তু সোমবার দিনভর শহরের বিভিন্ন এলাকায় সন্ধান করেও ফোনকারী সেই করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান করতে পারে না পুলিশ। অবশেষে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে খুঁজে পায় নাটোর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাতের নেতৃত্বদানকারী পুলিশের একটি দল।
পুলিশের ওই দলটি সোমবার রাত ৮টার দিকে সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের টলটলিয়া পাড়া থেকে মোবাইলসহ সেই ফোনকারীকে আটক করতে সক্ষম হয়। তাকে আটকের পর সবার চোখ কপালে ওঠে। আটক করা হয় সুমন সামে ১৩/১৪ বছর বয়সের এক কিশোরকে।
বিভিন্ন সময়ে সে বিভিন্ন হটলাইন নম্বরে কল দিয়ে তার নাম বলে আব্দুল করিম। শহরের আলাইপুর এলাকায় তার বাড়ি। করেনায় আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থা থেকে পালিয়ে এসেছে। বর্তমানে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, তার জরুরি চিকিৎসা দরকার। এমন ফোন পেয়ে তৎপর হয়ে ওঠে জেলা পুলিশ।
এদিকে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে করোনামুক্ত নাটোরের মানুষের মধ্যে দেখা দেয় উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা। বিভিন্ন স্থান থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ঘটনার সত্যতা জানতে চাওয়া হয়। এভাবেই পার হয় কয়েক ঘণ্টা। রাত ৮টার দিকে তাকে আটকের পর প্রশাসনে স্বস্তি ফিরে আসে।
নাটোর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত গণমাধ্যমকে বলেন, আটক ছেলেটির মোবাইল সিডিআর পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৬ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সে সরকারি তথ্যসেবা নম্বর ৩৩৩-এ ৩১৬ বার, করোনার বিষয়ে পরামর্শের জন্য আইইডিসিআরকে দেওয়া নম্বর ১৬২৬৩-এ ৬৩ বার, ১০৬৫৫-এ ৪০ বার, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে জাতীয় হেল্পলাইন নম্বর ১০৯-এ ৩১ বার ও জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এ ২৩ বার কল করে বিভিন্ন রকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়েছেন। এমন কাজের ফলে সরকারি সম্পদ ও সময় যেমন অপচয় হয়েছে, তেমনি ভুক্তভোগী জনগণ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
পাশাপাশি মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ প্রশাসনসহ দায়িত্বরত অন্য সংস্থা হয়রানির শিকার হয়েছে। এ বিষয়ে আটক সুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।