মুজিবুর রহমান:
১৩ তম জুডিসিয়ারির ভাইবা প্রস্তুতি নিয়ে অনেকেই জানতে চেয়েছেন, কিন্তু আমার জ্ঞানের পরিধি খুব সীমিত। তবুও আমার যতটুকু অভিজ্ঞতা, আমি সেটার উপর ভিত্তি করে কিছু কথা জানাতে চেষ্টা করছি-
১. কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে?
কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন-সেটা ব্যাখ্যাতীত প্রশ্ন। আমার কাছে ভাইবা জিনিসটা হচ্ছে মেধা-৫০%, আর ভাগ্য-৫০%। প্রস্তুতি নতুন বা বাড়তি কিছুর দরকার আছে বলে মনে হয় না। পুরাতন যেসব পড়ছেন ও জানেন, সেটাই আরেকটু বেশি করে ঝালাই করেন। নিজের আত্মবিশ্বাসটাকে সর্বোচ্চ করুন ও কাজে লাগান।
২. কি কি পড়তে হবে?
- আপনি বিজেএস প্রিলি ও রিটেনের জন্য যে সিলেবাসটা পড়ছেন, সেটাই কাভার করবেন। প্রায় সব আইন একটু হলেও পড়ার চেষ্টা করবেন। কোথায় থেকে কোশ্চেন করে, তার হিসেব নেই। তবে সব আইনের, সব কিছুই পড়বেন না। বেসিক ও গুরুত্বপূর্ণ দেখে পড়বেন। সবকিছু পড়তে গিয়ে জগাখিচুড়ি করে ফেলবেন না।
- সিপিসি, সিআরপিসি,পেনাল, এভিডেন্স,কন্সটিটিউশন- এই ৫টা থেকে প্রত্যেকজন কোশ্চেন পাবেনই। সো, এগুলো ফরজ, ফরজ এন্ড ফরজ। মুসলিম আইনের উত্তারাধিকার এর অংশ ও ডকট্রিনগুলো, সম্পত্তি হস্তান্তর, চুক্তি আইন, রেজিস্ট্রেশন আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারা। এরপর-
- সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন(কি কি মামলা হয়, প্রতিকারগুলো, নিষেধাজ্ঞা)- এই আইনটা থেকে প্রায়জনই কোশ্চেন পাবেন সম্ভবত।
- SAT Act (৯৬ ধারা, ট্রাইব্যুনাল ও ক্ষমতা),
- NAT Act (২৪ ধারা)
- লিমিটেশন(গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো সময়সীমা, দেওয়ানী ও ফৌজদারীর আপীল ও রিভিশনের সময়সীমা)
- কোর্ট ফি(গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর কোর্ট ফি কত, কোর্ট ফি কত ধরনের)
- স্মল কজেস কোর্টস এ্যাক্ট( এখতিয়ার ও বিচার কোথায় হবে)
- সিভিল কোর্টস এ্যাক্ট(কোর্টগুলোর ক্ষমতা, আপীল)
- স্পেশাল পাওয়ার এ্যাক্ট(শাস্তিগুলো, ট্রাইব্যুনাল, জামিন ধারা)
- দুর্নীতি দমন আইন( শাস্তুি, সাথে ফাঁদ মামলা সম্পর্কে জেনে যাবেন এবং সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করার নিয়ম কি, মামলা কোথায় হয়),
- ফ্যামিলি কোর্টস অরডিন্যান্স(এখতিয়ার, কোর্ট ফি, শাস্তি ও ক্ষমতা, আপীল, ডিক্রী জারি)
- মুসলিম ফ্যামিলি ল অর্ডিন্যান্স(৪ধারা ও তালাক)
- মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন(ট্রাইব্যুনাল, ইয়াবা/হিরোইন/গাজা/মদ এগুলোর শাস্তি, ইয়াবা কি, আর সাম্প্রতিক সংশোধনী),
- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন(শাস্তির ধারা,তদন্ত,২২ধারা, ট্রাইব্যুনাল)
- N.I Act- (১৩৮-১৪১ ধারা চেক মামলা)
- শিশু আইন-(শিশু কে,শিশু আদালত, বিচারক কে, গ্রেপ্তার কখন করা যায়, অপরাধ সংঘটনের শিশুর সাজা কি, শিশুকে দিয়ে অস্ত্র বহনের শাস্তি)
- ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট- (ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল, দণ্ড সংক্রান্ত ধারা-২১, ২৮, ২৯; তদন্ত, বিচার, আপীল)
ব্রাকেটের ভিতরের টপিকসগুলো একটু বেশি জোর দিবেন। উপরেরগুলো শেষে- অন্যান্যগুলো দেখবেন। আবার বলছি সব পড়ার সময় পাবেন না, হিসেব করে বেসিক ও গুরুত্বপূর্ণগুলো পড়ুন।
সাধারন জ্ঞান-
মুজিব বর্ষ, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও এর বিচারক কে; বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তির লেখা গ্রন্থ ও জীবনীগ্রন্থ; রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল; বাংলাদের ইতিহাসের তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও এর বিচারক ও আইনজীবি কারা, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাচক্র, সেক্টর, কূটনীতি ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্য; আমেরিকা, ব্রিটেন ও ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ঘটনা; বিশ্বের বিভিন্ন বিপ্লব ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ; বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের বাড়ি বাংলাদেশের কোন জেলায়- যেমন- অমর্ত্য সেন, সত্যজিৎ, সুচিত্রা সেন ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আদালত, ট্রাইব্যুনাল, বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনাল ইত্যাদি। নিজ জেলা ও জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি ও বিষয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের(যারা চট্টগ্রামের) ইতিহাস। রোহিঙ্গা ও শরনার্থী বিষয়ক সংগঠন ও কনভেনশন ও প্রটোকল। নিজের নামে কোন বিখ্যাত ব্যক্তি আছে কিনা ও পরীক্ষার তারিখে বিখ্যাত ঘটনা। সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী- যেমনঃ- যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি অভিসংশন প্রক্রিয়া, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সমস্যা, USA-China বাণিজ্যযুদ্ধ, কাশ্মীর সমস্যা; ভারতের নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সমস্যা ইত্যাদি।
৩. ভাইবা বোর্ডের চাওয়া কি হতে পারে?
ভাইবা বোর্ড এটিকেট-ম্যানার থেকে শুরু করে অনেক কিছু চাইতে পারে। তবে প্রশ্নের উত্তরের ক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছে- তারা চান, স্পেসিফিক উত্তর এবং বেসিক জিনিসগুলো যেন ভুল না করি। বেসিক বলতে যেমন- আপীল, রিভিশন, কোন কোর্টে মামলা হবে, কমন কিছু শাস্তি, কমন কিছু ধারা/বিধি, মুক্তিযুদ্ধ বা ইতিহাস বা বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম নিয়ে কমন কিছু প্রশ্ন -এসব।
৪. সব কোশ্চেনের উত্তর করতে হবে কিনা?
সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে- ভাইবা পাস করার জন্য এরকম বাধ্যবাধকতা নেই। ভাইবা বোর্ডের স্যাররাও এত আশা করেন না যে- প্রার্থী সব কোশ্চেন পারবে। দেখা যায়- অনেক ভাল ভাইবা দিয়েও জাজ হয়নি; আবার তেমন কিছু পারেনি সে কিন্তু জাজ হয়ে গেছে। তবে, বেসিক বিষয় নিয়ে করা প্রশ্নগুলো যেন ভুল না হয়।
৫. প্রশ্নের উত্তর না জানলে কি করবেন?
কোন প্রশ্নের উত্তর না পারলে, সরাসরি সরি বলে দিবেন। কিন্তু, প্রশ্ন বা উত্তর নিয়ে প্যাঁচাবেন না। আর, কখনো ওনাদের ভুল ধরতে যাবেন না। পান্ডিত্য জাহির করলে, আপনি শেষ।
পরিশেষে বলবো, নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রাখুন। জয়টা আপনারই হবে। আপনাদের পদচারণায় আলোকিত হোক বিচার বিভাগ। নিরন্তর শুভ কামনা ও প্রার্থনা।
লেখক- বিচারক, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস।