ধর্ষণের ঘটনায় দ্রুত এফআইআর (মামলা) গ্রহণের দাবি এবং লকডাউন পরিস্থিতিতে পুলিশের সহায়তায় মেডিকো লিগ্যাল পরীক্ষা সম্পন্নের দাবি জানিয়েছে ১৬টি সংগঠনের জোট- রেইপ ল রিফর্ম কোয়ালিশন (ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট)।
রেইপ ল রিফর্ম কোয়ালিশন (ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট) সচিবালয়ের পক্ষে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার (১২ মে) এ দাবি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি পুরো বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশও যখন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে যুদ্ধ করে চলছে, তখনও গতানুগতিকভাবেই ঘটছে ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা ও নির্যাতন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য হতে জানা যায়, এই সংকটকালে নিম্ন আয়ের মানুষকে ত্রাণ দেওয়ার নামেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর প্রকাশিত সূত্র মতে, শুধু জানুয়ারি হতে মার্চ পর্যন্ত ২৫৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ধর্ষণের শিকার ৪ জন নারী ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে। ব্লাস্ট গত ১৬ মার্চ হতে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা হতে মোট ৫০টি ধর্ষণের সংবাদের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এসব ঘটনায় কোথাও কোথাও মামলা না নেওয়া, মামলা হলেও মামলার পরবর্তী তদন্তে ধীরগতি এবং মেডিকো লিগ্যাল পরীক্ষায় নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এছাড়া প্রতিবন্ধী ও হিজড়া বা লিঙ্গ বৈচিত্রময় জনগোষ্ঠীর ব্যক্তিরাও বিভিন্নভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে।
রেইপ ল রিফর্ম কোয়ালিশন (ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট) লকডাউন অবস্থায় অনলাইনে দ্রুত এফআইআর গ্রহণসহ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুকে নিকটস্থ হাসপাতালে নেয়া ও ডাক্তারী পরীক্ষার ব্যবস্থা, ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যৌন নিযার্তনের শিকার নারীর ডি এন এ এবং অন্যান্য নমুনা ফরেনসিক পরীক্ষাগার অথবা ডিএনএ প্রোফাইলিং সেন্টারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা, অভিযুক্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ও যথাযথ শাস্তি প্রদানের জোর দাবি জানাচ্ছে। ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা যেন আর না ঘটে সে ব্যাপারে আইনের প্রয়োগ ও জনমত গঠনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানাচ্ছে। পাশাপাশি পুলিশ যেন এ ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানাচ্ছে।
উল্লেখ্য, পুলিশ দপ্তর হতে গত ১০ জুন ২০১৫ তারিখে (স্মারক নং-না: ও শি: নি: প্র: সেল /সার্কুলার/৪৪.০১.০০০০.০৪৭.০১.০১১.১৫-২২৩/১(১০৫) নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা দায়ের সংক্রান্ত কিছু দিকনির্দেশনা প্রদান করে একটি পরিপত্র জারী হয়। জারীকৃত পরিপত্রের ৩নং নির্দেশনা হচ্ছে, ‘ধর্ষন, যৌন নিপীড়নসহ নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত অপরাধের কোন অভিযোগ থানায় আসার সাথে সাথে কোন প্রকার বৈষম্য ও বিলম্ব ছাড়াই মামলা রুজু করতে হবে’। ‘ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নসহ নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে এ ধরনের সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন সময়ে উক্ত নির্দেশনার সুনির্দিষ্ট লঙ্ঘন পরিলক্ষিত হয়। এ ধরণের ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা সম্বলিত পরিপত্র লঙ্ঘনকারী অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কড়া নজরদারী ও পরিবীক্ষণ করার এটাই যথোপযুক্ত সময় ও সুযোগ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নারীর উপর সহিংসতা ও ধর্ষণ বন্ধ করা সহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা ও দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জোর দাবি করছি।
পাশাপাশি বর্তমানে অনেক সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যৌন সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুর পরিচয় প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত আইনী বিধানগুলো সুষ্ঠুভাবে পালিত হচ্ছে না। ফলে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের পরিচয় প্রকাশিত হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে না, অন্যদিকে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি ও তার পরিবার বা শুভাকাঙ্খিগণ নিরাপত্তহীনতায় ভুগছেন ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কখনো কখনো তারা পুনরায় সহিংসতা ও অপরাধের শিকার হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে পরিচয় প্রকাশ অনেক সময় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন, স্বাধীনতা ও মর্যাদার ওপর ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশের সংবিধান, শিশু আইন ২০১৩; নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০; ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন; জাতীয় গণমাধ্যম নীতিমালা, ২০১৪ সহ প্রচলিত আইন অনুসারে সাংবাদিকগণ এই ক্ষেত্রে অপরাধের শিকার ব্যক্তি ও সাক্ষীগণের সুরক্ষায় প্রাথমিক পর্যায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।