ইফতি হাসান ইমরান:
অনেকেই মনে করেন ভার্চুয়াল আদালতে অংশগ্রহণ করতে হলে আলাদাভাবে কম্পিউটার, প্রিন্টার, ক্যামেরা ও স্ক্যানার মেশিন প্রয়োজন। এই ধারণা ভুল! শুধু একটি স্মার্টফোন দিয়েই আপনার এই সকল চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
আসুন তবে জেনে নেই কিভাবে তা সম্ভব হবে। ভার্চুয়াল আদালতে সংযুক্ত হতে আপনার স্মার্ট মোবাইল ফোনটিতে জুম বা মাইক্রোসফট টিম নামক ভিডিও কনফারেন্সিং সফটওয়্যারটি ইন্সটল করে নিতে হবে। ফোনের মাধ্যমে আপনার ইমেইলেও ঢুকতে পারবেন। কাগজপত্র স্ক্যান করার জন্য আপনার ফোনের প্লে-স্টোর থেকে “CamScanner” নামক সফটওয়্যারটি ইন্সটল করে নিন। আপনার ফোনের ক্যামেরায় কাগজপত্রগুলোর ছবি তুলে নিন। এবার “CamScanner” এ্যাপটি ওপেন করে তুলে নেওয়া ছবি একটা একটা করে সিলেক্ট করুন এবং স্ক্যান বাটনে ক্লিক করুন। দেখবেন আপনার কাগজগুলো স্ক্যান হয়ে পিডিএফ ফাইল হয়ে গেছে। যদিও CamScanner ওপেন করে ছবি তোলা যায় তবে আগে মোবাইলের নিজস্ব ক্যামেরার এ্যাপে ছবি তুলে নিলে কোয়ালিটি বেশী ভালো হবে।
এবার আপনি আদালতের ইমেইলে স্ক্যান করা পিডিএফ কাগজপত্রগুলো পাঠাতে পারবেন। এই CamScanner এ্যাপটি অনেক ভালো কোয়ালিটির স্ক্যান করে। এমনকি সুপ্রীম কোর্টের ওয়েবসাইটে ভার্চুয়াল আদালতের জন্য প্রাকটিস নির্দেশনার প্রজ্ঞাপনটিও এই CamScanner এ্যাপটিতে করা। স্ক্যানার মেশিনের চাইতে এই এ্যাপটির স্ক্যান কোয়ালিটি অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে।
আপনি চাইলে মাইক্রোসফট অফিস ওয়ার্ড এ্যাপটি ডাউনলোড করে আপনার ফোনেই টাইপের কাজ করতে পারেন। টাইপের সুবিধার্থে চাইলে একটি এক্সটার্নাল কিবোর্ড ফোনটিতে সংযুক্ত করে ব্যবহার করতে পারেন।
কাগজের লেখা বা হার্ডকপি থেকে টাইপ করা লেখায় পরিবর্তন করতে চাইলে অর্থাৎ ওয়ার্ড ফাইল করতে চাইলে আপনি প্লে-স্টোর থেকে Puthi নামক এ্যাপটি ডাউনলোড করে বাংলা ও ইংরেজি দুই ধরনেরই টাইপ করা লেখায় রুপান্তর করতে পারবেন অর্থাৎ OCR করতে পারবেন। এক্ষেত্রেও আপনাকে CamScanner এর মতো করে লেখা কাগজের ছবি তুলে এই এ্যাপটি দিয়ে OCR করতে হবে।
ভার্চুয়াল আদালতের যাবতীয় কাজে প্রিন্টারের ব্যবহার কোনো ক্রমেই বাড়ছে না বরং পূর্বের সাধারণ আদালতের কার্যক্রমের সমানই যেহেতু প্রিন্ট করে স্বাক্ষর ও কোর্ট ফি লাগাতে হবে।
তাছাড়া স্মার্টফোন থেকেও প্রিন্টারের সংযোগে আপনারা বিভিন্ন ফরম্যাটে প্রিন্ট দিতে পারবেন। ইতোমধ্যে সুপ্রীম কোর্টের বেশ কয়েকজন বিজ্ঞ আইনজীবী শুধু স্মার্টফোন ব্যবহার করে ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রমে সফলভাবে অংশগ্রহণ করেছেন।
আসলে সামগ্রিকভাবে ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রমে পূর্বের তুলনায় জটিলতা কম। আইনজীবীরা ঘরে বসেই এই আদালতে অংশগ্রহণ করতে পারছেন এরচেয়ে বড় সুবিধা আর কি হতে পারে। আর সবচেয়ে বড় কথা হল এই দুর্যোগের সময় সবার নিরাপত্তাটা জরুরী। সে দিক থেকেওতো ভার্চুয়াল আদালত সম্পর্কে অন্তত এই মহামারিকালীন কোনো প্রশ্ন থাকার কথা নয়। এই কার্যক্রম দালাল ও টাউটদের দৌরাত্ম্যও রুখে দিবে আশা করি। বিজ্ঞ আইনজীবী, বিজ্ঞ বিচারক ও বিচারপ্রার্থী সকলের সার্বিক মঙ্গলার্থে এরচেয়ে ভালো একটি উপায় আর হতে পারে না।
আসুন শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা না করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও বিচার বিভাগের এই কালজয়ী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই, দেশকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করি। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বিচার বিভাগকে সামিল করি।
লেখক- সহকারী জজ, শরীয়তপুর।