মঈদুল ইসলাম:
ইদানিং অনেকের লেখায় দেখছি ‘বিজ্ঞ কৌশুলি’, কেউ আবার লিখছেন ‘বিজ্ঞ কৌশুলী’। যখন কোন বিচারকের বা অ্যাডভোকেটের লেখায়ও এমন দেখি তখন দুঃখের আর অবধি থাকে না। বিচারক ও অ্যাডভোকেট পরস্পর পরস্পরকে, এমনকি বিচারকে বিচারকে, অ্যাডভোকেটে অ্যাডভোকেটে সম্বোধনের আগে ‘বিজ্ঞ’ শব্দ প্রয়োগ করা আদালতি শিষ্টাচার মাত্র তো নয়, তাঁদের প্রকৃতপক্ষেই বিজ্ঞ হবার কথা।
‘কৌশুলি’ বা ‘কৌশুলী’ কোনটাই শুদ্ধ নয় এবং কোনটারই অর্থ নেই। ব্যাকরণমতে এদু’টি তাই শব্দও নয়। অর্থহীন আওয়াজ বা আঁকিবুকি মাত্র। যদি কৌশল প্রয়োগকারী অর্থে হয় তাহলে হতে পারত কৌশলী। কিন্তু, অ্যাডভোকেট কোন কৌশল প্রয়োগ করেন কি? এর উত্তর আমি দিচ্ছি না, এক্ষেত্রে আমি কৌশলী। তবে, কোন কৌশল প্রয়োগ করা অ্যডভোকেটের কাজ নয়। তাঁর কাজ আইনের সুপরামর্শ দেয়া তাঁর মক্কেলকে, ঘটনার সাথে আইনের যুক্তিপূর্ণ সঠিক বিশ্লেষণ আদালতে তুলে ধরে সঠিক বিচারে সহায়তা করা।
বৃটিশ আমলে এ কাজে ছিলেন ব্যারিস্টার, অ্যাটর্নি, অ্যাডভোকেট, উকিল, মোক্তার। তাঁদের প্রত্যেককে আদালতে ইংরেজি অভিধায় বলা হত ‘Counsel’। পাকিস্তান আমলে ছিল অ্যাডভোকেট আর মোক্তার। বাংলাদেশে এখন শুধুই অ্যাডভোকেট। ওকালতিটা রয়ে গেছে, উকিল চলে গেছে আদালত ছেড়ে অন্যের বিবাহকর্মে, যেমন কাজিও গেছে সেইকর্মে বিচারকর্ম ছেড়ে। দুজনেই এখন টিকে আছে নিকাহ্ রেজিস্ট্রারের দপ্তরে। অ্যাটর্নি খাস সরকারের। আর মোক্তার টিকে আছে আমমোক্তার হয়ে।
সেই ইংরেজি অভিধা ‘Counsel’ বাংলায় হয়েছে ‘কৌঁসুলি’। যেমন ইংরেজি ‘Table’ (টেইবল/টেবল) বাংলায় হয়েছে ’টেবিল’। না দেখে লেখা ও ভুল দেখে লেখার কারণে ভুল হয়। হাতের কাছে অভিধান রাখলে আর প্রয়োজনের সময় দেখে নিলে অনেক ভুল এড়ান যায়।
লেখক: সাবেক সিনিয়র জেলা জজ ও দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল)।
(অনুমতিক্রমে লেখকের ফেইসবুক আইডি থেকে সংগ্রহ)