তামান্না ফেরদৌস :
আজকের প্রজ্ঞাপনের পরে অন্য সকল সরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সাথে সাধারন ছুটি শেষে সীমিত পরিসরে হয়ত খুলতে যাচ্ছে আমাদের প্রিয় আইনাঙ্গন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট (এখনও নির্দেশনা আসেনি)। মহামান্য প্রধান বিচারপতি ফুল কোর্ট মিটিং থেকেই হয়ত ঠিক করবেন সকল কর্ম পরিকল্পনা, তৈরি হবে কজলিস্ট এবং এটা জেনে সকল আইনজীবীদের স্বাভাবিকভাবেই খুব আনন্দিত হবার কথা ছিল যে, এতদিন পরে ফিরে যাব সেই চিরচেনা অঙ্গনে দেখা হবে সব প্রিয় মুখের সাথে, কিন্তু কোভিড-১৯ আমাদের সেই শুভক্ষণকে আনন্দের বদলে আশঙ্কায় ভরিয়ে তুলেছে, অদেখা শত্রু আমাদের করে রেখেছে উদ্বিগ্ন।
প্রয়োজনে অনেক সিদ্ধান্তই সরকার ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিতে হয় এবং সময় অনুসারে গত ক’মাস ধরে সমগ্র পৃথিবীর সাথে আমাদের দেশেও চলছে তারই ধারাবাহিকতা। এমন পরিস্থিতিতে জীবন ও জীবীকা উভয় চিন্তা মাথায় রেখেই কোর্ট চলাকালীন সময়ে আইনাঙ্গনে আগত আইনজীবী সহ সকলের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃপক্ষের সাথে সাথে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতিরও নেয়া উচিত যথোপযুক্ত ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ চাইলে সামাজিক দূরত্বের প্রয়োজনে-
- মোশন কোর্টের সংখ্যা বাড়াতে পারে;
- মেনশন স্লিপ জমা দিতে একই সময়ে আইনজীবীরা একত্রিত হয়ে লাইনে দাঁড়ানোর বদলে আগে থেকেই কোর্টে বেঞ্চ অফিসারের কাছে জমা দিতে পারে;
- সকল মামলা এক্সটেনশনের ক্ষেত্রে মেনশন স্লিপ অনুসারে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর উপস্থিতি ব্যতিরেকে মহামান্য বিচারপতিগণ নিজেরাই পদক্ষেপ নিতে পারেন;
- কজলিস্ট প্রকাশের সময় একদিনে সব মামলা উল্লেখ না করে সীমিত আকারে লিস্ট প্রকাশ হতে পারে, প্রয়োজনে মামলার সময় উল্লেখ করা যেতে পারে;
- বয়স্ক আইনজীবী বা অন্য কোনো আইনজীবীর মামলায় তার উপস্থিতিহীনতার কারণে ডিডি করা হতে আপাতত বিরত থাকা যেতে পারে;
- কোর্টের কার্য সময় কমিয়ে দুপুরের নামাজ ও আহারের বিরতি আপাতত বাতিল রেখে একটানা বেলা ২টা বা ৩টা পর্যন্ত রাখলে আইনজীবীগন তাদের কাজ শেষ করে দুপুরের নামাজ ও খাবারের জন্য কোর্টে এক জায়গায় জমায়েত না হয়ে যার যার বাসায় ফিরে গিয়েই এ কাজগুলো সারতে পারবে;
- একই সময়ে কোর্টে নির্দিষ্ট সংখ্যক আইনজীবী ব্যতিত কোর্ট রুমে অন্যদের উপস্থিতিতে নিরুৎসাহিত করতে পারে;
- আইনজীবী সমিতির ২টা বা ৩টা গেট খোলা রেখে অন্য সকল গেট আপাতত বন্ধ রাখা যেতে পারে;
- প্রতিটি গেটে পর্যাপ্ত সেনিটাইজার, সাবান ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে;
- কোর্টের ও বারের বাথরুমগুলো পরিচ্ছন্ন রাখার প্রয়োজনে সার্বক্ষনিক মনিটরিং ব্যাবস্থা রাখা;
- বারের হলরুম ও কমন রুমের চেয়ারের সংখ্যা কমিয়ে দূরত্ব রেখে চেয়ার বসাতে পারে, দর্শনার্থী ও জুনিয়রদের জন্য প্রয়োজনে আপাতত সমিতির বারান্দায় চেয়ার দিতে পারে;
- ক্লায়েন্ট-আইনজীবী সাক্ষাত, আইনজীবীদের নিজস্ব বৈকালিক চেম্বারেই সারা যেতে পারে;
- লাউঞ্জ, ক্যান্টিন, ফুডকোর্ট, কফি ও চায়ের দোকানগুলোর নিয়ম মেনে খোলা রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে;
- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারের পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত বারের অভ্যন্তরে সকল প্রকার সভা সমাবেশ ও যে কোন ধরনের জমায়েত বন্ধ রাখা;
- আক্রান্ত আইনজীবীদের চিকিৎসার জন্য কোনো একটি হাসপাতালের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়া যাতে করে আইনজীবীগণ চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার হতে বঞ্চিত না হয়;
- এই সকল কাজ পর্যবেক্ষণের জন্য বারের পক্ষ থেকে সার্বক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা;
- সর্বোপরি স্বাস্থবিধি মেনে চলার অভ্যাস গড়তে সকলকে উৎসাহিত করা, অব্যাহত রাখা;
জীবন আমাদের একটাই এবং নিঃসন্দেহে সেই জীবনে জীবিকার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। তবে সেই প্রয়োজন কখোনোই জীবনকে ছাড়িয়ে নয়। জীবনের সমাপ্তি জীবনের অন্যসকল আয়োজনকে মুহূর্তেই মূল্যহীন করে তোলে। তাই নিজ জীবনের প্রয়োজনে পরিবারের স্বার্থে সকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হবার বিকল্প এই সময়ে সমগ্র পৃথিবীতে আর কিছু নেই। সবাই নিরাপদে থাকুন।
তামান্না ফেরদৌস: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল।