ড. মো. রাশেদ হোসাইন :
দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যক্রমে আইন বিষয়ে কোনো শিক্ষা কার্যক্রম না থাকলেও উচ্চ শিক্ষার অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আইন পড়ার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে সরকারি, বেসরকারি এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রায় ৭৩ টি ল’ কলেজে আইন বিষয়ে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। স্বাধীনতাপূর্ব শুধু ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে ২ বছরের এলএল.বি (পাশ) কোর্স চালু থাকলেও স্বাধীনতা উত্তর ১৯৭৩ সালে সর্বপ্রথম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১৯৮০ সালে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া এবং ১৯৯২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে এলএল.বি (অনার্স) কোর্স চালু হয়।
বর্তমানে প্রায় ১৬ টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১০৫ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কমবেশি প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে ৪ বছরের এলএল.বি (অনার্স) ডিগ্রি লাভের সুযোগ রয়েছে। এদিকে গেল বছর ডিসেম্বরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি স্বতন্ত্র আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়ায় পার্শ্ববর্তী দেশ সমূহের মত বাংলাদেশেও আইন শিক্ষার এক নতুন অধ্যায়ের দিক উন্মোচিত হয়। আর আইন শিক্ষার যোগ্যতা হিসেবে ল’ কলেজের ২ বছরের এলএল.বি (পাশ) কোর্সে ভর্তিচ্ছুকের স্নাতক (পাশ) অথবা স্নাতক (অনার্স) ডিগ্রি থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ বছরের এলএল.বি (অনার্স) কোর্সে ভর্র্তির ক্ষেত্রে শুধু উচ্চ মাধ্যমিক পাশ হলেই চলে।
আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০ এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক প্রণীত ‘বিশেষ প্রাকটিস নির্দেশনা’ মোতাবেক এ বছর ১১ মে হতে দেশের সব আদালতে ই-জুডিশিয়ারির অংশ হিসেবে ভার্চুয়াল কোর্টের পথচলা শুরু হলে আইন বিষয়ে কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব অনেকগুণ বেড়ে যায়। আইন বিষয়টি প্রফেশনাল ডিগ্রি হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হতে প্রায়োগিক জ্ঞান সম্পন্ন ল’ গ্রাজুয়েট বের হওয়া অত্যন্ত জরুরী। তাছাড়া তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে আইন আদালতে প্রযুক্তি বিষয়ে জ্ঞানসহ অন্যান্য ব্যবহারিক জ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ বিচারক ও আইনজীবী ব্যতীত বিচার ব্যবস্থার কাঙ্খিত উন্নয়ন প্রায় অসম্ভব মনে হয়।
ইতোমধ্যে বিচার ব্যবস্থায় তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হওয়ায় ল’ গ্রাজুয়েটদের কম্পিউটার প্রযুক্তি বিষয়ে জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি ল’ কলেজগুলো সেই চাহিদা কতটুকু পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে বা হয়েছে কিংবা ভবিষৎে হবে বা বিশ্বায়নের যুগে সময়ের চাহিদা মোতাবেক তারা ল’ গ্রাজুয়েট তৈরী করতে পারছে কিনা বা ল’ কলেজগুলোতে বর্তমান শিক্ষা কার্যক্রম কী পদ্ধতিতে চলছে? বর্তমানে প্রায় সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে আইন শিক্ষার সহায়ক শিক্ষা হিসেবে কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ২০১৬ সালে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৪ বছরের এলএল.বি (অনার্স) কোর্সের সমন্বিত একটি মডেল পাঠ্যক্রম প্রস্তুত করেছিলেন। উক্ত পাঠ্যক্রমে মিডিয়া ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন নামে একটি বিষয় থাকলেও সহায়ক শিক্ষার অংশ হিসেবে কম্পিউটার শিক্ষা অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। যদিও কমিশন কর্তৃক প্রস্তুতকৃত মডেল পাঠ্যক্রমটি এখনো সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিতভাবে চালু হয়নি, তথাপি সারা বিশ্বে তথ্য-প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নয়নের কারণসহ বিচার ব্যবস্থায় ই-জুডিশিয়ারি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আইন শিক্ষায় মূল ও পদ্ধতিগত আইনের পাশাপাশি সহায়ক শিক্ষা হিসেবে কম্পিউটার শিক্ষার মৌলিক বিষয়সমূহ মডেল পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত করা জরুরি মনে হয়।
আবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন শিক্ষায় একটি নির্দিষ্ট মান বজায় রাখা সম্ভব হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ল’ কলেজগুলোতে মানসম্পন্ন ছাত্র ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে যুগোপযোগি পাঠ্যক্রম তৈরি ও শ্রেণি কক্ষে আধুনিক পাঠদানসহ এর অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়গুলো নিয়ে এখনই ভাববার সময় এসেছে। অন্যথায় আইন আদালতে চালু হওয়া ই-জুডিশিয়ারির সফলতা ভোগ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ল’ কলেজগুলোতে মোট দুই পর্বে ২ বছরের এলএল.বি (পাশ) কোর্সের ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এই দুই পর্বের আইন শিক্ষায় একজন ছাত্রকে মোট ১৫টি বিষয় পড়তে হয় যার মধ্যে প্রিলিমিনারি পর্বে ৭টি ও শেষ পর্বে ৮টি বিষয় রয়েছে। প্রিলিমিনারি পর্বে জুরিসপ্রুডেন্স, চুক্তি ও টর্ট আইন, মুসলিম আইন, ইকুইটি, ট্রাস্ট, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার ও হিন্দু আইন, বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড ও আমেরিকার সাংবিধানিক আইন, বাংলাদেশের শ্রম আইন, কর আইন এবং শেষ পর্বে সম্পত্তি হস্তান্তর ও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি আইন, দেওয়ানি পদ্ধতিগত আইন ও তামাদি আইন, অপরাধ আইন ও ফৌজদারি পদ্ধতিগত আইন, সাক্ষ্য আইন, আন্তর্জাতিক আইন, বাংলাদেশের কোম্পানি ও ব্যবসা আইন, ভূমি, রেজিস্ট্রেশন ও সরকারি দাবি আইন, আইনগত খসড়া ও পেশাগত নীতিতত্ত্ব আইন বিষয়গুলো পড়ানো হয়। এখানে দেখা যায় ল’ কলেজের পাঠ্যক্রমে কম্পিউটার শিক্ষার কোনো ব্যবস্থায় নেই যা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এক্ষেত্রে আইন শিক্ষার সহায়ক শিক্ষা হিসেবে কম্পিউটার শিক্ষা না থাকায় শিক্ষার্থীদের কম্পিউটারের মৌলিক জ্ঞান অর্জনেরও কোনো সুযোগ নেই।
এছাড়াও এই বিশ্বায়নের যুগে এবং মুক্ত বাজার অর্থনীতির বিকাশে সময়ের প্রয়োজনীয়তায় নতুন নতুন বিষয়ের আবির্ভাব হওয়ায় যথা- পরিবেশদূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশগত ন্যায়বিচার, বহুজাতিক কোম্পানির ব্যবসায়িক উন্নয়ন, বিশ্ব বাণিজ্যের প্রসার, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন প্রভৃতিসহ অন্যান্য মানবিক মূল্যবোধ বিষয়ে সহায়ক শিক্ষার সুযোগ না থাকায় আইন শিক্ষা প্রকৃতপক্ষে কতটুকু পূর্ণতা লাভ করে সেটিও এখন ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেখানে ৪ বছরের এলএল.বি (অনার্স) কোর্সে কম্পিউটার শিক্ষাসহ ৩০টির অধিক বিষয়ে পড়ানো হয় সেখানে ল’ কলেজগুলোতে কম্পিউটার শিক্ষা ছাড়া শুধু ১৫টি আইন বিষয়ের শিক্ষা ই-জুডিশিয়ারি বাস্তবায়নসহ কতটুকু মানবিক গুণ সম্পন্ন দক্ষ ল’ গ্রাজুয়েট তৈরি করবে সে বিষয়টিও প্রশ্নসাপেক্ষ। আবার সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহায়ক শিক্ষা হিসেবে তত্ত্বীয় কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও পর্যাপ্ত কম্পিউটার ল্যাবের অভাবে এ বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা অনেকাংশেই অবহেলিত থেকে যায়। তেমনি যেখানে ল’ কলেজের পাঠ্যক্রমে কম্পিউটার শিক্ষারই ব্যবস্থা নেই সেখানে কম্পিউটার ল্যাবের চিন্তা করা দিবা স্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়। অথচ সারা দেশের আদালতগুলোতে আইন পেশায় নিয়োজিত বিজ্ঞ আইনজীবীগণের একটা বড় অংশ এসব ল’ কলেজগুলো সরবরাহ করে থাকে। সেই ল’ কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা এভাবে ঢিমেতালে চললে এবং শুধু সনদ নির্ভর হলে ই-জুডিশিয়ারি বাস্তবায়ন অরণ্যে রোদন ছাড়া আর কিছুই নয় মনে করি।
আবার একটি বিষয় লক্ষ করলে দেখা যায় ল’ কলেজের লেখাপড়া লুকোচুরি খেলার মতো চলছে। অনেকে হয়তো জানেনই না যে তার জেলায় ল’ কলেজ রয়েছে বা সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে সুপ্রীম কোর্ট বা অধস্তন আদালতের আইনজীবী বা বিচারক হওয়া যায়! জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত জেলা বা থানা পর্যায়ের অন্যান্য কলেজগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন চোখে পড়লেও ল’ কলেজগুলোর অবকাঠামো মোটেও চোখে পড়ে না। অধিকাংশ ল’ কলেজের নিজস্ব ভবন নেই, স্থায়ী কোনো শিক্ষক নেই, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি নেই এবং পর্যাপ্ত স্টাফ নেই। অনেকেই ভাড়া করা জীর্ণ-শীর্ণ ভবনে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কিছু আইনজীবীর মাধ্যমে শিক্ষা কাযক্রর্ম পরিচালনা করে আসছে। এসব কলেজে ক্লাস ও পরীক্ষা শুধু সাপ্তাহিক বন্ধের দিন অনুষ্ঠিত হওয়ায় যে পরিমান ক্লাস হওয়ার কথা সে পরিমান ক্লাস হয় না যা শিক্ষার মানের উপর মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলে।
অপরদিকে আইন শিক্ষার যথাযথ মান ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় উচ্চ আদালতকেও হস্তক্ষেপ করতে দেখা গেছে। দারুল এহসান বিশ্ববিদ্যালয় মামলায় মহামান্য আপীল বিভাগ রায়ের মাধ্যমে ল’ কলেজগুলোতে ২০২০ সাল থেকে ২ বছরের এলএল.বি (পাশ) কোর্স বন্ধ করে ৪ বছরের এলএল.বি (অনার্স) কোর্স চালুসহ কলেজগুলোতে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নের নির্দেশনা দিয়েছেন। শোনা যায়, তৎপরবর্তীতে ল’ কলেজগুলোতে শিক্ষক হিসেবে স্থায়ী নিয়োগ পাওয়ার আশায় অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থী পূর্ব হতেই বিভিন্ন মাধ্যমে লগ্নি করে রেখেছে। এ বিষয়ে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই বিশেষ নজর রাখা উচিত। আরেকটি মজার বিষয় এখানে উল্লেখ না করলেই নয়, যে প্রতিষ্ঠান হতে আইন পেশায় সবচেয়ে বেশি নিয়োজিত রয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানের (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়) ওয়েব সাইট www.nu.ac.bd-এ বিভিন্ন ডিগ্রি বিষয়ে পাঠ্যক্রমসহ অন্যান্য তথ্য থাকলেও অত্যন্ত দূঃখজনক যে ল’ কলেজ হতে প্রদত্ত এলএল.বি (পাশ) কোর্সের কোনো তথ্য বা পাঠ্যক্রম পাওয়া যায় না। এমনকি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নেরও কোনো পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত উক্ত ওয়েব সাইটে চোখে পড়ে না।
গত ৪ জুন প্রকাশিত ২০১৮ সালের এলএল.বি শেষ পর্ব পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায় মোট ৮,৭৯২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭,৬৯৭ জন পাশ করেছে যার মধ্যে ৫,০৩৯ জন ২য় শ্রেণি এবং ২,৬৫৯ জন ৩য় শ্রেণি প্রাপ্ত হয়। এ পরিসংখ্যান হতে স্পষ্ঠভাবে প্রতীয়মান হয় যে প্রতি বছর এসব ল’ কলেজ হতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী আইন পেশায় যুক্ত হন। ল’ কলেজের কিছু খাতা পরীক্ষণের সুযোগ হওয়ায় যা বুঝেছি বর্তমান অবস্থায় আইন শিক্ষা এগিয়ে গেলে আইন পেশার যতটুকু সুনাম অক্ষুন্ন রয়েছে সেটিও আর অবশিষ্ট থাকবে না। তবে এ বিষয়টিও মনে রাখা দরকার যে, স্বাধীনতা উত্তর বা তার পূর্বে প্রতিষ্ঠিত কিছু ল’ কলেজ হতে অনেক প্রথিতযশা আইনজীবী, বিচারক অত্যন্ত সুনামের সাথে তাঁদের পেশা পরিচালনা করেছেন বা এখনো করছেন। তাঁদের মধ্যে থেকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ উচ্চ আদালতের বিচারপতি এবং এমনকি রাষ্ট্র প্রধানের দায়িত্বও পালন করেছেন বা এখনো করছেন। সেসময় আইন কলেজগুলোর শিক্ষার মান ছিল প্রশ্নাতীত। কেননা সুনামধন্য ব্যারিস্টারসহ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত শিক্ষকমণ্ডলী ও খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবীগণ ল’ কলেজগুলোতে পাঠদান করতেন। বলা যায় ল’ কলেজের সেই সোনালী অতীত গত হয়েছে বেশ আগেই।
অপরদিকে সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনা সত্তে¡ও এখনো কিছু কিছু ল’ কলেজ যেমন সিলেট ল’ কলেজ ২০২০-২০২১ সেশনে ২ বছরের এলএল.বি (পাশ) কোর্সের ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে প্রতারণামূলকভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে যা অবশ্যই উদ্বেগজনক। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া জরুরি।
পরিশেষে, ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়ন এবং বিচারপ্রার্থীর অল্প খরচে দ্রুত সুবিচার নিশ্চিতকল্পে ই-জুডিশিয়ারির গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। সে লক্ষ্যে প্রচলিত আইন শিক্ষার সহায়ক শিক্ষা হিসেবে শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগি কম্পিউটার শিক্ষা প্রদান করা খুবই জরুরি। ই-জুডিশিয়ারি বান্ধব আইন শিক্ষার উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু কম্পিউটার বিষয়ে তত্ত্বীয় জ্ঞান দেওয়াই যথেষ্ট হবে না, শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক জ্ঞানও দিতে হবে। এজন্য পর্যাপ্ত কম্পিউটার সম্বলিত অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক।
অপরদিকে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে পর্যায়ক্রমে আইন বিষয় চালুর পাশাপাশি প্রতি বছর সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হতে যে পরিমান ল’ গ্রাজুয়েট বের হচ্ছে, সেই বিষয়টি বিবেচনায় বহুমাত্রিক সমস্যায় জর্জড়িত ও রুগ্ন প্রায় ল’ কলেজগুলোর প্রয়োজনীয়তা বর্তমানে কতটুকু রয়েছে তা হয়তো ভেবে দেখার সময় এসেছে। আর সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ল’ কলেজগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে বিচার ব্যবস্থার সর্বস্তরে ই-জুডিশিয়ারির সফল বাস্তবায়নে ল’ কলেজগুলোর অন্যান্য সমস্যার কার্যকর সমাধানপূর্বক আইন শিক্ষার পাশাপাশি সহায়ক শিক্ষা হিসেবে কম্পিউটার বিষয়ে পর্যাপ্ত তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক জ্ঞান প্রদানের উদ্দেশে যুগোপযোগি ও আধুনিক পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা উচিত।
এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সদাশয় সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
ড. মো. রাশেদ হোসাইন : সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ময়মনসিংহ।