বিভিন্ন অভিযোগে তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের শিশুসহ ভার্চ্যুয়াল কোর্টের মাধ্যমে ৫৩৬ শিশু জামিন পেয়েছে। আর জামিনপ্রাপ্ত ৪৭১ শিশুকে ইতিমধ্যে তাদের অভিভাবকদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৩২ শিশুকে অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
আজ শনিবার (২০ জুন) সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
সাইফুর রহমান বলেন, ‘১৮ জুন পর্যন্ত ২৫ কার্যদিবসে ভার্চ্যুয়াল আদালত থেকে ৫৩৬ শিশু জামিন পেয়েছে। জামিনপ্রাপ্ত তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ৪৭১ শিশুকে ইতিমধ্যে তাদের অভিভাবকদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপর ৬৫ শিশুর মধ্যে ৩২ শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের এবং বাকি ৩৩ শিশু কেন্দ্রের বাইরের। কেন্দ্রের বাইরের এসব শিশু সরাসরি আদালত থেকে জামিন পেয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটি চলাকালে গত ৯ মে আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারসংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। ফলে অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনার সুযোগ তৈরি হয়। এর ধারাবাহিকতায় ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে শিশুদের জামিন বিষয়ে গত ১২ মে থেকে কার্যক্রম শুরু হয়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তর তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র পরিচালনা করে আসছে। কেন্দ্র তিনটি হচ্ছে গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক), গাজীপুরের কোনাবাড়ী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র (বালিকা) এবং যশোরের পুলেরহাটের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক)।
এর আগে, আইনের সংঘাতে জড়িত শিশুদের জামিনের বিষয়ে গত ১২ মে থেকে শুনানি শুরু হয়। ১৮ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযোগে কেন্দ্রে থাকা ৫০৩ শিশু জামিন পেয়েছে। ৪৭১ শিশুকে ইতিমধ্যে তাদের অভিভাবকদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইউনিসেফ এ বিষয়ে সক্রিয় সহায়তা দিচ্ছে। বাকি ৩২ শিশুকে অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ভার্চ্যুয়াল কোর্টের (শিশু আদালত) মাধ্যমে গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) থাকা ২৮২ শিশু, গাজীপুরের কোনাবাড়ী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র (বালিকা) থেকে ৪১ শিশু এবং যশোরের পুলেরহাটের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) থাকা ১৮০ শিশু জামিন পেয়েছে। টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে জামিনপ্রাপ্ত ২৬৫ শিশুকে তাদের অভিভাবকদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই কেন্দ্রে থাকা জামিনপ্রাপ্ত বাকি ১৭ শিশুর মধ্যে ৯ শিশুকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে এবং অপর ৮ শিশুকে তাদের অভিভাবক এসে নিয়ে যাবেন।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, কোনাবাড়ী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালিকা) জামিনপ্রাপ্ত ৪১ শিশুর মধ্যে ৩৮ শিশুকে তাদের অভিভাবকের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি তিন শিশুর মধ্যে জামিনপ্রাপ্ত দুই শিশুকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে এবং অপর শিশুটির অভিভাবক এসে তাকে নিয়ে যাবে। আর যশোরের পুলেরহাটের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালক) জামিনপ্রাপ্ত ১৮০ শিশুর মধ্যে ১৬৮ শিশুকে তাদের অভিভাবকের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ১২ শিশুর মধ্যে ছয় শিশুকে তাদের অভিভাবকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে এবং এক শিশুর অভিভাবক এসে তাদের নিয়ে যাবে। আর বাকি পাঁচ শিশুর পরিচয় অজ্ঞাত থাকায় তাদের বরিশালে অবস্থিত শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানোর কার্যক্রম চলছে। কেননা, এই পাঁচ শিশু বরিশালের আদালত থেকে জামিন পেয়েছিল। জামিনপ্রাপ্ত শিশু বাদ দিয়ে বর্তমানে কেন্দ্র তিনটিতে ৮৮১ শিশু রয়েছে, যার মধ্যে টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৫৩৭ শিশু, গাজীপুরের কোনাবাড়ী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৯৪ এবং যশোরের পুলেরহাটের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ২৫০ শিশু রয়েছে।