মোঃ ইমরান হোসাইন রুমেল:
গুরু নির্ভর পেশা ওকালতি, কে না জানে। আমরা জাতির ক্রান্তি লগ্নে যে সেবা প্রদান করি তার পথ প্রদর্শন করেন আমাদের অগ্রজ প্রবীন আইনজীবীগণ। সরকার একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার, আর্মি অফিসার, ভাল প্রকৌশলী তৈরীতে যে পরিমাণ অর্থ খরচ করেন তার কোন অংশ একজন প্রবীন আইনজীবী তৈরীতে খরচ করেন না, কিন্তু তিনি যখন প্রবীন হয়ে দক্ষ আইনজীবী হন তখন তাকে সবার চেয়ে বেশি সম্মানী দিয়ে সরকার তার পরামর্শ নেন, আর যারা ব্যক্তিগত চর্চা চালিয়ে যান তারা পুরো জাতির কল্যাণে নিজের বিবেককে সজাগ রাখেন। কতটা ত্যাগ স্বীকার করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজেরা প্রবীন আইনজীবী হিসেবে নিজেদেরকে শেষ সময় পর্যন্ত আইনী সেবায় নিবেদিত থাকেন।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় আপাতত আমাদের প্রবীন আইনজীবীদের রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রক্ষায় তাদের জীবনের নিরাপত্তা প্রদানের জন্যই এমন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি আমাদের দ্বারা যেন না হয়, যেখানে সিনিয়র আইনজীবীগন জীবন বিপন্ন করতে বাধ্য হন। সারা দেশে আইনাঙ্গনের তিন শতাধিক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে দুই শতাধিক আইনজীবী। এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে মারা গেছেন আট আইনজীবী। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন তিন আইনজীবী। এছাড়াও আক্রান্তের তালিকায় ২৬ বিচারক ও ৯৭ জন আদালতের কর্মচারী রয়েছেন। করোনার উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে আছেন আরও ছয়জন বিচারক।
ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, গত ২৪ মে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য সাবেক এমপি হাজী মকবুল হোসেন, ২৬ মে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শওকত হোসেন অপু, ৩ জুন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আবু জাফর মো. মহিউদ্দিন, ১১ জুন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আহমেদ, ১৩ জুন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, ১৩ জুন রাতে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, ১৯ জুন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ নাসির উদ্দিন আহমেদ এবং ২০ জুন সিলেট বারের অ্যাডভোকেট আবু সাঈদ আবদুল্লাহ চৌধুরী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আর করোনার উপসর্গ নিয়ে ২৮ মে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম চৌধুরী, ৩১ মে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মো. ফজলুল করিম এবং ১৩ জুন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবদুল হাই মণ্ডল মারা যান। এমন রিপোর্ট ও প্রতিদিন বার সমিতির এস এম এস এ মৃত্যুর সংবাদ আমাদেরকে ভয়াবহ পরিনতির রূপ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
বিচারের স্বার্থে স্বল্প পরিসরে শুরু হওয়া ভার্চুয়াল ধীরে ধীরে বৃহৎ পরিসরের দাবী যৌক্তিক কিন্তু সারা দেশের করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় সবাই বুঝেছি যে সব কিছুর গতি বাড়িয়ে দিয়ে আজ করোনার উপসর্গ সর্বত্র। আইনজীবী নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করলে হয়তো বা শেষ পর্যন্ত মনে মনে স্বীকার করেন ভার্চুয়াল এর উপকারিতা। বৃহৎ পরিসরে সকল আদালত চললে, আর নবীনগন যদি প্রবীনদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন তবে আমাদের সেবা দান গতিশীল হবে। আমাদের আবেগকে নয় বিবেককে কাজে লাগানোর সময় এখন।
সারা দেশের সমিতিগুলো প্রযুক্তি ব্যবহার করে আইনজীবীদের যেন আদালতে আসতে না হয় তার জন্য সরকারে ওকালতনামা জেলখানা থেকে সরাসরি আইনজীবীর ইমেইলে পাঠানোর অনুরোধ করতে পারে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে বারের সিল মারার ব্যবস্থা করলে আপাতত আইনজীবীরা হতাশা হতে বের হয়ে আসতে পারবে। প্রবীনদের ছাড়া আমাদের কোর্ট সিস্টেমে অধিকতর সঠিক বিচার পাওয়ার সুযোগ কম তাই সকল আইনজীবীর বিবেক তাড়িত হয়ে কথা বলার সময় এসেছে। মুক্তির জন্য বুদ্ধি বিবেক দিয়ে জ্ঞানীরা চিন্তা করুন এই প্রত্যাশা আমাদের সবার কাছে।
লেখক: অ্যাডভোকেট; সুপ্রীম কোর্ট, বাংলাদেশ।