নতুন করে দেশের বিচার বিভাগ ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের মাধ্যমে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় দেশের দেড় হাজার আদালত কক্ষকে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল এজলাসে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মামলা দায়ের থেকে শুরু করে আদেশ বা রায়ের অনুলিপি সবই মিলবে অনলাইনে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিচার বিভাগ ডিজিটাল হলে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমার সঙ্গে সাশ্রয় হবে অর্থ। পাশাপাশি দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হলে মামলা জটও কমবে।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এর আগে ২০১৭ সালে ই-জুডিশিয়ারির প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছিল। তবে ওই সময় কিছু ভুল-ত্রুটি থাকায় প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে ফেরত আসে। বর্তমানে আইনমন্ত্রীর নির্দেশে সেটাকে সংশোধন করে আরও যুগোপযোগী করা হয়েছে। শিগগিরই প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
সূত্র আরও জানায়, ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের আওতায় সুপ্রিম কোর্টে সেন্ট্রাল ডাটা সেন্টার স্থাপনের পাশাপাশি ৬৩ জেলায় স্থাপন করা হবে মাইক্রো ডাটা সেন্টার। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের কারিগরি সহায়তায় পাঁচ বছর মেয়াদি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করেছে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই এটি আইন মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) কাছে পাঠানো হবে। এরপর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) যাবে। একনেকে চূড়ান্ত অনুমোদন হলে ই-জুডিশিয়ারি চালু করতে এভিডেন্স অ্যাক্ট সংশোধন করবে আইন মন্ত্রণালয়। এরপরই ই-জুডিশিয়ারির প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
সূত্র জানায়, চলমান করোনাভাইরাস সংকটের সময় সারা দেশে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করতে সম্প্রতি অনলাইন কোর্ট অর্ডিন্যান্স (অধ্যাদেশ) জারি করেন রাষ্ট্রপতি। এই অর্ডিন্যান্স ই-জুডিশিয়ারির একটা অংশ। অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমে উচ্চ আদালতসহ সারা দেশের অধস্তন আদালতে গত ১১ মে থেকে চালু হয়েছে ভার্চুয়াল আদালত।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের কার্যক্রমে ১৮টি বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, আইন ও বিচার বিভাগের ডাটা সেন্টার আপগ্রেডেশন এবং নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার স্থাপন, বিচার ব্যবস্থার সব অফিসের জন্য ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) স্থাপন, বিচার ব্যবস্থার জন্য এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার উন্নয়ন, এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) সফটওয়্যার উন্নয়ন, সুপ্রিম কোর্টের ডাটা সেন্টার আপগ্রেডেশন ও নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার স্থাপন। প্রকল্পের আওতায় আরও রয়েছে বিচারকদের জন্য দুই হাজারের বেশি ল্যাপটপ/ট্যাব সরবরাহ, আগের মামলার নথিপত্র ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ, ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেমের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ এবং ডিজিটাল ইভিডেন্স রেকর্ডিং, বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম স্থাপন, ই-কোর্ট রুম তৈরির জন্য নতুন আইন প্রণয়ন ও প্রচলিত আইনগুলোর প্রয়োজনীয় সংশোধন, বিচার ব্যবস্থার কর্মকর্তাদের ডেস্কটপ কম্পিউটার সরবরাহ এবং বিচার ব্যবস্থা ও মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ প্রদান।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আইন মন্ত্রণালয় ই-জুডিশিয়ারি সংক্রান্ত একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। শিগগিরই এটি একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
বিচার বিভাগ ডিজিটালাইজেশনের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ কমবে। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার ফলে বিচার বিভাগের পাহাড়সম মামলার জট কমবে। সরকারের এ উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।
গত ১১ জুন সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দেশের অধস্তন আদালতগুলোকে আইসিটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনার লক্ষ্যে ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিটি আদালতকে ই-কোর্ট রুমে পরিণত করা হবে। প্রতিটি আদালত এবং বিচারকার্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন দফতর যেমন- থানা, হাসপাতাল, কারাগার এবং সম্পৃক্ত ব্যক্তি যেমন আইনজীবী, তদন্তকারী কর্মকর্তা, সাক্ষী ও আসামি সেন্ট্রাল (কেন্দ্রীয়) নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে বলে মামলা ব্যবস্থাপনা আরও দক্ষ হবে। এতে বিচারপ্রার্থীর সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। বিচারপ্রার্থীরা শিগগিরই এর সুফল ভোগ করতে পারবেন বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। বাংলাদেশ প্রতিদিন