হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসাসেবা না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা নিলে, অস্বাভাবিক খরচ এলে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দায়ের করা সহ ৫টি নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে পৃথক ৫টি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে আসা প্রতিবেদনের বিষয়ে শুনানিতে আজ সোমবার (৬ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বেঞ্চ (ভার্চ্যুয়াল) এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক, অ্যাডভোকেট ইয়াদিয়া জামান, অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল, ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান ও ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন। তাদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. নাজমুল হুদা, মোহাম্মাদ মেহেদী হাসান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
হাইকোর্টের নির্দেশনা সমূহ:
- বিনা চিকিৎসায় রোগী ফেরতের ঘটনায় দায়েরেকৃত রীটের অভিযোগগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন ২১ জুলাইয়ে মধ্যে হাইকোর্টে দাখিল করতে হবে।
- ক্যান্সারসহ জটিল রোগের আক্রান্ত রোগীদের কোভিড থাকলে ৩৬-৪৮ ঘন্টার মধ্যে টেস্ট করে চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে হবে।
- ১০ কার্যদিবসের মধ্যে অক্সিজেনের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
- বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে অস্বাভাবিক মূল্য আসলে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করার নির্দেশনা।
- বিনা চিকিৎসার বিষয়ে অভিযোগ দায়েরের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনলাইনে অভিযোগ গ্রহণের পদ্ধতি চালু।
এর আগে গত ১৫ জুন বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ অধিগ্রহণ ও ‘সেন্ট্রাল বেড ব্যুরো’ স্থাপন, করোনা আক্রান্ত ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ, রোগীদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ না নেয়া এবং সাধারণ রোগীদের ফিরিয়ে দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জসহ ৫টি রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ অভিমতসহ তাৎপর্যপূর্ণ আদেশ দিয়েছিলেন।
আদেশে ১১ দফা নির্দেশনা ও অভিমতসহ নির্দেশনা দেন। ‘ফৌজদারি অপরাধ’র জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতেও বলেছিলেন আদালত।
এর পরদিন ১৬ জুন হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে অনীহা দেখালে এবং এতে ওই রোগীর মৃত্যু ঘটলে ‘তা অবহেলাজনিত মৃত্যু’ অর্থাৎ ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে অভিমত সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে সাতটি আদেশ স্থগিতাদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বারজজ আদালত।
বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে, বিশেষত ঢাকা মহানগর, জেলা, চট্টগ্রাম মহানগর, জেলাসহ বিভাগীয় শহরের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলো যাতে কোভিড ও নন-কোভিড (করোনা সংক্রমিত রোগী নন) সব রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেয়, সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করারও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত সরকারি হাসপাতালগুলোর ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে অধিকতর জবাবদিহিমূলক ও বিস্তৃত করতে হবে। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন কোভিড-১৯ রোগী চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো যাতে মাত্রাতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি আদায় না করতে পারে, সে বিষয়ে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।’
আদেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা প্রদান বিষয়ে গত ১১ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের (স্বাস্থ্য বিভাগ) জারি করা পৃথক নির্দেশনা ও স্মারক উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে বা কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ক্ষেত্রে নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে বা কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রচলিত বিধান অনুসারে লাইসেন্স বাতিলসহ প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে ৩০ জুনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য সচিব (স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ) ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন।
আদালত বলেন, ‘ওই সব নির্দেশনা পালনে ব্যর্থ ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি না, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে হবে।’
অপর নির্দেশনায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের নির্দেশনা বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো যথাযথভাবে পালন করছে কি না, সে বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিন পরপর একটি প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে পাঠাতে বলা হয়। এসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৫ দিন পরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তারই ধারাবাহিকতায় সেটি শুনানি করে আদেশ দেন আদালত।