ছগির আহমেদ টুটুল:
জুডিসিয়ারী পরীক্ষায় আইনের উপর মোট ৬০০ নম্বর থাকে। (১)দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত আইন; (২) আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২; (৩) মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২; (৪) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এবং (৫) হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১ মোট পাঁচটি আইনের উপর ১০০ নম্বর থাকে। এ লেখায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ নিয়ে সকলের বোধগম্য ভাষায় আলোচনা করার চেষ্টা করবো। আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা [ধারা-৩]
এই আইন কার্যকর হবার পরপরই সরকার সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা দুর্নীতি দমন কমিশন নামে একটি কমিশন প্রতিষ্ঠা করবে। এই কমিশন একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন হবে। ইহা একটি স্বশাসিত সংস্হা হবে। কমিশনের স্থায়ী ধারাবাহিকতা এবং একটি সাধারণ সীলমোহর থাকবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন, অধিকার ও হস্তান্তর করার ক্ষমতা থাকবে। কমিশন নিজের নাম ব্যবহার করে মামলা দায়ের করতে পারবে। আবার কমিশনের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা যাবে।
কমিশনের কার্যালয় [ধারা-৪]
দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় ঢাকা থাকবে। কমিশন প্রয়োজনবোধে দেশের যেকোন স্থানে উহার শাখা কার্যালয় স্থাপন করতে পারবে।
দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন [ধারা-৫]
দুর্নীতি দমন কমিশন তিনজন কমিশনারের সমন্বয়ে গঠিত হবে। তাদের মধ্য থেকে একজনকে রাষ্ট্রপতি চেয়ারম্যান নিয়োগ করবেন।
কমিশনারগণের নিয়োগ ও মেয়াদ [ধারা-৬]
কমিশনারগণ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বাছাই কমিটির সুপারিশক্রমে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। এই আইনের ধারা-৭ অনুযায়ী ৫ জন সদস্যর সমন্বয়ে বাছাই কমিটি গঠিত হবে। কমিশনারগণ তাদের যোগদানের তারিখ হতে ৫ বছর মেয়াদ পর্যন্ত নিজ নিজ পদে বহাল থাকবেন। ৫ বছর মেয়াদ অতিবাহিত হবার পর কমিশনারগণ পুনরায় নিয়োগের যোগ্য হবেন না।
বাছাই কমিটি [ধারা-৭]
কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ প্রদানের উদ্দেশ্যে ৫ জন সদস্যর সমন্বয়ে বাছাই কমিটি গঠিত হবে।
(১) প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের একজন বিচারক।
(২) প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক।
(৩) বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক।
(৪) সরকারী কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান।
(৫) অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিবদের মধ্যে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সংযুক্তি: যদি সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে পাওয়া না যায় অথবা বাছাই কমিটির সদস্যপদ গ্রহণ করতে তিনি অসম্মত হন, তাহলে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিবের ঠিক আগের অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব বাছাই কমিটির সদস্য হবেন। যদি উক্তরূপ কোন অবসরপ্রাপ্ত সচিবকে পাওয়া না যায় অথবা বাছাই কমিটির সদস্যপদ গ্রহণ করতে তিনি অসম্মত হন, তাহলে বর্তমানে কর্মরত মন্ত্রিপরিষদ সচিব বাছাই কমিটির সদস্য হবেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ৭(২) ধারায় বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের বিচারক বাছাই কমিটির সভাপতি হবেন। ধারা-৭(৫) -এ বলা হয়েছে, কমপক্ষে চার জন সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম গঠিত হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বাছাই কমিটির কার্য-সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে।
কমিশনারগণের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা [ধারা-৮]
- কমিশনার হবার যোগ্যতা:
এই আইনের ৮(১) ধারাতে বলা হয়েছে, আইনে, শিক্ষায়, প্রশাসনে, বিচারে বা শৃঙ্খলা বাহিনীতে কমপক্ষে ২০ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি কমিশনার হওয়ার যোগ্য হবেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় কোন ব্যক্তির যদি সেনা, বিমান কিংবা নৌবাহিনীতে ২০ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হওয়ার যোগ্য হবেন। তখন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হতে তার আর আইনি কোন বাধা থাকবে না। কারো যদি বিচার বিভাগে ২০ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে তিনিও দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হবার যোগ্যতা অর্জন করবেন।
- কমিশনার হবার অযোগ্যতা:
(১) কোন ব্যক্তি যদি বাংলাদেশের নাগরিক না হন।
(২) কোন ব্যক্তি যদি কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ঋণ খেলাপী হিসেবে ঘোষিত হন।
(৩) কোন ব্যক্তি যদি আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দেউলিয়াত্বের দায় হতে অব্যাহতি লাভ না করেন।
(৪) কোন ব্যক্তি যদি নৈতিক স্খলন বা দুর্নীতিজনিত কোন অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে আদালত কর্তৃক কারাদণ্ডে দন্ডিত হন।
(৫) কোন ব্যক্তি যদি সরকারী চাকুরীতে নিয়োজিত থাকেন।
(৬)কোন ব্যক্তি যদি দৈহিক বা মানসিক বৈকল্যের কারণে কমিশনের দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন।
(৭) কোন ব্যক্তি যদি বিভাগীয় মামলায় গুরুদন্ড প্রাপ্ত হন।
কমিশনারগণের অক্ষমতা [ধারা-৯]
এখানে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনারগণ তাদের দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হবার পর প্রজাতন্ত্রের কাজে কোন লাভজনক পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না।
কমিশনারগণের পদত্যাগ ও অপসারণ [ধারা-১০]
এই আইনের ১০(১) ধারায় বলা হয়েছে, কোন কমিশনার রাষ্ট্রপতি বরাবর এক মাসের লিখিত নোটিশ প্রেরণ করে স্বীয় পদ থেকে পদত্যাগ করতে পারবেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ব্যতীত অন্যান্য পদত্যাগকারী কমিশনারগণ উক্ত নোটিশের একটি অনুলিপি চেয়ারম্যান বরাবর অবগতির জন্য প্রেরণ করবেন। তার মানে অন্যান্য কমিশনাররা পদত্যাগ করতে চাইলে রাষ্ট্রপতিকে লিখিত নোটিশ দেয়ার পাশাপাশি কমিশনের চেয়ারম্যানকেও উক্ত নোটিশের একটি অনুলিপি দিবেন। তাতে করে যেনো দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান উক্ত নোটিশের বিষয়ে অবগত থাকেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সভা [ধারা-১৪]
১৪(২) ধারাতে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের সকল সভা চেয়ারম্যান কর্তৃক নির্ধারিত স্থান ও সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। ১৪(৩) ধারাতে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান সকাল সভায় সভাপতিত্ব করবেন। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত কোন কমিশনার সভায় সভাপতিত্ব করবেন। ১৪(৪) ধারায় বলা হয়েছে, চেয়ারম্যানসহ মোট ২ জন কমিশনারের উপস্থিতিতে সভার কোরাম গঠিত হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সিদ্ধান্ত [ধারা-১৫]
দুর্নীতি দমন কমিশনের সকল সিদ্ধান্ত উহার সভায় গৃহীত হবে। প্রতি তিন মাস পরপর কমিশনের সভায় উহার সিদ্ধান্ত সমূহ মূল্যায়ন করা হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যাবলী [ধারা-১৭]
দুর্নীতি দমন কমিশন নিম্নলিখিত কাজগুলো সম্পন্ন করবে। যথাঃ
(১) দুর্নীতি দমন কমিশনের তফসিলে উল্লিখিত অপরাধ সমূহের অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনা করবে।
(২) অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনার ভিত্তিতে এই আইনের অধীনে মামলা দায়ের ও পরিচালনা করবে।
(৩) দুর্নীতি দমন কমিশন আইন দ্বারা কমিশনকে অর্পিত যেকোন দায়িত্ব পালন করবে।
(৪) দুর্নীতি প্রতিরোধের বিষয়ে গবেষণা পরিকল্পনা তৈরী করবে এবং গবেষণালব্দ ফলাফলের ভিত্তিতে করণীয় সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির নিকট সুপারিশ পেশ করবে।
(৫) দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে সততা ও নিষ্ঠাবোধ সৃষ্টি করবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্যবস্হা গ্রহণ করবে।
(৬) কমিশনের কার্যাবলী ও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এমন সকল বিষয়ের উপর সেমিনার,সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালা ইত্যাদি অনুষ্ঠানের ব্যবস্হা করবে।
অনুসন্ধান বা তদন্তকার্যে কমিশনের বিশেষ ক্ষমতা [ধারা-১৯]
এই আইনের ১৯(২) ধারায় বলা হয়েছে, কমিশন যেকোন ব্যক্তিকে অনুসন্ধান বা তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোন তথ্য সরবরাহ করার জন্য নির্দেশ দিতে পারবে। এক্ষেত্রে নির্দেশিত ব্যক্তি তার হেফাজতে রক্ষিত উক্ত তথ্য সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবেন।
এই আইনের ১৯(৩) ধারায় বলা হয়েছে,কমিশনের নির্দেশ ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ অমান্য করলে তার শাস্তি হবে ৩ বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের কারাদণ্ড অথবা অর্থদন্ড অথবা উভয়দন্ড।
তদন্তের ক্ষমতা [ধারা-২০]
২০(১) ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন ও উহার তফসিলে বর্ণিত অপরাধসমূহ কেবলমাত্র কমিশন কর্তৃক তদন্তযোগ্য হবে। তার মানে দুর্নীতি দমন কমিশন এই আইন এবং উহার তফসিলে বর্ণিত অপরাধসমূহ তদন্ত করবেন। ২০(২) ধারাতে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা উহার অধস্তন কর্মকর্তাকে তদন্তের জন্য ক্ষমতা প্রদান করবে। ২০(৩) ধারাতে বলা হয়েছে, তদন্তের ক্ষমতাপ্রাপ্ত অধস্তন কর্মকর্তা অপরাধ তদন্তের সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ন্যায় ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন, দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনারগণ ও এই আইনের অধীনে কোন অপরাধের তদন্ত করতে পারবেন। এই আইনের ২০(৪) ধারায় এই কথাটি স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।
তদন্তের সময়সীমা [ধারা-২০ক]
এই আইনের ২০ক(১) ধারায় বলা হয়েছে,তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তের ক্ষমতা প্রাপ্তির তারিখ হতে ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করবেন।
২০ক(২) ধারায় বলা হয়েছে, কোন যুক্তিসঙ্গত কারনে ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন না হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য কমিশনের নিকট আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে কমিশন আরো অনধিক ৬০ কর্মদিবস সময়সীমা বৃদ্ধি করতে পারবেন।
২০ক(৩) ধারায় বলা হয়েছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা মোট ১৮০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে উক্ত তদন্ত ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে সমাপ্তির জন্য নতুন আরেকজন তদন্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হবে। আর ব্যর্থ তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অদক্ষতার অভিযোগ এনে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গ্রেফতারের বিশেষ ক্ষমতা [ধারা-২১]
এখানে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি তার নিজ নামে বা অন্য কোন ব্যক্তির নামে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির মালিক বা দখলকার থাকলে যা তার ঘোষিত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। এটা যদি কমিশন হতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তার বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে। তাহলে উক্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের পূর্ব অনুমোদন গ্রহণ করে উক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারবেন।
দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা [ধারা-২৪]
দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনারগণ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন।
সহায় সম্পত্তির ঘোষণা [ধারা-২৬]
২৬(১) ধারাতে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত পরিচালনার পর যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হোন যে কোন ব্যক্তি বৈধ আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পত্তির দখলে আছেন কিংবা মালিকানা অর্জন করেছেন, তাহলে কমিশন লিখিত আদেশ দ্বারা উক্ত ব্যক্তিকে তথ্য দাখিলের নির্দেশ দিবেন।
২৬(২) ধারাতে বলা হয়েছে, উক্ত ব্যক্তি কমিশনের লিখিত আদেশ পেয়ে লিখিত তথ্য দাখিল করতে ব্যর্থ হলে অথবা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দাখিল করলে তার শাস্তি হবে ০৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা অর্থদন্ড অথবা উভয়দন্ড।
জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পত্তির দখল [ধারা-২৭]
কোন ব্যক্তি তার নিজ নামে বা তার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তির নামে এমন কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির দখলে রয়েছেন বা মালিকানা অর্জন করেছেন যা অসাধু উপায়ে অর্জিত হয়েছে। অসাধু উপায়ে অর্জিত সম্পত্তি তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে আদালতের নিকট মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। তিনি উক্তরূপ সম্পত্তির দখল সম্পর্কে আদালতের নিকট সন্তোষজনক ব্যাখ্যা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়। এক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ১০ বছর এবং অন্যূন ৩ বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদে কারাদন্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবেন। পাশাপাশি উক্তরূপ সম্পত্তিসমূহ বাজেয়াপ্ত যোগ্য হবে।
অপরাধের বিচার [ধারা-২৮]
এই আইনের অধীন ও উহার তফসিলে বর্ণিত অপরাধসমূহ কেবলমাত্র স্পেশাল জজ কর্তৃক বিচারযোগ্য হবে।
- স্পেশাল জজ [Special Judges]
The Criminal Law(Amendment) Act,1958 এর ৩ ধারা অনুযায়ী দায়রা আদালতের বিচারকগণ স্পেশাল জজ হিসেবে নিয়োগ পাবে। আমরা জানি নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ দায়রা আদালতের বিচারক হিসবে গণ্য হন।
(১) দায়রা জজ।
(২) অতিরিক্ত দায়রা জজ।
(৩) যুগ্ম দায়রা জজ।
স্পেশাল জজ আইনে অনুমোদিত হয়ে যেকোন দন্ড প্রদান করতে পারবেন। তবে যুগ্ম দায়রা জজ যখন স্পেশাল জজ হিসেবে কাজ করবেন,তখন তিনি সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করতে পারবেন।
এই আইনের অধীন ও উহার তফসিলে বর্ণিত অপরাধসমূহের বিচার ও আপীল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে The Criminal Law(Amendment) Act,1958 এর বিধানাবলী প্রযোজ্য হবে।[ধারা-২৮(২)]
- আপীল [ধারা-১০]
The Criminal Law (Amendment) Act,1958 এর ১০ ধারা অনুযায়ী স্পেশাল জজ আদালতের ঘোষিত রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করা যাবে।
The Criminal Law(Amendment) Act,1958 এর কোন বিধান এই আইনের কোন বিধানের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ হলে এই আইনের বিধান কার্যকর হবে।[ধারা-২৮(৩)]
মিথ্যা তথ্য প্রদানের শাস্তি [ধারা-২৮গ]
কোন ব্যক্তি মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন তথ্য প্রদান করলে যে তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই আইনের অধীনে তদন্ত এবং বিচারকাজ পরিচালিত হয়, এক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য প্রদানকারী ব্যক্তির শাস্তি হবে অনধিক ৫ বছর কিন্তু অন্যূন ২ বছর কারাদণ্ড অথবা অর্থদন্ড অথবা উভয়দন্ড।
সংযুক্তি: আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন (ধারা-৬) + CrPC (ধারা-২৫০) + দুর্নীতি দমন কমিশন আইন (ধারা-২৮-গ) + মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন (ধারা-১৫) + দন্ডবিধি আইন (ধারা-২১১) + নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (ধারা-১৭) একসাথে মিলিয়ে পড়তে হবে। এই ধারাগুলোতে মিথ্যা মামলা/অভিযোগ দায়েরের শস্তির কথা বলা হয়েছে।
(১) আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ(দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২ [ধারা-৬]
কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীনে মিথ্যা মামলা কিংবা অভিযোগ দায়ের করলে তার শাস্তি হবে অনধিক ৫ বছর কারাদন্ড এবং অন্যূন ২ বছর কারাদণ্ড এবং অর্থদন্ড।
(২) দন্ডবিধি, ১৮৬০[ধারা-২১১]
কোন ব্যক্তি কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা ফৌজদারী মামলা দায়ের করলে তার শাস্তি হবে ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা অর্থদন্ড অথবা উভয়দন্ড।
যদি কোন ব্যক্তি ফৌজদারী মামলায় মৃত্যুদন্ড,যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ৭ বছর বা তার বেশি মেয়াদের কারাদণ্ডে দন্ডনীয় কোন অপরাধ সংঘটনের ব্যাপারে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে তাহলে তার শাস্তি হবে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদন্ড।
(৩) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,২০০০ [ধারা-১৭]
যদি কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীনে মিথ্যা মামলা/অভিযোগ দায়ের করেন, তাহলে তার শাস্তি হবে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং এর অতিরিক্ত অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবেন।
মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে অনুমোদন [ধারা-৩২]
এখানে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুমোদন ছাড়া কোন আদালত এই আইনের অধীনে কোন অপরাধ আমলে (cognizance) নিবে না। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭-এ ২০১৯ সালে একটা পরিবর্তন এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর বিধি-১৪ তে বলা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুমোদন ছাড়া আদালত এখন মামলা আমলে নিতে পারবে।
মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৯৭ ধারা প্রয়োগ [ধারা-৩২ক]
- দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের অধীনে জজ, ম্যাজিস্ট্রেট অথবা সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৯৭ ধারার বিধান অবশ্যই পালন করতে হবে।
- ফৌজদারী কার্যবিধির ১৯৭(১) ধারায় বলা হয়েছে, কোন জজ অথবা কোন ম্যাজিস্ট্রেট অথবা সরকারের অনুমতি ছাড়া অপসারণযোগ্য নয় এমন সরকারী কর্মচারী সরকারী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি কোন অপরাধ করেন,তখন সরকারের অনুমতি ব্যতীত আদালত তাদের বিরুদ্ধে কোন অপরাধ আমলে নিবে না। ১৯৭(২) ধারাতে বলা হয়েছে- জজ, ম্যাজিস্ট্রেট অথবা সরকারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে আনীত অপরাধের অভিযোগ কিভাবে পরিচালিত হবে এবং কার দ্বারা পরিচালিত হবে সেটা সরকার ঠিক করবে। কোন আদালতে এই মামলার বিচার হবে সেটাও সরকার ঠিক করবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট [ধারা-৩৩]
দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের অধীন মামলাসমূহ পরিচালনার জন্য কমিশনের নিজস্ব একটি স্থায়ী প্রসিকিউশন ইউনিট থাকবে। নিযুক্ত প্রসিকিউটরগণ পাবলিক প্রসিকিউটর বলে গণ্য হবেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের উপর একটি সামগ্রিক আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আপনার উপকৃত হলে আমার পরিশ্রম সার্থক হবে। ধন্যবাদ
ছগির আহমেদ টুটুল: সহকারী জজ; জেলা ও দায়রা জজ আদালত, শরীয়তপুর।