জাহিদুল ইসলাম:
গেজেট করে সনদের দাবীতে বিক্ষোভ, অনশনসহ নানা কর্মসূচি পালন করতে দেখা যাচ্ছে প্রিয় শিক্ষানবিশ ভাই-বোনদের কে। সোশ্যাল মিডিয়ার গন্ডি পেরিয়ে তাদের নিয়ে প্রতিবেদন হচ্ছে মূল ধারার গনমাধ্যমেও। এ নিয়ে গনমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন বার কাউন্সিল নেতৃবৃন্দ।
চলমান এই আন্দোলনের সবথেকে বড় সাফল্য হলো, যথাযথভাবে দ্বায়িত্ব পালনে গাফিলতি করে ভাবলেশহীন থাকা আমাদের শ্রদ্ধেয় বিজ্ঞ অভিভাবকদের এটা অন্ততপক্ষে বোঝানো গিয়েছে যে তাদের দ্বায়িত্বে থাকা আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি একটি ব্যার্থ প্রতিষ্ঠান। তা যে কারনেই হোক, এ দায় তারা এড়াতে পারেন না। তাদেরকে এখন অন্ততপক্ষে প্রকাশ্যে জবাবদিহিটুকু করতে হচ্ছে এটা নেহায়েত কম কিছু তো নয়! আশা রাখি এভাবেই ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
অনেক বিজ্ঞজনরা বলতেছে যে এসব ছেলেমেয়েরা বড্ড অযৌক্তিক আবদার করে ফেলেছে। কিন্তু এই অযৌক্তিক আবদারের উত্থান কিভাবে, কি কারনে হলো সেটা বোঝা, বিবেচনায় নেয়া বেশ জরুরী।
আমিও মনে করি আইন পেশায় মান নিয়ন্ত্রণ, মানোন্নয়ন খুব খুব এবং খুবই জরুরি কিন্তু ক্ষুদ্র জীবনের অতি মূল্যবান সময় নষ্ট করে দিয়ে মান নিয়ন্ত্রণ ও মানোন্নয়ন সম্ভব নয়। আইন পেশার মানোন্নয়নের প্রথম ও অপরিহার্য পদক্ষেপ হওয়া উচিত আইন শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার তথা মান বৃদ্ধি। ভাল বীজে ভাল ফসল এমন পদক্ষেপ নিয়ে এগোতে হবে। নিবন্ধনের নামে বছর-বছর পার করে দেয়াটা সত্যিকারের মানোন্নয়ন নয় এতে বরং জনসম্পদের নিদারুণ অপচয়টাই হয়।
দেশের আইন শিক্ষার্থীদের সিংহভাগই হচ্ছেন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যলয়ের। এই দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানেই আইন এর মত একটা বিশেষ বিষয়ে পড়তে হলে বিশেষ দক্ষতা বা যোগ্যতার আবশ্যকতা নাই! কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের মত ভর্তি পরীক্ষা নেয় বটে। সকল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তির জন্য একটা কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা বার কাউন্সিল এর অধীনে নেয়া যেতে পারে। যেখানে পূর্ব নির্ধারিত আসনের বিপরীতে পরীক্ষা হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষেত্রেও তদ্রুপ। যেমনটা বেসরকারী মেডিকেল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে করা হয়। এমনটা হলে আইন শিক্ষা ও আইন পেশা নিয়ে চলতে থাকা ৯৫ ভাগ বিতর্কের অবসান হয়ে যাবে।
নিবন্ধন পরীক্ষা বার কাউন্সিল চাইলে নিতেই পারে তবে তা অবশ্যই যথারীতি অনুসারে নিয়মিত হওয়া উচিত এবং হতে হবে। আইন পেশা এমন কোন পেশা নয় যে নিবন্ধন পেলেই মাস শেষে মোটা অংক পকেটে আসে। এখানে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়। পেশাজীবি হিসেবে নিজেকে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত করে নিতেও বেশ সময়ের দরকার রয়েছে। তো পেশা জীবনের শুরুতেই পাঁচ বছর নষ্ট করে দিলে পুরো পেশা জীবনই যে হুমকির মুখে পরে যায় সেটা একটা সহজ হিসাব। অঙ্কুরেই বিনষ্ট করা যাকে বলে তাই করা হচ্ছে।
বিদ্যমান নিবন্ধন পরীক্ষা পদ্ধতির বিরোধিতা বা পরীক্ষা না দিয়ে সনদ চাওয়ার মত দাবী প্রিয় শিক্ষানবিশগন করছেন না। অযাচিত দীর্ঘ সময় ক্ষেপন এর ফলে তাদের সামাজিক, আর্থিক, মানসিক যে ক্ষতি সাধিত হচ্ছে তার প্রতিকারটা চাইছেন মাত্র। যথাসময়ে পরীক্ষা নিলে পরীক্ষা দিতে চাইতেন না এমন একজনকে কি খুঁজে পাওয়া যাবে?
বিদ্যমান অচলাবস্থার একটা সুষ্ঠু, যৌক্তিক ও স্থায়ী সমাধান অতি জরুরী। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি এ ব্যাপারে অত্যান্ত গুরুত্বের সাথে ভাববেন ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহন ও তার বাস্তবায়ন করবেন বলেই আশা রাখি। সকলকে ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
জাহিদুল ইসলাম: অ্যাডভোকেট।