ভালো নেই আইনজীবীরা। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সব আদালত চার মাস বন্ধ থাকায় আইনজীবীরা পেশা পরিচালনা করতে পারছেন না। মামলার কার্যক্রম চলমান না থাকায় তাদের চেম্বারে মক্কেলও আসছেন না। এর প্রভাব পড়েছে তাদের আয়ে। তিন মাস ধরে আইনজীবীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে আর্থিকভাবে খুবই কষ্টের মধ্যে দিন পার করছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বহু আইনজীবীর চেম্বারের ভাড়া বকেয়া পড়েছে। সবচেয়ে কষ্টে পড়েছেন জুনিয়র আইনজীবীরা। সিনিয়রদের কাজ না থাকায় তাদেরও আয় বলতে কিছু নেই। একই অবস্থা আইনজীবীর সহকারী বা মুহুরিদেরও। এ সুযোগে আদালতপাড়ায় বেড়ে গেছে দালালদের দৌরাত্ম্য। প্রতারিতও হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা। আইনজীবীরা এই বন্ধ্যত্ব কাটাতে সীমিত পরিসরে আদালত খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে করোনাকালে ভার্চ্যুয়াল কোর্টের পরিধি বাড়ানো এবং আগাম জামিনের শুনানি চালুরও দাবি জানিয়েছেন তারা।
করোনা ঝুঁকির মুখে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় গত ২৫ মার্চ থেকে সর্বোচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতের সব নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আইনজীবীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ মে থেকে স্বল্প পরিসরে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট চালু করা হয়। উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতে যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ভার্চ্যুয়াল আদালতে শুধু কারাগারে থাকা আসামিদের জামিন আবেদন শুনানি হচ্ছিল। তবে ইতোমধ্যে দেওয়ানী মোকদ্দমা ও আপীল দায়েরসহ ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তদের আত্মসমর্পণের সুযোগ রেখে প্র্যাকটিস নির্দেশনা জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। জানা গেছে, ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে সারাদেশে ৫০ হাজার জামিন হয়েছে।
এই ভার্চ্যুয়াল আদালতের সঙ্গে মাত্র শতকরা ১০ ভাগ আইনজীবী সম্পৃক্ত রয়েছেন। প্রতিষ্ঠিত অল্পসংখ্যক আইনজীবী ছাড়া বাকিরা বেকার। যদিও সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশে নিম্ন আদালতে থাকা প্রায় ৩৭ লাখ ফৌজদারি ও দেওয়ানি বিচারাধীন মামলার বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশের আদালত খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির এক সদস্য বলেন, কোর্ট বন্ধ থাকায় চার মাস ধরে বাসায় আছি। একেবারেই আয় বন্ধ। চেম্বার চালাতে পারছি না। ৯৫ ভাগ আইনজীবী বেকার। অবিলম্বে স্বল্প পরিসরে দেশের সব আদালত খুলে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজুর মতে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে সুপ্রিম কোর্টসহ সব আদালত খুলে দেওয়া উচিত। না হলে আগাম জামিনের এখতিয়ার দিয়ে উচ্চ আদালতে ভার্চ্যুয়াল কোর্টের পরিধি বাড়ানো যেতে পারে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর চার মাস আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম না থাকায় দুর্দশার চিত্র ফুটে উঠেছে এই আইনজীবীদের কথায়। ঢাকা বারের আরেক সদস্য আদালত বন্ধ হওয়ার পরই পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। সারাদেশে এ রকম কয়েক হাজার আইনজীবীর পেশা এখন বন্ধ আছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। সামনে আরও সময় উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালত বন্ধ থাকলে নবীন আইনজীবীদের ৭০ শতাংশেরই উচ্চ আদালতে আইন পেশায় সম্পৃক্ত থাকার স্বপ্ন ভেঙে যাবে। অনেকে পেশা ছাড়তেও বাধ্য হবেন।
এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মমতাজ উদ্দিন মেহেদী গত ২৮ জুন মানববন্ধন করে নিয়মিত আদালত চালুর দাবি জানিয়েছেন। প্রধান বিচারপতির কাছে এ ব্যাপারে লিখিত আবেদনও দিয়েছেন তিনি। এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিসহ সারাদেশের বেশিরভাগ আইনজীবী সমিতি স্বাস্থ্য বিধি মেনে সীমিত পরিসরে স্বাভাবিক আদালত শুরু করার পক্ষে।
বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ইতোমধ্যে বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জেলা বারে পাঁচ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বিচারপ্রার্থী মানুষের সমাগম এড়াতে আদালত খুলে দেওয়া যাচ্ছে না। প্রধান বিচারপতিকে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি অন্যান্য বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করে আদালত খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। সূত্র- সমকাল