জয়নাল আবেদীন মাযহারী: ১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধে বাংলার সর্ব শেষ মোসলমান নবাব সিরাজের পতনের মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশদের শাসনদ্বার উম্মুক্ত হয়। তারা এই অঞ্চলে শাসন চলাকালীন তাদের সুযোগ সুবিধা মত অসংখ্য আইন প্রনয়ন করে শাসন কার্য্য পরিচালনা করে আসছিলেন। বৃটিশদের তৈরী আইনগুলোর মধে ১৮৬০ সালের ৪৫নং আইনের নাম the penal code বা দন্ডবিধি। উক্ত আইনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে এ রকম যে, যেহেতু এই অঞ্চলের (তৎকালীন ব্রিটিশদের আঞ্চলিক টেরিটোরি) জন্য সাধারণ সকল অপরাধ দমন কল্পে একটি আইন প্রণয়ন করা জরুরী সেহেতু নিম্নরূপ আইন প্রণয়ন করা হলো। উক্ত আইনে সাধারণভাবে সকল অপরাধ অর্ন্তভূক্ত করে তাহার শাস্তির বিধান করে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় ব্যভিচার এর জন্য একটি ধারা সন্নিবেশিত করা হয়। সেই ধারাটি হলো ৪৯৭ ধারা।
ব্যভিচারের সংজ্ঞা
যিনা বা ব্যভিচার হল অবিবাহিত দুইজন পুরুষ মহিলার মধ্যে যৌনক্রিয়া। ইসলামী অভিধানে যিনা হল ইসলামী বৈবাহিক নিয়ম বহির্ভূত পরস্পর বিবাহিত বা অবিবাহিত একাধিক পুরুষ মহিলার মধ্যকার অবৈধ যৌন সম্পর্ক। এ ক্ষেত্রে দুই ধরনের যৌনতা রয়েছে, তা হলো, ১) বিবাহোত্তর যৌনতা এবং ২) বিবাহপূর্ব যৌনতা যা কথিত আধুনিক সমাজ পরকীয়া বলে জানে।
পরকীয়া হলো পারস্পারিক সম্মতিতে অন্যের বিবাহিত স্বামী স্ত্রীর মাঝে অবৈবাহিক যৌন সম্পর্ক। এর মাধ্যমেই মূলত একজন ব্যক্তি ব্যভিচারের দিকে ধাবিত হয়, এর জন্য যৌন সঙ্গম শর্ত নয়।
অন্যদিকে ব্যভিচার দুই বা ততোধিক নর-নারীর মাঝে সম্মতিসহ যৌন সঙ্গম, এটা হয়ত অন্যের বিবাহিতদের মধ্যকার হতে পারে অথবা অবিবাহিতের পারস্পারিক সম্মতিতে যৌনসঙ্গম হতে পারে। ব্যভিচারের ক্ষেত্রে যৌনসঙ্গম শর্ত। ইসলামী আইনে বিবাহ পূর্ব যৌনতা এবং বিবাহ পরবর্তী যৌনতা উভয়কেই ব্যভিচার হিসেবে চিহ্নিত করে, তবে শাস্তির ক্ষেত্রে তারতম্য করে শাস্তি দিয়ে থাকে।
আলোচ্য বিষয় ৪৯৭ ধারার সংক্ষিপ্ত আলোচনা
আইনে বলা হয়েছে, whoever has sexual intercourse with a person who is and whom he knows or has reason to believe to be the wife of another man, without the consent or convenience of that man, such sexual intercourse not amount to the offence of rape, is guilty of the offence of adultery, and shall be punished with imprisonment of either description for a term which may extend to five years, or with fine or with both. In such case the wife shall not be punishable as an abettor.
অর্থাৎ যদি কোন লোক অন্য কোন লোকের স্ত্রী অথবা যাহাকে সে অপর কোন লোকের স্ত্রী বলিয়া জানে বা তাহার অনুরুপ বিশ্বাস করিবার কারণ রহিয়াছে এমন কোন লোকের সহিত উক্ত অপর লোকের সম্মতি ও সমর্থন ব্যতীত এই রুপ যৌন সঙ্গম করে যাহা নারী ধর্ষণের শামিল নহে, তবে সেই লোক ব্যভিচারের অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হইবে এবং তাহাকে সাত বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে অথবা অর্থদন্ডে অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করতে পারবে। অনূরুপ ক্ষেত্রে স্ত্রী লোকটিকে দূষ্কর্মের সহায়তাকারী হিসাবে সাজা দেওয়া যাইবে না।
উক্ত ধারায় আসামীকে শাস্তি দেওয়ার পূর্বে বিজ্ঞ বিচারক যে বিষয়গুলা মাথায় রেখে নিশ্চিত হবেন তা হলোঃ
- প্রথমত, আসামি কোনো নারীর সঙ্গে যৌন সঙ্গম করেছিল কি না?
- দ্বিতীয়ত, ওই নারী বিবাহিত ছিলেন এবং তার স্বামী ঘটনার সময় জীবিত ছিলেন।
- তৃতীয়ত, অভিযুক্ত ব্যক্তি উক্ত বিবাহের বিষয়টি জানত এবং তা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণও ছিল।
- চতুর্থত, ওই যৌন সঙ্গম ঐ নারীর স্বামীর সম্মতি বা নিরব সমর্থন ব্যতিরেকে হয়েছিল।
- পঞ্চমত, ওই যৌন সঙ্গম নারী ধর্ষণের শামিল ছিল না অর্থাৎ, সঙ্গমে ওই নারীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্মতি ছিল।
উক্ত ৫ বিষয় বিবেচনা করে বিজ্ঞ বিচারক অভিযুক্ত আসামীকে সাজা বা খালাস দিতে পারবেন।
এ বিষয়ে ইসলাম ধর্ম কি বলে
ইসলামে ব্যভিচার একটি জঘন্য অপরাধ। হত্যার পরই এটি সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ। আল্লহ ইহকালে এবং পরকালে উভয় সময়ই এর শাস্তির কথা বলেছেন। তবে তাওবাকারীর কথা ভিন্ন। তাই পবিত্র কোরানে ইরশাদ হচ্ছে,
الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ وَلَا تَأْخُذْكُمْ بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
(সূরা নুর- আয়াত-২)
অর্থাৎঃ ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী— তাদের প্ৰত্যেককে একশত বেত্ৰাঘাত করবে আল্লাহর বিধান কার্যকরীকরণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবান্বিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ্ এবং আখেরাতের উপর ঈমানদার হও; আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্ৰত্যক্ষ করে। (সূরা নুর- আয়াত-২)
ইসলামের প্রাথমিক যুগে অস্থায়ীভাবে ব্যভিচারের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছিল সূরা নিসার ১৫নং আয়াতে। তাতে বলা হয়েছে যে, যতক্ষণ এ ব্যাপারে কোন স্থায়ী শাস্তি নির্ধারিত করা না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই সমস্ত ব্যভিচারিণী মহিলাদেরকে ঘরে আবদ্ধ রাখা হোক। কিন্তু যখন সূরা নূরের উল্লেখিত আয়াত অবতীর্ণ হল, তখন নবী (সাঃ) বললেন যে, ‘আল্লাহ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই মত ব্যভিচারী পুরুষ ও নারীর স্থায়ী শাস্তি নির্ধারিত করে দিয়েছেন, তা তোমরা আমার কাছ হতে শিখে নাও। আর তা হল, অবিবাহিত পুরুষ ও নারীর জন্য একশত বেত্রাঘাত ও বিবাহিত নারী-পুরুষের জন্য একশত বেত ও পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা।’ (সহীহ মুসলিম, দন্ডবিধি অধ্যায়)
অতঃপর বাস্তবে তিনি বিবাহিত (ব্যভিচারী)-দের শাস্তি দিয়েছেন পাথর মেরে, আর একশত বেত্রাঘাত (যা ছোট শাস্তি) বড় শাস্তির সাথে একত্রীভূত করে বিলুপ্ত করেছেন। অতএব এখন বিবাহিত নারী-পুরুষের ব্যভিচারের একমাত্র শাস্তি পাথর মেরে শেষ করে ফেলা। নবী (সাঃ)-এর যুগের পর খোলাফায়ে রাশেদীন তথা সাহাবাদের যুগেও উক্ত শাস্তিই দেওয়া হত। পরবর্তীকালের ফকীহগণ ও উলামাবৃন্দ এ ব্যাপারে একমত ছিলেন এবং এখনো একমত আছেন। শুধুমাত্র খাওয়ারিজ সম্প্রদায় পাথর ছুঁড়ে মারার এই শাস্তিকে অস্বীকার করে। ভারত উপমহাদেশেও আজকাল এমন কিছু মানুষ আছে, যারা উক্ত শাস্তির কথা মানতে অস্বীকার করে থাকে। এই অস্বীকার করা মূলত আল্লাহর রাসূল (দঃ) এর হাদীস অস্বীকার করা। কারণ পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলার শাস্তি সহীহ ও শক্তিশালী হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং সেই সমস্ত হাদীসের বর্ণনাকারীর সংখ্যাও এত বেশি যে, উলামাবৃন্দ সেগুলোকে মুতাওয়াতির’ (বর্ণনা-পরম্পরা-বহুল) হাদীস বলে গণ্য করেছেন। বলা বাহুল্য, হাদীসের প্রামাণিকতা ও তা শরীয়তের একটি উৎস হওয়ার কথা যাঁরা স্বীকার করেন, তাঁরা উক্ত শাস্তির বিধানকে অস্বীকার করতে পারেন না। (তাফসিরে আহ্সানুল বয়ান সূরা নুর, আয়াত-২ এর ব্যাখ্যা)
উল্লেখ্য যে, ইসলাম ধর্মে বিবাহের পূর্বে এবং পরে উভয় অবৈধ যৌন ক্রিয়াকেই ব্যভিচার হিসেবে গন্য করে শাস্তির বিধান আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।
এবার মূল আলোচনায় আসা যাক, ‘পরকীয়া’ বলতে অন্যের স্বামী বা স্ত্রীর সাথে বিবাহবহির্ভূত প্রেম বা প্রণয় কে বুঝায়, ইংরেজিতে যাকে আমরা – ‘Extra Marital Affair’ বলি। এখন এই প্রেম যৌন সঙ্গম অব্দি গড়াতেও পারে আবার নাও পারে। দুঃখ এবং হতাশার বিষয় হলো এই পরকীয়া অনৈতিক, বহু সংসার ভঙ্গ, বহু হত্যা এবং আত্মহত্যার অন্যতম কারণ হওয়া সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রচলিত কোন আইনই পরকীয়াকে ব্যভিচার পর্যন্ত টেনে নিতে না পারলে অর্থাৎ উক্ত পরকীয়া ব্যভিচারে পরিণত না পাওয়া পর্যন্ত একে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে নাই। তার মানে যৌন সঙ্গমহীন বিবাহবহির্ভূত পরকীয়া আমাদের আইনে অপরাধ নয় এবং এই পরকীয়ার অভিযোগে কাউকে দায়ী করা যায় না এমনকি উভয়ের সম্মতি সহ যৌন সঙ্গমের ক্ষেত্রেও ব্যভিচারী নারীর কর্মকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে ।
পরকীয়ার শেষ পরিনতি ব্যভিচারে আইন কাকে দায়ী করেছে?
১৮৩৪-৩৫ সালে যখন বর্তমান আইন তৈরির খসড়া হয়েছিল তখন মেয়েদের পরিসরটাকে ঘর বলে মনে করা হতো আর স্বামী বা পুরুষের পরিসরটা মনে করা হতো বাইরে৷ মেয়েদের ঘর সংসারটা সুরক্ষিত রাখতে বৈবাহিক সম্পর্কটা সুরক্ষিত রাখতেই তৈরি হয়েছিল এই আইন। এই আইনটি আমাদেরকে তৎকালীন নারীদের সামাজিক মর্যাদার একটি প্রামান্য চিত্র বুজতে সহায়তা করে। কেন না আইনে বলা হয়েছে স্বামীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্মতিতে তার স্ত্রীর সাথে কোন ব্যাক্তি এই অবৈধ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে উক্ত যৌন সম্পর্ক ব্যভিচার বা ধর্ষণ হিসেবে গ্রাহ্য হবে না৷ অর্থাৎ এমতাবস্থায় উক্ত ব্যভিচারকারী ও ব্যভিচারিনী উভয়ে আইনের বিধান অনুযায়ী সাজা পাবে না। ভিক্টোরিয়ান যুগের এই আইনের মানসিকতা আমাদের মনে অনেক প্রশ্নের বীজ বপন করেছে! এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্বয়ং ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বেঞ্চও৷ বিবাহিতা মহিলার স্বামীর মত থাকা মানে কী? স্ত্রী কি স্বামীর সম্পত্তি না পণ্য? নাকি তাঁর অধীনস্থ আত্মপরিচয়হীন পুতুল মাত্র? ওই বেঞ্চ প্রশ্ন তুলেই ক্ষ্যান্ত হয়েছেন। এটার কোন সুষ্ঠু সমাধান আজ অবদি বাংলাদেশসহ সমগ্র ভারতীয় উপমাহদেশে হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
উক্ত ধারার শেষাংশে বলা হয়েছে এই ব্যভিচারের সহযোগী হিসেবে মহিলাকে শাস্তি দেওয় যাবে না! অর্থাৎ এই ধারানুযায়ী ব্যভিচারের অপরাধে দায়ী হবে শুধু ব্যভিচারী পুরুষই, ব্যভিচারে লিপ্ত স্ত্রীলোকটির কোন আইনি দায় নেই এবং দুষ্কর্মের সহযোগী (Abettor) হিসেবে তাকে কোন শাস্তি দেওয়া যাবে না। হতবাকের বিষয় হচ্ছে এই আইন ব্যভিচারী মহিলাটিকে তার কৃতকর্মের দায় হইতে সরাসরি দায়মুক্তির বিধান দিয়েছে। ব্যভিচার প্রমাণিত হলেও স্ত্রীলোকটির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার ব্যাপারে সরাসরি বারণ করা হয়েছে! এটা থেকে আমরা কি বুঝতে পারি? আইনের এই কালো ধারা তৎকালীন মহিলাদেরকে ঘরের পুতুল হিসেবে সাব্যস্ত করে তাহের স্বামীর খেয়াল খুশিমত অন্য পুরুষের সাথে অবৈধ মেলা মেশার সরাসরি সনদ দিয়ে তৎকালীন সামাজিক, পারিবারিক ও দাম্পত্য মেলবন্ধনে এক বিষাক্ত ভাইরাস বপন করে নারীদেরকে পরকীয়ার বিষাক্ত ফল ব্যভিচারে উৎসাহিত করেছে। সেই বিষ আজও আমাদেরকে কুরে কুরে খাচ্ছে। এটা সহজেই অনুমেয় নয় কি?
৪৯৭ ধারার আরও বিধান হলো, এই ধারায় মামলা করতে হবে স্বয়ং স্বামীকেই অথবা স্বামীর অবর্তমানে স্ত্রী যাহার হেফাজতে থাকবেন তিনি। এবং এই মামলায় প্রমাণ করতে হবে যে আসামী তার স্ত্রীর সাথে দৈহিকভাকে সম্পৃক্ত এবং এই সম্পর্কে স্বামীর কোন সম্মতি ছিলো না। এই কথাগুলা সেকেলে এবং ক্ষেত্রমতে হাস্যকর। কেননা ওই মহিলার স্বামী তাহার স্ত্রীর পক্ষে এমন মামলা করার বাধ্যবাধকতা ভুক্তভোগীকে আইনের আশ্রয় নিতে নিরুৎসাহিত করবে এবং বাংলাদশের বর্তমান সামাজিক মেলবন্ধনে পশু ছাড়া কোন স্বামীই তার স্ত্রীকে অন্যের সাথে পরকীয়া বা ব্যাভিচার করার অনুমতি দেওয়ার কারণ নেই। এটা সহজেই অনুমেয় এবং আইন দ্বারা প্রমাণ করার বাধ্যবাধকতা হাস্যকর বটে। বরং সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্ব পরকীয়ার জেরে বহু বিবাহ বিচ্ছদ এবং অনেক খুন, আত্মহত্যার সাক্ষী হয়েছে। তাই আমাদেরকে আইনের এই ধারার এই গোলক ধাঁধাঁ থেকে বেরিয়ে আসা অতীব জরুরী। অথচ প্রায় ১৮০-১৮৫ বছরের পুরনো এই আইনের উল্লেখিত ধারায় অদ্যাবধি কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। তার সু স্পষ্ট কারণ আমাদের কাছে অজানা।
এই লেখার আলোকে আমরা সারাংশে যা বলতে পারি
ব্যভিচারে লিপ্ত নারী-পুরুষের মধ্যে নারীটির অন্যের “বিবাহিত স্ত্রী” হওয়াটা এই ধারায় একটি শর্ত, ব্যভিচারী পুরুষটির বিবাহিত হওয়াটা শর্ত নয়। এটা নারীর প্রতি একটা বৈষম্য। এই ধারার আলোচ্য বিষয়েরে ব্যাপারে পবিত্র কোরান হাদিসের সরাসরি এবং অত্যন্ত কঠোর নির্দেশনা আছে। আর এই ধারাটি কোরান হাদিসের বিধানকে সরাসরি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্বেচ্চাচারিতার ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছে। আমাদের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অঙ্গীকার করেছেন কোরান হাদীস বিরোধী কোন আইন তিনি প্রণয়ন এবং প্রশ্রয় দিবেন না। ওনার উক্ত কথার সাথে আইনের এই ধারাটা মারাত্মকভাবে সরাসরি সাংঘর্ষিক। তিনি তাঁর ওয়াদা রক্ষার্থে অনতিবিলম্বে এই ধারা সহ অন্য কোন ধারা যদি কোরান হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক হয় তাহলে উক্ত সকল স্থানে হস্তক্ষেপের ব্যবস্থা করে সকল আইনকে যুগোপযোগী এবং ধর্মের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করবেন।
যেহেতু সম্প্রতি ভারতের সুপ্রীম কোর্টের সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ব্যভিচার সংক্রান্ত এক মামলায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারার এই বিধানের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন- ‘যদি কোনো বিবাহিতা নারী পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তার দায়-দায়িত্ব ওই পুরুষের যেমন, তেমনি ওই নারীরও। সেই দায়িত্ব তো নারীটিকে নিতেই হবে। সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লাম, তার ফল ভোগ করলাম, কিন্তু দোষী হলো শুধু পুরুষ, সেটা তো ঠিক নয়।”
যেহেতু এই আইনটির ১৮৩৪ সালে খসড়া শুরু হয় অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ১৮৪ বছর আগে। তৎকালীন পারিপার্শ্বিকতায় হয়ত এই ধারা উপযুক্ত ছিলো তাই বৃটিশ সরকার এই ধারা আনয়ন করেছে। সুতরাং এই ধারা এখন আমাদের সভ্য সমাজে অচল বিধায় এই ধারায় আশু সংশোধনী এনে তা যুযোপযোগী করা।
বৃটিশদের সমাজ সংস্কৃতি আর আমাদের লাইফ স্টাইল সম্পূর্ণ আলাদা বিধায় আমরা আর এই ধারা নিয়ে পড়ে থাকতে পারি না। তাদের সমাজে আজও বিয়ের পূর্বে সন্তান উৎপাদনের নিয়ম আছে এবং তারা লিভ টুগেদারে আজও অভ্যস্ত বিধায় সেই সময়ে তাদের দ্বারা এমন আইন হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয় বিধায় আমরা আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ন আইন করা বাঞ্চনীয় বলে মনে করি।
জয়নাল আবেদীন মাযহারী: আইনজীবী; আইন গবেষক; ধর্মীয় চিন্তাবিদ ও সমাজ কর্মী। Email: joinalmajhari@gmail.com