বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহকে অবসরোত্তর বিদায়ী সংবর্ধনা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।
আজ বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) তাঁর শেষ কর্ম দিবসে বেলা সোয়া ১টায় ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের সঞ্চালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, অমিত দাস গুপ্ত, সারয়ার হোসেন বাপ্পি, সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোতাহের হোসেন সাজু সহ সুপ্রিম কোর্টের অর্ধশত আইনজীবী ভার্চ্যুয়ালি উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, করোনা পরিস্থিতি না থাকলে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে আপনাকে বিদায় জানানো যেত। তবে মহামারী থাকায় স্বাভাবিকভাবে বিদায় সংবর্ধনা দেয়া যায়নি।
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ লোভ-লালসার উর্ধ্বে থেকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে বিচারিক দায়িত্ব পালন করেছেন। সিভিল ও ক্রিমিনাল উভয় প্রকার মামলায় উনার বিচারিক দক্ষতা অনন্য।’
‘তাঁর বিদায়ে বিচার বিভাগ একজন সজ্জন, প্রাণবন্ত ও নিষ্ঠাবান প্রাজ্ঞ বিচারপতিকে হারাচ্ছে। আজ এই বিদায় বেলায় তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি’, যোগ করেন মাহবুবে আলম।
করোনা সংকটের কারণে বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহকে স্বশরীরে বিদায় জানাতে না পারায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন দুঃখ প্রকাশ করেন।
বিদায় সংবর্ধনায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, নিজ খরচে ১১টি এতিমখানা পরিচালনা করেন মানবিক বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ। তাঁর এই মানবিক মূল্যবোধ বিচারিক কাজে প্রতিফলিত হয়েছে। আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান বিচার বিভাগকে সমৃদ্ধ করেছে।
এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, বিচারক হিসেবে তাঁর আজ শেষ কর্ম দিবস হলেও আমি আশা করি তিনি আইন অঙ্গনের সাথে সম্পৃক্ত থাকবেন। আইনের বই লিখবেন কিংবা সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে নিজেকে আইনাঙ্গনে নিয়োজিত করবেন।
অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তবে বিদায়ী বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ বলেন, কোভিডের এই ক্রান্তিকালে বিদায় জানাতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এই অভিনব উদ্যোগ এবং আমার প্রতি আইনজীবীদের ভালবাসার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, বার ও বেঞ্চ একে অপরের পরিপূরক। আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বার ও বেঞ্চের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সুসম্পর্ক থাকা আবশ্যক। আদালতের কার্যক্রমে অংশ নিয়ে মামলা নিষ্পত্তিতে সহযোগিতা করায় আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।
বিদায়ী বিচারপতি বলেন, ৩৭ বছর আগে মুন্সেফ পদে বিচার বিভাগে যোগাদান করেছি, স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী একদিন অবসরে যেতে হয়। আজ আমার চাকরি শেষ হয়েছে এ নিয়ে দুঃখ নেই। তবে সাড়ে তিন দশকেরও বেশি সময় আপনাদের সাথে কাজ করেছি, তাই আপনাদের ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে।
আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে ভবানী প্রসাদ বলেন, আমি আপনাদেরই একজন, বিচার বিভাগে আইনজীবী হিসেবেই আমার পেশাগত জীবন শুরু। পরবর্তিতে বিচারক হয়েছি। এ সুদীর্ঘ সময়ে অনিচ্ছাকৃতভাবেও কোন ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
সিনিয়র আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমিও এক সময় জুনিয়র আইনজীবী ছিলাম। তাই সিনিয়র আইনজীবীদের প্রতি অনুরোধ জুনিয়ররা যেন আইন পেশায় টিকে থাকতে পারে এবং পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচতে পারে সে দিকে খেয়াল রাখবেন।
পরিশেষে সারা পৃথিবীতে চলমান করোনা মহামারী থেকে মানুষ যেন দ্রুত রক্ষা পায় সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা জানান বিদায়ী বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ।
এক নজরে বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ
বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ১৯৫৩ সালের ৮ আগস্ট সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। ইংরেজিতে এম.এ এবং এল. এল. বি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৭৯ সালের ১ মার্চ জেলা বারে আইনজীবী হিসেবে তালিকভুক্ত হন। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সলের ২০ এপ্রিল মুন্সেফ হিসেবে (সহকারী জজ) বিচার বিভাগে যোগদান করেন। ২০০০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। তিনি ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এর ঠিক দুই বছর পর ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্টে স্থায়ী নিয়োগ পান।
বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ হত্যা, জাসদ ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর শাখার সহ সাধারণ সম্পাদক মোমিন, লক্ষ্মীপুরে স্কুলছাত্রী স্মৃতি নাথ সীমাকে ধর্ষণের পর হত্যা এবং নরসিংদীর সিক্স মার্ডারের মতো আলোচিত মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর রায় দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সংবিধান অনুসারে ৬৭ বছর বয়স পূর্ণ হলে অবসরে যান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা। সেই অনুসারে ৭ আগস্ট তার ৬৭ বছর পূর্ণ হবে। এর মধ্যে শুক্রবার (২৪ জুলাই) থেকে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি শুরু হচ্ছে। এটি শেষ হবে ৮ আগস্ট (শনিবার)। এ কারণে বৃহস্পতিবার তার শেষ কর্মদিবস হিসাবে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।