আফজাল হোসেন:
আজকে অনেকদিন পর উচ্চ আদালতে গেলাম। গিয়ে দেখি একটি কোর্টের সামনে বেশ ভীড়। এজলাসের দুইদিকের জানালার পাশে মাথা ঢুকিয়ে আছে বহুমানুষ। কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। জানি কি হচ্ছে তারপরও কৌতুহল বশে দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে যা দেখলাম আর যা শুনলাম সত্যিই লজ্জাজনক বিষয়। পরিচিত একজন ক্লার্ক আমাকে দেখে বললো ভাই আপনি এখানে! আমিও মজা করে বললাম, আদেশটা নামছে কিনা দেখতে আসছি। সে জিজ্ঞেস করল নাম্বার কত? কবের আদেশ? আমি বানিয়ে বললাম। সে বললো ভাই আপনি ভেতরে গিয়ে পরিচয় দিয়ে বলেন, তাহলে তাড়াতাড়ি কাজটা হবে। আমি বললাম দেখি।
পাশেই দাঁড়ানো এক লোক বললো, ওরা টাকা ছাড়া কিচ্ছু বুঝেনা। আমি সর্বোচ্চ তদবির করেছি তাও গড়িমসি করছে। আরেকজন বললো আমার চেয়ে বেশি দেননি। সে আরো বললো আমি যা দিয়েছি আমার সিনিয়র বিশ্বাস করেনা।
আমি বললাম কত দিছেন? সে বললো দিয়েছি ভাই। এরকম বেশ কয়েকজন বললো। সবার কথায় একই রকম। তদবির মানে টাকা ছাড়া কিছুই হচ্ছেনা। একজন মজা করেই বললো নামেই ভার্চুয়াল টাকা পয়সা সব চলছে আগের নিয়মে। আবার একজন বললেন, করোনার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে আর সামনে ঈদ কিছু টাকাতো নিবেই!
আরেকজন বললো, ঠিকই তো আছে। জামিন আদেশ হওয়ার পর মক্কেল একদিনও জেলে থাকতে চায় না। কেনরে বাবা দু’ একদিন অপেক্ষা করলেই নিয়মিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো কাগজটা যাবে। এ কারণেই তারা সুযোগটা নেয়।
অনেক আইজীবীর অভিযোগ অনলাইনে মামলা ফাইল করে শুনানির জন্য লিংক পেতেও নাকি তদবির করতে হয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, এমন অনিয়মের বিষয়টি আইনজীবীরাও জানে। এটা ওপেন সিক্রেট। কিন্তু তারা নিশ্চুপ থাকে স্বার্থের কারণে অথবা নিরুপায় হয়ে।
মানুষ ন্যায়বিচারের জন্য কোর্টে আসে। আসারপর যদি পদে পদে এরকম হয়রানি বা অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করতে হয় তাহলে ন্যায়বিচার দৃশ্যমান কি করে হবে। গুটি কয়েক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার জন্য পুরো বিচার বিভাগের বদনাম হয়। বিচার বিভাগের উচিৎ কঠোর হস্তে এগুলো দমন করা। তাহলে বিচার বিভাগের মর্যাদা বাড়বে, কমবে না।
আফজাল হোসেন: সাংবাদিক, সময় টিভি।