নানা উদ্যোগের পরও করোনার হানা থেকে রেহাই পায়নি দেশের কারাগারগুলো। তবে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত অন্যান্য দফতর ও অধিদফতরের তুলনায় কারাগারগুলোতে করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ পর্যন্ত কারা অধিদফতর ও দেশের কারাগারগুলোতে একজন কারা কর্মকর্তা ও একজন বন্দি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আর কারাগারগুলোতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০১ জন।
কারা অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, করোনা থেকে কারাবন্দিদের সুরক্ষায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছেন তারা। এর বাইরেও কারা অধিদফতরের পক্ষ থেকে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নতুন যেসব বন্দি কারাগারে আসছেন, তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রেখে সুস্থতা নিশ্চিত করে অন্য বন্দিদের সঙ্গে রাখা হচ্ছে। আর করোনার কোনও আলামত বা উপসর্গ দেখা গেলে সেই বন্দিকে আলাদা করে রাখা হচ্ছে।
পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রে হ্যান্ড ওয়াশ এবং ক্লিনিংয়ের সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। আটটি করোনা সেন্টার করা হয়েছে, যেটাকে আইসোলেশন সেন্টার বলা হয়। কখনও রোগী বেড়ে গেলে এসব সেন্টারে স্থানান্তর করা যাবে।
কারা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে কারা কর্মকর্তা, কর্মচারী, রক্ষী ও তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে আইসোলেশনে আছেন মোট ১০১ জন। এদের মধ্যে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে ২ জন কারারক্ষী, কারা অধিদফতরের একজন অফিস সহায়ক, ফরিদপুর জেলা কারাগারে ৬ জন কারারক্ষী, তাদের পরিবারের সদস্য ৩ জন (কারারক্ষীর স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে) ও কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের ২ জন কারারক্ষী করোনা আক্রান্ত।
কারা অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে, গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন জেলার, এক জন ডেপুটি জেলার, এক জন ডিপ্লোমা নার্স, একজন ফার্মাসিস্ট, দুইজন সহকারী প্রধান কারারাক্ষী, চারজন কারারক্ষী এবং তাদের স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েসহ আরও তিনজন করোনা পজিটিভ। রাঙামাটি জেলা কারাগারে ছয়জন কারারক্ষী, একজন নার্স রয়েছেন। রাজশাহী কারাগারে তিনজন কারারক্ষী, একজন উচ্চমান সহকারী তথা লাইব্রেরিয়ান করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বগুড়া জেলা কারাগারে দুইজন কারারক্ষী, দিনাজপুর জেলা কারাগারে দুইজন কারারক্ষী, খুলনা কারাগারে ১৬ জন কারারক্ষী, যশোর কারাগারে ২৪ জন কারারক্ষী, পটুয়াখালী কারাগারে একজন কারারক্ষী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সিলেট বিভাগীয় দফতরে একজন কারারক্ষী, সিলেট কারাগারে একজন সহকারী সার্জন ও ১৩ জন কারারক্ষী, হবিগঞ্জ কারাগারে একজন ডেপুটি জেলার, একজন কারারক্ষী এবং সুনামগঞ্জ কারাগারে একজন কারারক্ষী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
একই সময়ে সারাদেশে কোয়ারেন্টিনে আছেন ২৩৯ জন। এরমধ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের ৯ জন স্টাফ, দুইজন স্টাফের পরিবারের সদস্য, ৩১ জন বন্দি কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। কাশিমপুর-২ কারাগারে ১১ জন কারারক্ষী, কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে ছয়জন কারারক্ষী ও ২২ জন বন্দি কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। টাঙ্গাইলে দুইজন প্রধান কারারক্ষী, ১৫ জন কারারক্ষী কোয়ারেন্টিনে আছেন। মানিকগঞ্জ কারাগারে একজন কারারক্ষী, মুন্সীগঞ্জ কারাগারে একজন কারারক্ষী, মাদারীপুর কারাগারে দুইজন কারারক্ষী ও তিনজন বন্দি কোয়ারেন্টিনে আছেন।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ২৮ জন কারারক্ষী ও ৯ জন বন্দি, লক্ষ্মীপুর কারাগারে একজন বন্দি, যশোর কারাগারে ১১ জন কারারক্ষী, নড়াইল কারাগারে দুইজন কারারক্ষী কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।
পঞ্চগড় কারাগারে ৭৫ জন বন্দি, সিলেট কারাগারে তিনজন কারারক্ষী, হবিগঞ্জ কারাগারে একজন কর্মকর্তা, ময়মনসিংহ কারাগারে একজন মেট্রন, একজন প্রধান কারারক্ষী, একজন সর্বপ্রধান কারারক্ষী এবং পটুয়াখালী কারাগারে একজন কারারক্ষী কোয়ারেন্টিনে আছেন।
করোনায় এ পর্যন্ত একজন কারা কর্মকর্তা মারা গেছেন। ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. আবু জাহেদ রবিবার (২৬ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সিলেট কারাগারে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজন বন্দি মারা গেছেন।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের কারাগারগুলোতে ৭৭ হাজার ২৫৭ বন্দি রয়েছেন।