সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশের আদালতের ১০৫ জন বিচারক গত পাঁচ মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময় সারাদেশে আট শতাধিক আইনজীবীর শরীরে কভিড-১৯ ধরা পড়ে। এর মধ্যে প্রায় একশ’ আইনজীবী মারা গেছেন।
এ সময় বিভিন্ন আদালতের ৩৪৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২২২ জন। আক্রান্ত বিচারকদের মধ্যে ইতোমধ্যে ৬৬ জন সুস্থ হয়েছেন। বাকিরা হাসপাতাল ও বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনায় একজন বিচারকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি হলেন লালমনিরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ফেরদৌস আহমেদ।
সম্প্রতি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক সচিব নরেন দাস এবং আইন ও বিচার বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শশাংক শেখর সরকার করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন।
করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ১২ মার্চ থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতসহ সারাদেশের আদালতে নিয়মিত বিচার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আইনজীবীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে করোনাঝুঁকির মধ্যে গত ১২ আগস্ট থেকে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ৪৮ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের অনেকেরই করোনায় আক্রান্ত কিংবা উপসর্গ ছিল। করোনায় আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি আইনজীবী ইদ্রিসুর রহমান ও এটিএম আলমগীর মারা গেছেন।
এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য সাবেক এমপি হাজি মকবুল হোসেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ, নাসিরউদ্দিন আহমেদ, আবু সাঈদ চৌধুরী, আকরামুজ্জামান, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ আইনজীবী মারা যান। করোনার উপসর্গ নিয়ে ঢাকা এবং অন্যান্য জেলা বারের সদস্যদেরও মৃত্যু হয়েছে।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সূত্র জানায়, ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, হবিগঞ্জ, বরগুনা, নোয়াখালী, ফেনী, ময়মনসিংহ, মাদারীপুর, ফরিদপুর বারের একাধিক সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএম আমিনউদ্দিন বলেন, মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত আমাদের ৪৮ সদস্য মারা গেছেন। অনেক সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সমিতির পক্ষ থেকে আক্রান্তদের চিকিৎসা বাবদ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের বেনাভোলেন্ট ফান্ড থেকে জমাকৃত প্রাপ্য অনুযায়ী অর্থ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, গত ১৩ আগস্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট খোলার পর আইনজীবীরা স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে আদালতে মামলা পরিচালনা করছেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, আদালত খোলার পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কমা বা বাড়ার তথ্য তাদের জানা নেই। তিনি জানান, রাজধানীর তিনটি বিশেষ হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা করার সুযোগ পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। এগুলো হচ্ছে- হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল ও উত্তরার জাপান ইস্ট-ওয়েস্ট হাসপাতাল।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, তাদের বারের ৪০-৪৫ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৩০০। আক্রান্তদের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল হিউম্যান রাইটস কমিটির চেয়ারম্যান মোখলেসুর রহমান বাদল বলেন, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বারে করোনায় যেসব সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার জন্য বার কাউন্সিল থেকে প্রত্যেক বারে আর্থিক অনুদান পাঠানো হয়েছে। শুধু ঢাকা বারেই দেওয়া হয়েছে পৌনে দুই কোটি টাকা।
জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্ট বারসহ দেশের ৮২টি বারে প্রায় ৬০ হাজার আইনজীবী রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা বারে ৩০ হাজার আইনজীবী থাকলেও ৮-১০ হাজার নিয়মিত প্র্যাকটিস করছেন। সূত্র- সমকাল