নতুন সৃষ্ট সাতটি সাইবার ট্রাইব্যুনাল এবং ছয়টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালসহ সারা দেশে প্রায় ৫০টি আদালতে বিচারক নেই। এতে একদিকে যেমন বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি বেড়ে যাচ্ছে, অপরদিকে ভারপ্রাপ্ত বিচারকরা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করায় তাদের কাজের চাপ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে তারা নিজেদের নিয়মিত আদালতের বিচারকার্যেও পর্যাপ্ত সময় দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ চাইলেই এসব আদালতে বিচারক নিয়োগ দিতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া এসব আদালতে বিচারক নিয়োগ না দেয়ায় শূন্যপদেও পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন যোগ্য বিচারকরা।
জানা গেছে, গত বছরের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে একটি করে মোট সাতটি সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনুমোদন দেয় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। একইভাবে ১ মার্চ মন্ত্রণালয় থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নড়াইল, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, ঝালকাঠি ও পঞ্চগড় জেলায় একটি করে মোট ছয়টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনুমোদন দেয়া হয়। মাসের পর মাস পার হলেও আজও এসব ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়নি। এতে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলেও এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা।
বিচারকশূন্য যেসব আদালত
নতুন সৃষ্ট সাতটি সাইবার ট্রাইব্যুনাল এবং ছয়টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ছাড়াও সারা দেশে অন্তত ৩৭টি বিচারকের পদ শূন্য রয়েছে। এগুলো হল- গাজীপুর জেলা জজ আদালত, ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১, ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭, নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত, পরিবেশ আপিল ট্রাইব্যুনাল, খুলনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩, ফেনী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২, কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, জামালপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, সিরাজগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, কুমিল্লা স্পেশাল জজ, চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩, ভোলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, লালমনিরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, বিশেষ জজ আদালত-৫ ও ঢাকার প্রথম শ্রম আদালত।
এছাড়া বিচারকশূন্য রয়েছে ময়মনসিংহ অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত, চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত, চট্টগ্রাম দেউলিয়া আদালত, রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত, গাইবান্ধা অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত, ভোলা অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত, চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত, পিরোজপুর অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত, গাজীপুর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও রংপুর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
এছাড়াও ডেপুটেশন খালি রয়েছে- বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের লিগ্যাল এইড অফিসার, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের দুই উপসচিব এবং বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের উপসচিব পদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের অধস্তন আদালতগুলোয় জেলা জজ পদমর্যাদার প্রায় অর্ধশত পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদে শিগগিরই পদায়ন করা হবে। পাশাপাশি অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে জেলা জজ পদে পদোন্নতির কাজও চলছে। যুগ্ম জেলা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা জজ পদে পদোন্নতির ফাইল প্রস্তুতির কাজও চলমান রয়েছে।